১২ বছর সময় নিয়ে এক অ্যালবাম

২০০৭ সালে গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী এবং সংগীতশিল্পী পিলু খান ঠিক করলেন একটি অ্যালবাম করবেন। দুজন থাকেন দুই দেশে। দূর থেকে মেইলে বা ফেসবুকে গানের কথা বিনিময় হয়। ঢাকায় এলে গান নিয়ে বসা হয় দুজনের। এভাবে কেটে যায় ১২টি বছর। অবশেষে পিলু খানের ‘তোমরা ভালো আছো তো’ শিরোনামের প্রথম একক অ্যালবাম চূড়ান্ত হয়েছে। কাজ শুরুর ১২ বছর পর এখন প্রকাশের অপেক্ষায় আছে অ্যালবামটি।

 

এটি পিলু খানের গাওয়া গান নিয়ে প্রথম একক অ্যালবাম। প্রথম অ্যালবাম হলেও রেনেসাঁ ব্যান্ডের সদস্য পিলু খানের সংগীত ভুবনে এসেছেন চার দশকেরও বেশি সময় আগে। তিনি নিয়মিত গান করছেন রেনেসাঁ ব্যান্ডের জন্মের আগে থেকে। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৭২ সালে প্রথম মঞ্চ পরিবেশনায় অংশ নিয়েছিলেন। এরপর সত্তরের দশকের কনসার্টগুলোতে নিয়মিত ড্রামস বাজিয়েছেন। ১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে যোগ দেন ব্যান্ড সোলস-এ। ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু করেন ব্যান্ড রেনেসাঁর কার্যক্রম। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই দলটির সঙ্গেই আছেন তিনি।

 

অ্যালবাম তৈরির কারণ হিসেবেও গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর অনুপ্রেরণার কথা বললেন পিলু খান। তিনি জানালেন, ২০০৭ সালে ‘সবকিছু শেষ হলে’ গানটি করার মাধ্যমে অ্যালবামটির কাজ শুরু হয়। বর্তমানে মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন পিলু খান। শিগগিরই দেশে ফিরবেন। সংগীত ক্যারিয়ারের প্রায় ৫০ বছরে নিজের গাওয়া প্রথম অ্যালবাম প্রসঙ্গে পিলু খান বললেন, ‘আমি তো আর মূলত গায়ক নই। প্রয়োজনে গান গাইলেও সুরকরা আর যন্ত্রসংগীত নিয়েই বেশি ব্যস্ত থেকেছি। তাই অ্যালবাম তৈরির দিকে সেভাবে গুরুত্ব দিতে পারিনি। পরে শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর কারণে অ্যালবামটি করলাম।’ তিনি বলেন, ‘শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর গান মানেই বিশেষ কিছু। আর এ অ্যালবামটি করতে তিনিই আমাকে দারুণ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় ক্যারিয়ারের এত বছর পর প্রথম অ্যালবাম করলাম।’

 

অ্যালবামের কাজের বিস্তারিত জানালেন গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। তিনি বলেন, আমার লেখা ‘সময় যেনো কাটে না’, ‘আজ যে শিশু’, ‘হে বাংলাদেশ তোমার বয়স হলো কত?’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং অনেক ভালো ভালো গানের সুর করেছেন পিলু খান। সব সময় একটা কথা বলে থাকি, পিলু খান হচ্ছে অভিজাত সুরকার। তার সুরে ভিন্ন মাত্রার আবেদন আছে। আমরা সময় নিয়ে কাজটা করেছি, ধীরেসুস্থে কাজ করেছি। তিনি জানান, ২০০৭ সালের দিকে প্রথম কাজ শুরু হয়। বছর পাঁচেক আগে সংগীত আয়োজকের সঙ্গে কাজ। প্রযোজনা সংস্থা বাংলা ঢোলের সঙ্গে কথা হয়েছিল বছর চারেক আগে। রেকর্ডিং ও রেকর্ডিং পরবর্তী সময়ে কম্পোজিশনে সংযোজন, বিয়োজন, পরীক্ষা–নিরীক্ষা, মিক্সিং ইত্যাদিতে আরও চার বছর, কাটিয়ে বাংলা ঢোলকে মাস্টার কপি দেওয়া হয়েছে এক সপ্তাহ আগে।

 

শহীদ মাহমুদ জঙ্গী জানালেন, অ্যালবামে গান থাকছে আটটি। আটটি গানের সবই সুর করেছেন পিলু খান। সংগীতায়োজন করছেন সুমন কল্যাণ। একটি গানের সংগীত পরিচালনা করেছেন ইবরার টিপু। তিনটি গানে পিলু খানের সঙ্গে দ্বৈত গেয়েছেন সামিনা চৌধুরী। গানগুলো হলো ‘উল্টেপাল্টে’, ‘হৃদয়ের নীল’ এবং ‘এসো হে বন্ধু’। ‘এলাম প্রথমবার’ গানটি গেয়েছেন ফাহমিদা নবীর সঙ্গে। বাকি চারটি পিলু খানের একক—‘আমার গল্প আঙিনায়’, ‘হাজারো দুঃখ নিয়ে’, ‘সবকিছু শেষ হলে’ এবং ‘তুমি জানো কি?’।

 

একক গীতিকার হিসেবে এটি শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর দ্বিতীয় অ্যালবাম। এর আগে সামিনা চৌধুরীর ‘এই বুঝি তুমি এলে’ অ্যালবামের সবগুলো গান লিখেছেন তিনি। প্রয়াত ব্যান্ডতারকা আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া প্রথম বাংলা গান ‘হারানো বিকেলে গল্প’সহ শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর লেখা ‘একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘সময় যেন কাটে না’, ‘ভালোবাসি ঐ সবুজের মেলা’, ‘হৃদয় কাঁদামাটির কোনো মূর্তি নয়’, ‘চায়ের কাপে পরিচয়’, ‘দখিনা হাওয়ায় ঐ তোমার চুলে’ ‘যতিন স্যারের ক্লাসে’ ‘আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে’ ইত্যাদি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *