ব্রেক্সিট গেলানোর শেষ চেষ্টা বরিসের

 

ইইউ নেতাদের সঙ্গে সদ্য স্বাক্ষরিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে এমপিদের রাজি করাতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আজ শনিবার পার্লামেন্টের অধিবেশনে চুক্তিটি গেলানোর শেষ চেষ্টাটা করবেন তিনি।

 

চুক্তির পর ব্রাসেলস থেকে ফুরফুরে মনে দেশে ফিরলেও চুক্তি পাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের মতোই মুখ থুবড়ে পড়তে পারেন বরিস। যদি ব্যর্থই হন, সেক্ষেত্রে সময় বাড়ানো হবে কিনা তা নিয়েও চলছে বিতর্ক।

 

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বলেছেন, ব্রিটিশ এমপিরা চুক্তিটি না মানলে সময় না বাড়িয়ে উপায় থাকবে না। শুক্রবার ব্রাসেলসে ইইউ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। খবর এএফপি ও দ্য গার্ডিয়ানের।

 

দীর্ঘ টানাপোড়েন আর অনিশ্চয়তার পর ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৃহস্পতিবারই একটি সমঝোতায় পৌঁছায় যুক্তরাজ্য। এতে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বিচ্ছেদ কার্যকরের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন সেটা ব্রিটিশ এমপিদের মাধ্যমে অবশ্যই পাস হতে হবে।

 

শনিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে জনসনের চুক্তিতে অনুমোদন নিয়ে ভোট আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই চুক্তির বিরোধিতা করেছেন অনেক এমপিই।

 

বিবিসি জানায়, প্রধানমন্ত্রী জনসন তার চুক্তিতে এমপিদের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে ‘বেশ আত্মবিশ্বাসী’। যদিও গত জুলাইয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রয়োজনে ‘চুক্তিহীন বেক্সিট’ করার কথাই জোর দিয়ে বলেছেন।

 

চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে তা উভয় পক্ষের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জনসনের ওই পথে হাঁটা আটকাতে ব্রিটিশ এমপিরা নতুন একটি আইন পাস করেছে। এখন এমপিদের অনুমোদন আদায় ছাড়া জনসন ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে পারবেন না।

 

ইইউ নেতারাও আর ঝুলিয়ে না রেখে ব্রেক্সিট শেষ করতে চান। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদে জাঙ্কার এক চিঠিতে ইইউর ২৭ সদস্য রাষ্ট্রকে চুক্তিতে অনুমোদন দেয়ার সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন। কারণ তিনি মনে করেন, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার শেষ সময় এখনই।

 

বিবিসি বলছে, উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) নতুন ব্রেক্সিট চুক্তি সমর্থন করবে না। ডিইউপির প্রভাবশালী এমপিরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিুকক্ষ হাউস অব কমন্সে চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক করেছেন।

 

কিন্তু জনসনের চুক্তির পক্ষে তারা ভোট দেবেন না বলেই মনে করেন বিবিসির রাজনীতিবিষয়ক প্রধান সংবাদদাতা ভিকি ইয়াং। যার অর্থ চুক্তিতে অনুমোদন পেতে জনসনকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে।

 

প্রত্যাশিতভাবেই জনসন ভোট না দেয়া লেবার এমপি, তার দলের বেক্সিটের পক্ষে দৃঢ় সমর্থক এবং বিদ্রোহী বলে যাদের তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেছেন তাদের সমর্থন পেতে বেশি চেষ্টা করবেন।

 

৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে ভোট আয়োজনের সুযোগ একবারই পাবেন জনসন। যদি শনিবার এমপিরা তার চুক্তি প্রত্যাহার করে তবে নতুন আইন অনুযায়ী তাকে অবশ্যই ইইউর কাছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানোর অনুরোধ করতে হবে। অথচ জনসন বারবার বলেছেন, তিনি সময় বাড়ানোর আবেদন করবেন না।

 

চুক্তি নিয়ে টিউলিপের টুইট : বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য সিদ্দিক মনে করেন, এই খসড়া নিয়ে সংসদে বিতর্কের জন্য অনেক কম সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ বৃহস্পতিবার টুইটারে লেখেন, এটা অত্যন্ত অমর্যাদাকর ব্যাপার যে এ চুক্তি নিয়ে শনিবার ভোটাভুটির আগে আমাদেরকে মাত্র ৯০ মিনিট সময় দেয়া হবে।

 

এটা বর্তমান সরকারের তৈরি ক্ষতিকর ব্রেক্সিট চুক্তির ব্যাপারে বিতর্কে সুযোগ না দেয়ার সর্বশেষ উদাহরণ। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *