‘রিফাতের মৃত্যুর সঠিক বিচার না হলে আমরা মাঠে নামবো’

আরেকটি অসহায় মৃত্যু দেখল দেশবাসী। আবারও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারালো এক তরুণ। বিশ্বজিৎয়ের পর তালিকায় যুক্ত হলো আরেকটি নাম- রিফাত। ইতিমধ্যে খবরটি হয়তো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। বিশ্ববিবেক লজ্জায় লুকিয়েছে মুখ। কেননা স্ত্রীর সামনেই দুবৃত্তরা প্রকাশ্যে দিনের আলোয় রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে এ হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গণমানুষের মনে দেখা দেয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।

 

নৃশংস এ ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুখর হয়েছেন ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগণ। এ বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন প্রবীণ অভিনেতা আবুল হায়াৎ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনাট্যকার ও টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা, অভিনেতা ও টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইরেশ যাকের।

 

আবুল হায়াৎ মনে করেন, এ ধরনের ঘটনার পেছনের কারণ বিচারহীনতা ও সুশাসনের অভাব। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এ অভিনেতা বলেন, ‘বিচারহীনতা ও সুশাসনের অভাবে এ ধরনের ঘটনা সমাজে ঘটে। সংশ্লিষ্টরা জোর ভূমিকা না রাখলে এসব নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ বিচারহীন সবকিছু চলতে থাকলে অনেকে আশকারা বা লাই পেয়ে যায়। অপরাধ করে পার পাওয়া মানুষদের দেখে অন্যরা ভাবে— আমরাও অপরাধ করলে কিছু হবে না। সুতরাং এভাবে সবাই যা ইচ্ছে তা করে যাচ্ছে। সরকার শক্ত হাতে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করলেই দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে।’

 

ইরেশ যাকের বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যারা আছেন তাদের কাছে একটাই অনুরোধ— যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তাদের যেন শাস্তি হয়। বিষয়টি যেন তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। শাস্তি না হলে এমন ঘটতেই থাকবে।’

 

বর্তমান প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ের মধ্যে বিরাজমান উশৃঙ্খল মানসিকতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর কারণ অনেক গভীরে। একই সঙ্গে আইন শৃঙ্খলার জায়গা ঠিক রাখতে হবে, সামাজিক সাংস্কৃতিক জায়গাটাও বজায় রাখতে হবে। ওই সমাজ আমাদের তৈরি করতে হবে, যেখানে মানুষের মধ্যে সহিংস মনোভাব তৈরি না হয়। এজন্য সবার কাজ করতে হবে। আইন আইনের জায়গা থেকে পদক্ষেপ নিবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে কিন্তু সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণের দায়িত্ব আসলে আমাদের সবার। সহিংস মানসিকতা সমাজের মানুষের মধ্যে যাতে তৈরি না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। মানুষকে যাতে আরো সভ্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারি সে বিষয়ে কাজ করতে হবে।’

 

এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে সরকারের কাছে আপনার কোনো দাবি আছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাসুম রেজা বলেন, ‘এসব ঘটনার জন্য সরকারের কাছে আমার দাবি থাকবে কেন? সরকার তার স্বাভাবিক পরিচালনার মধ্যে এসব অপরাধীদের সঙ্গে সঙ্গে বিচারের আওতায় নিয়ে আসবে। যদি রিফাতের মৃত্যুর সঠিক বিচার না হয় তাহলে আমরা মাঠে নামবো। তখন দাবি নয়, প্রতিবাদ জানাব।’

 

ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে দাবি তোলার এই যে প্রশ্ন উঠছে, তার মানে হলো— দেশে স্বাভাবিক যে বিচার প্রক্রিয়া রয়েছে তার মধ্যে গলদ আছে। এই জাতীয় নৃশংস কাজে অন্যদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। অন্যরাও ভয় পাচ্ছে না। তারা নিঃসঙ্কোচে নিঃশঙ্কায় এই ঘটনাগুলো ঘটিয়ে যাচ্ছে। এটা মেনে নেয়া যায় না।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *