ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তান’ কত দূর

বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামাল দিতে ইমরান বছর পূর্তির আগেই ১৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছেন

নিত্যপণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ বেড়েছে, সাধারণ মানুষের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের হাতিয়ার বানানোর অভিযোগ উঠেছে

৫১টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে এক বছরে একটি প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি পূরণ করেছেন ইমরান

চলতি সপ্তাহেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক বছর পূর্ণ করলেন ইমরান খান। ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন ইমরান। প্রতিশ্রুতিতে পাকিস্তানকে ‘কল্যাণমূলক ইসলামি রাষ্ট্র’ বানানোর কথাও বলেছিলেন তিনি। এক বছরে সেই লক্ষ্যের দিকে কতটা এগোলেন ইমরান? কী বলছে তাঁর জনগণ?

 

ইমরানের পথটা যে কঠিন হবে—সেটা আগেই জেনেছিলেন তিনি। বিশেষ করে দেশের অর্থনৈতিক সংকট যে মাথায় চেপে বসবে, সেটা জানাই ছিল। সেই অর্থনীতিকে টেনে তুলতে এই এক বছরে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো থেকে শুরু করে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি। সৌদি আরব, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কাতার ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ ১৬০০ কোটি ডলার ধার পেয়েছেন। বছর পূর্তির আগেই মন্ত্রিসভা পর্যন্ত পুনর্গঠন করেছেন। তারপরও বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে বশে আনতে পারেননি। যার প্রভাব টের পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

 

করাচিতে অনলাইন ট্যাক্সি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোহাম্মদ তারিক। সুদিনের আশায় ‘নয়া পাকিস্তান’ স্লোগানে মুগ্ধ হয়ে লাখো পাকিস্তানির মতো তিনিও ভোট দিয়েছিলেন ইমরানকে। এক বছরের মাথায় তাঁর কথায় প্রকাশ পেল স্বপ্ন ফিকে হওয়ার হতাশা। তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলুকে তারিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইমরানের কাছ থেকে অলৌকিক কিছু প্রত্যাশা করিনি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে আমাদের জীবনযাত্রা একটু সহজ হওয়া উচিত ছিল।’ তারিকের মতে, এই এক বছরে পাকিস্তানের পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। সবজি থেকে শুরু করে ওষুধ— সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ইমরান সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে আগের চেয়ে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠেছে।

 

ইমরান খানের নানা চেষ্টার পরও নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যায়নি। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে রুপির মান ৩০ শতাংশ নেমে গেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে, রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য, বাণিজ্য ঘাটতি ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারের ওপরে চলে গেছে। ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদন বলছে, ইমরানের আগে নওয়াজ শরিফের সরকার পুরো পাঁচ বছরে যে ঋণ নিয়েছিলেন, ইমরান এক বছর পূর্ণ না হতেই তার দুই তৃতীয়াংশ ঋণ নিয়ে ফেলেছেন। সব মিলিয়ে এর প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়।

 

রাজধানী ইসলামাবাদের বাসিন্দা ইমরান আলী (৩৫) পাকিস্তানের ডন অনলাইনকে বলেছেন, ‘গত এক বছরে নিত্যপণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আমার বেতন তো সেভাবে বাড়েনি। আমার মতো মানুষের জীবন চালানো কঠিন হয়ে উঠেছে।’ একটি বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কাজ করা ইমরান আলীর বক্তব্য, ‘এই সরকার এক বছরে যতটুকু করার কথা ছিল, ততটুকুও করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

 

পাকিস্তানের ডন অনলাইনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইমরান তাঁর লক্ষ্য বাস্তবায়নে মোটা দাগে ৫১টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই এক বছরের মধ্যে তিনি একটি প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি পূরণ করেছেন। এই প্রতিশ্রুতি হলো, লুট হওয়া জাতীয় সম্পদ ফেরত পেতে টাস্ক ফোর্স গঠন। এই টাস্ক ফোর্স দুর্নীতি দমনেও কাজ করবে। বাকিগুলোর মধ্যে তিনটি আংশিক পূরণ হয়েছে, ৩২টি প্রতিশ্রুতি পূরণের কাজ চলছে। বাকি ১৫টির কাজ শুরু হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *