নির্বাচন সামনে রেখে অর্থ পাচার নিয়ে আইএমএফের সতর্কতা

অনলাইন ডেস্ক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশেষ করে রপ্তানি আয় দেশে না এনে এই পাচারের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি মনে করে।

জাহাজিকরণ হওয়া রপ্তানি পণ্যের দাম ও দেশে আসা রপ্তানি আয়ের মধ্যে পার্থক্য পর্যালোচনা করে নভেম্বরের সফর শেষে বাংলাদেশ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, চলতি বছর রপ্তানি আয়ের উল্লেখযোগ্য এখনও দেশে আসেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিতে বেশ প্রবৃদ্ধি হলেও বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আয় দেশে আসেনি। এর বড় কারণ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা। কারণ, নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত অনেক ব্যবসায়ী রপ্তানি আয় দেশে আনা স্থগিত রেখেছেন।

আইএমএফ বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং বিলাসদ্রব্য আমদানির ওপর কাড়াকাড়ির কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। বড় বড় অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি ধীর গতির হলেও মোটা দাগে রপ্তানি চাঙাই ছিল। চলতি হিসাবের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে।

এতোকিছুর পরও, এই সময়ে দেশের বাইরে গেছে প্রায় ২১০ কোটি ডলার অর্থাৎ জিডিপির প্রায় দশমিক ৫ শতাংশ। বিপরীতে এই সময়ে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে, তার পরিমাণ দেশের জিডিপির প্রায় আড়াই শতাংশ।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এই দুই পরিসংখ্যানের তুলনা করে আইএমএফ বলছে, এটা ‘ক্যাপিটাল ফ্লাইট’ বা অর্থ পাচারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অসুবিধাজনক নীতিমালা বা কোনো শর্তের কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ কোনো দেশ থেকে অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়া হলে তাকে ক্যাপিটাল ফ্লাইট বলে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু এর বিপরীতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে, তা ২০২২ অর্থ বছরের চেয়ে নিতান্তই নগন্য। এর ফলে ২০২৩ সালে দেশে না আনা রপ্তানি আয়ের পরিমাণ বেড়ে ৯৬০ কোটি ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি) দাঁড়িয়েছে। এই অর্থ ২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশের মতো।

এই চিত্র রপ্তানি আয়ের অর্থ বিলম্বে দেশে আসা ও রপ্তানি আয়ের মূল্য পরিশোধে দেরির পরিস্থিতি তুলে ধরছে। ফলে স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সরবরাহে ক্রমাগত বিঘ্ন বিদেশি অর্থায়নের বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর আমদানি ব্যয় বাড়িয়েছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নও বিলম্বিত হয়েছে এবং এর ফলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের বিদেশি ঋণের ছাড় কমে গেছে। চলতি হিসাবে এতো বড় ফাঁক থাকার কারণে লেনদেন ভারসাম্য উন্নতির পরও বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমেছে।

তবে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না আসার সম্ভাব্য আরও কিছু কারণ তুলে ধরেছে আইএমএফ। প্রতিবেদনের ফুটনোটে বলা হয়, অনেক সময় ইপিজেড বা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল থেকে দেশের ভেতরে বিক্রিকে ‘ভুলভাবে রপ্তানি’ হিসেবে উল্লেখ করা, যা আসলে বিদেশে রপ্তানি হয় না।

এছাড়া বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যের গুণগত মানে সমস্যা এবং বিক্রেতার দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণেও রপ্তানি আয়ে প্রভাব পড়ে। তবে এই বিষয়গুলোও ঐতিহাসিকভাবেই ‘ক্যাপিটাল ফ্লাইটের’ নির্দেশক।

স্বল্পমেয়াদি আরেকটি কারণ হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তাকে উল্লেখ করেছে আইএমএফ। কারণ, নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রপ্তানিকারকেরা রপ্তানি আয় দেশে আনা স্থগিত রেখেছে বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *