যুক্তরাষ্ট্রের সামনে কঠিন দিন

 

 

 

যে দেশ থেকে নোভেল করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল সেই চীন এখন অনেকটাই শান্ত। এরপর করোনার আঘাত আসা ইউরোপের মূল দুইটি দেশ ইতালি ও স্পেনেও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। কিন্তু যে দেশ ভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে উল্লেখ করেছিল সেই যুক্তরাষ্ট্র এখন ভাইরাসের কবলে বিপর্যস্ত। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সামনে কঠিন দিন। আরো কঠোর সিদ্ধান্ত আসছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গতকাল বিশ্ব জুড়ে আক্রান্ত সাড়ে ১২ লাখ ও মৃত্যু ৬৮ হাজার ছাড়িয়েছে।

 

ভয়ংকর দিন যুক্তরাষ্ট্রে

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত তিন দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখের বেশি ছাড়িয়েছে। মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ২৭ হাজার ৯২০ এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৩২৬ জনের। এক দিনে আক্রান্ত বেড়েছে ১৬ হাজার ৫৬৩ জন। শনিবারই মৃত্যুতে রেকর্ড গড়ে যুক্তরাষ্ট্র। এক দিনে মারা যায় ১ হাজার ৪৯৭ জন। রবিবার মারা গেছে ৮৭৪ জন। কেবল নিউ ইয়র্কেই আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজারের বেশি মানুষের। রাজ্যে এক দিনে ৭ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৯৪ জনের। নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রিউ কুওমো বলেছেন, এখন যুদ্ধের সময়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শনিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সামনে আরো কঠিন দিন আসছে এবং প্রচুর মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা মাসের পর মাস এভাবে বসে থাকতে পারি না।’ আবার কাজে ফিরতে হবে—উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, লকডাউনের মধ্যেও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ আবার খুলে দিতে হবে।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। তিনি দেশটির কাছে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহ করার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

 

কঠোর হৃুঁশিয়ারি ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

 

ব্রিটেনে এক দিনে মৃত্যু বেড়েছে ৬২১ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯৩৪ জনের। আক্রান্ত ৪৭ হাজার ৮০৬ জন এবং ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত বেড়েছে ৫ হাজার ৯০৩ জন। দেশটিতে লকডাউন থাকলেও অনেককেই বাইরে বের হতে দেখা যাচ্ছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। তিনি বলেছেন, মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে, তাহলে বাইরের সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি এও বলেন, এটা অনুরোধ নয়, হুঁশিয়ারি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বান্ধবী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বরিস এখন সুস্থ। তবে সেলফ আইসোলেশনে থাকবেন। দেশটির অভিনেতা লর্ড বাথ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

 

ইউরোপে পরিস্থিতির উন্নতি!

 

স্পেনে এক দিনে মৃত্যু বেড়েছে ৬৭৪ জন। এর আগের দিনের চেয়ে কম। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হয় আমরা উত্তরণ ঘটাবো, না হয় ইউনিয়ন হিসেবে আমরা ব্যর্থ হবো। গত ১৯ মার্চের পর ইতালিতে সর্বনিম্ন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। একদিনে ৫২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

তুরস্কে ২৪ ঘন্টায় ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে এ নিয়ে ৫৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটলো। কানাডায় এক দিনে মারা গেছে ২৫৮ জন। ফ্রান্সে লকডাউনের মধ্যেও ছুরি হামলায় ২ জন নিহত হয়েছে। দেশটিতে ৭ হাজার ৫৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

রাশিয়ায় লকডাউনের মধ্যে বাড়ির বাইরে সন্ধ্যায় উচ্চস্বরে কথা বলায় পাঁচ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে এক ব্যক্তি। পুলিশ জানায়, মস্কোর ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রিয়াজান এলাকার ইয়েলাতমা গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে নতুন করে ৬৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছে।

 

অন্যান্য দেশ

 

লিবিয়ায় সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে সরিয়ে দিতে ভূমিকা পালন করা বিরোধী নেতা মাহমুদ জিবরিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। নিয়ম নীতি না মানায় ফিলিপাইনে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

 

সিঙ্গাপুরে রবিবারই আক্রান্ত হয়েছে ১২০ জন। দেশটিতে এক দিনে এত আক্রান্ত এই প্রথম। এর মধ্যে ১১৬ জন স্থানীয়ভাবেই আক্রান্ত হয়েছে। বাকি চার জন একটি ডরমেটরি থেকে আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে অভিবাসী শ্রমিকদের বাস। এরপর সরকার ঐ এলাকার সব ডরমেটরির ২০ হাজার শ্রমিককে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে।

 

ভারতে মহারাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তে শীর্ষে এখন দিল্লি। রবিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দিল্লিতে আক্রান্ত ৫০৩। দেশে করোনায় আক্রান্ত বেড়ে ৩ হাজার ৫৭৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ৫০৫ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৮৩ জন। এরই মধ্যে সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট এবং দুই প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। করোনার মোকাবিলায় তাদের পরামর্শ চেয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সূত্রের খবর। এর বাইরেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছেন মোদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *