বার্মিংহাম থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক : ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সেমিফাইনালের নায়ক নাকি সেদিন খেলতেই চাননি! অথচ তার জন্য কত বড় মঞ্চ প্রস্তুত ছিল, তা হয়তো নিজেও জানতেন না।
ইনজামাম-উল-হকের ছিল প্রথম বিশ্বকাপ। আগের ম্যাচগুলোতে বেশি ভালো করেননি। কিন্তু সেমিফাইনালে ইমরান খান তার ওপর রেখেছিলেন আস্থা। কিন্তু ম্যাচের আগে হঠাৎ ইনজামাম জানান, পেটের ব্যথায় ম্যাচ খেলবেন না! জোর করে ইমরান সেদিন খেলান ইনজামামকে। পরবর্তীতে তার ৩৭ বলে ৬০ রানের ইনিংসেই তো পাকিস্তান গিয়েছিল ফাইনালে, জিতেছিল শিরোপা।
বিশ্বকাপ অভিষিক্তদের সাফল্যের ইতিহাস অনেক বিস্তৃত। ৮৩’তে ভারত যেবার প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল, সেবার অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়েছেন রজার বিনি। বোলিংয়ে ১৮ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা। ব্যাট হাতে রান করেছিলেন ৭৩। চার বছর পর ৮৭’তে স্টিভ ওয়াহও কম যাননি। ৮ ম্যাচে ১৬৭ রান করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়। ৯৬’ বিশ্বকাপে মুরালিধরন ৬ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে ছিলেন শ্রীলঙ্কার সেরা।
চামিন্দা ভাস ৬ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৬টি উইকেট। তবে তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে একজন নিজের অভিষেক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক। শেষ বিশ্বকাপে ২২ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে পঞ্চম বিশ্বকাপের স্বাদ দিয়েছেন এ পেসার।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ছয় ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছে। লিটন, মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন, মিরাজ, মোসাদ্দেক ও মিথুনের। আবু জায়েদ রাহীর মাঠে নামা হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। অভিষিক্তদের মধ্যে শুধুমাত্র মিথুনের পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা হতে পারে, বাকিরা দলে নিয়মিত হয়ে পারফর্ম করছেন।
মিথুনের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া লিটন কতটা সামর্থ্য রাখেন বড় মঞ্চে পারফর্ম করার, সেটা বুঝিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে। ৯৪ রানের যে নজরকাড়া ইনিংস উপহার দিয়েছেন হৃদয়ে দোলা দিয়ে সবার। ৩ ম্যাচে ডানহাতি ব্যাটসম্যান করেছেন ১৩০ রান।
বোলিংয়ে সাইফউদ্দিন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তরুণ ডানহাতি পেসার নিয়েছেন ১০ উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমানও তাই। বিশ্বমঞ্চে প্রথমবার খেলতে নেমে এ দুই পেসার পারফর্ম করছেন নিয়মিত। অফ স্পিনে মিরাজ ৫টি, মোসাদ্দেক পেয়েছেন ৩ উইকেট। মোসাদ্দেক আবার ব্যাটিংয়েও দলের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার গুরুত্বপূর্ণ ৩৫ রানে বাংলাদেশ দলীয় পুঁজিতে ‘বোনাস’ রান পেয়েছিল।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের যে পারফরম্যান্স তাতে সেমিফাইনালের আশা টিকে আছে। শেষ দুই ম্যাচ এশিয়ার দুই জায়ান্ট ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। দুটি ম্যাচে জয় পেলে বাংলাদেশ সেমির পথে এগিয়ে যাবে অনেকটাই। সাকিব দ্যুতিতে বাংলাদেশ লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অভিষিক্তরা মাশরাফি ব্রিগেডের বড় সৈন্য। তারা হাসতে পারলে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলতেও পারে বাংলাদেশ। সিনিয়রদের সঙ্গে তাদের পারফরম্যান্স মিলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে মহাপরাক্রমশালী ।