টরন্টোতে নিহত বাংলাদেশি পরিবারের সদস্যদের দাফন সম্পন্ন

টরন্টোর অদূরে মারখাম উপশহরে নির্মমভাবে নিহত বাংলাদেশি পরিবারের সদস্যদের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শুক্রবার স্থানীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন মসজিদে জুমার নামাজের পর অনুষ্ঠিত এ জানাযায় হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় পার্কিং লটে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। জানাযায় উপস্থিত ছিলেন মারখাম নগরীর মেয়র ফ্রাঙ্ক স্কারপিট্টি ও কাউন্সিলর খালিদ ওসমান। জানাযা শেষে রিচমন্ডহিলের মুসলিম কবরস্থানে নিহতদের দাফন করা হয়েছে। এ সময় নিহতদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও কমিউনিটির শতশত মানুষ এবং মিডিয়ার উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো।

 

 

 

উল্লেখ্য, গত ২৯শে জুলাই মেহনাজ জামান নামে এক তরুণ নিজ হাতে তার মা, বাবা, বোন ও নানীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। নিহতরা হলেন, ফিরোজা বেগম (৭০), মমতাজ বেগম মুক্তা(৫০), মালেসা জামান মিকা (২১) এবং মনিরুজ্জামান (৫৯)। ঐদিনই পুলিশ মেহনাজকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।

 

 

এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে টরন্টোর বাংলাদেশ কমিউনিটি শোকাভিভূত। পরিবারটির সাথে ঘনিষ্ট এমন কয়েকজন জানান, মনিরুজ্জামান ছিলেন খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ। মাঝেমধ্যেই কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করতেন। কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের ২৫তম বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন আড়ম্বরে। সে অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক পারিবারিক বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

 

পূর্বাপর:

মনিরুজ্জামান তার স্ত্রী মমতাজ বেগম (মুক্তা)কে নিয়ে ১৯৮৮ সালে কানাডায় আসেন। প্রথমে তারা মন্ট্রিয়লে ছিলেন; বছর দুই পর তারা টরন্টোতে চলে আসেন। বন্ধু ও নিকটাত্মীয়দের সূত্রে জানা যায় তারা খুবই সুখী ছিলেন। মেহনাজের জন্ম টরন্টোতেই। সে নিহত মুনির ও মুক্তা দম্পতির একমাত্র পুত্র। ৪ বছর আগে টরন্টোর ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিল মেহনাজ। পরে সে ৬ মাসের মধ্যে ড্রপ আউট হয়ে যায় এবং বাড়িতে এ তথ্য গোপন রাখে। তখন থেকে নিরাশাবাদ পেয়ে বসে তাকে। এক পর্যায়ে সে সৃষ্টিকর্তার প্রতিও আস্থা হারিয়ে ফেলে। ঐদিন বাবা, মা, নানী ও ছোটবোনকে হত্যা করে সে ‘Perfect World Void’ নামক অ্যাডভেঞ্চার ফ্যান্টাসি গেম এর মাধ্যমে হত্যাকান্ডের বিষয়টি পোষ্ট করে। স্ক্রিনশটে দেখা যায়, মিনহাজ লিখেছে সে তার বাবা, মা, বোন এবং নানীকে হত্যা করেছে। তার এ পোষ্টটি কেউ বিশ্বাস করেনি। পরে সে আরেকটি পোষ্টে হত্যাকান্ডের ছবি দিয়ে লিখেছে, ‘প্রথমে আম্মু, তারপর নানী, তারপর বোন এবং সবশেষে আব্বুকে হত্যা করি।’

 

 

 

টরন্টো পুলিশের কি গাফিলতি ছিল?

তিউনিসিয়া থেকে এক ভিডিও গেমার সর্বপ্রথম টরন্টো পুলিশকে এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন। ঐদিন খুনি মেহনাজ জামান রক্তাক্ত ছুরিসহ বেশ কিছু ছবি অনলাইনে পোষ্ট করে তার মা, বাবা, বোন ও নানীকে খুন করেছে বলে জানান দেয়। তিনি তৎক্ষনাৎ টরন্টো পুলিশকে বিষয়টি জানান। তদন্তের স্বার্থে তিউনিসিয়ান ঐ ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন : টরন্টোতে বাংলাদেশী একই পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার

 

ঐ গেমার জানান, মাল্টিপ্লেয়ার গেম-এ এক ডজন প্লেয়ারের মধ্যে তিনি একজন। তারা গেম-এর মাধ্যমে একজন অন্যজনের সাথে কথা (চাট) বলতেন। তিনি আরও জানান, এক মাস আগে খুনী যুবক এই হত্যাকান্ডের অভিপ্রায় প্রকাশ করে।

পোষ্টে মেহনাজ আরও জানায়, ‘আমি আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছি এবং হয়তো সারাজীবন আমাকে জেলে থাকতে হবে যদি আমি বেঁচে থাকি। যখন প্লেয়াররা কেউ তার কথা বিশ্বাস করছিলো না তখন সে হত্যাকান্ডের ছবিগুলো পোষ্ট করে।

জানা যায়, তিউনিসিয়ান গেমার যখন পুলিশকে এ হত্যাকান্ড সম্পর্কে অবহিত করেন তখন পর্যন্ত মেহনাজের বাবা মনিরুজ্জামান জীবিত ছিলেন। তিনি তখন ঘরে ছিলেন না। ধারণা করা হচ্ছে পুলিশ ঐ সময় বিষয়টি আমলে নেয় নাই। তারপর যখন মনিরুজ্জামান ঘরে ফিরেন তখন মেনহাজ তাকেও হত্যা করে এবং আরেকটি পোষ্ট দেয়। অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন পুলিশ তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিলে হয়তো মনিরুজ্জামান বেঁচে যেতেন। তিউনিসিয়ান গেমার জানান, তিনি টরন্টো পুলিশকে যথাসময়ে বিষয়টি জানিয়ে সতর্ক করেছিলেন। পরে কানাডিয়ান প্রেসকেও তিনি ছবিগুলো দেখান যেখানে দেখা গেছে এক তরুনের হাতে একটি রক্তাক্ত বড় কিচেন নাইফ। তবে পুলিশ এসব ছবি সম্পর্কে মন্তব্য করতে অপারগতা জানিয়েছে। কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা কানাডা পুলিশ এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। তবে ধারালো ছুরি দিয়ে তাদের নৃশংসভাবে হত্যার তথ্য মেহনাজ নিজেই ওয়েবসাইটে দিয়েছে।

 

সর্বশেষ:

মা, বাবা, বোন ও নানীকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত মেহনাজ জামান (২৩)কে গত শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো বিচারকের সামনে উপস্থিত করা হয়। কমলা রঙের কারা-পোষাক এবং চশমা পরিহিত মেহনাজকে খুবই শান্ত দেখাচ্ছিল। এখন পর্যন্ত তার পক্ষে কোন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়নি। ৮ই আগষ্ট তাকে আবারও বিচার

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *