ইউরোপ যেতে ভিসা লাগবে আমেরিকানদের

ডেস্ক রিপোর্ট: ভ্রমণকারীদের জন্য ইউরোপে আসছে নতুন প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রাম অনুযায়ী আগামী বছর থেকে ইইউ সফরে গেলে মার্কিনীদেরও ভিসা লাগবে। নতুন প্রোগ্রামের জন্য একটি অনলাইন আবেদন ও সামান্য কিছু ফি প্রয়োজন এবং এটি বয়স নির্বিশেষে সব ভ্রমণকারীর জন্য আবশ্যক। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারীরা ভিসা আবেদন নিয়ে চিন্তা না করেই বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে ভ্রমণ করছেন। বর্তমানে আমেরিকান ভ্রমণকারীরা বিশ্বব্যাপী ১৮৪টি গন্তব্যে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। এ বছরের হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুসারে, মার্কিন পাসপোর্টকে বিশ্বের অষ্টম শক্তিশালী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এটি পরের বছর পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকান পর্যটকদের জন্য নতুন ভ্রমণ নথির প্রয়োজনীয়তা প্রস্তুত করেছে।
নতুন নিয়মগুলোকে ইউরোপীয় ভ্রমণ তথ্য ও অনুমোদন ব্যবস্থা (ETIAS) বলা হয়। যখন সিস্টেমটি ২০২৪ সালের প্রথম দিকে চালু হবে, তখন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে এবং তাদের প্রস্থানের আগেও অনুমোদন নিতে হবে। অথচ বর্তমানে তারা ইউরোপে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ করছেন।
ঊঞওঅঝ ঐতিহ্যগত অর্থে একটি ভিসা নয়; এর জন্য প্রয়োজন ইমেলের মাধ্যমে অনুমোদনসহ শুধুমাত্র একটি দ্রুত অনলাইন আবেদন। অনুমোদন পাওয়ার জন্য ভ্রমণকারীদের তাদের মৌলিক জীবনী সংক্রান্ত তথ্য, ভ্রমণ পরিকল্পনা, ভ্রমণের ইতিহাস, সেইসাথে অন্যান্য নিরাপত্তা প্রশ্নগুলোর বিবরণ প্রদান করে একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
বেশিরভাগ আবেদনকারীকে এক ঘণ্টার মধ্যে ভ্রমণের অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে আরও চেক করার প্রয়োজন হলে প্রক্রিয়াটি ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে। আবেদনের ব্যয় ৭ ইউরো (প্রায় ৮ ডলার) এবং বয়স নির্বিশেষে সকল ভ্রমণকারীর জন্য প্রয়োজন। একবার অনুমোদিত হলে এই অনুমোদনটি তিন বছরের মধ্যে একাধিক এন্ট্রির জন্য বা ভ্রমণকারীর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বৈধ থাকবে।
প্রোগ্রামটি প্রথম ঘোষণা করার পর অনেক আমেরিকান অন্য ভ্রমণ নথির জন্য অপেক্ষা করার বিষয়ে শঙ্কিত ছিল। ঊঞওঅঝ সম্পর্কে আরও বিশদ প্রকাশের পর অনেক ভ্রমণকারী প্রক্রিয়াটির সরলতায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন।
বছরে অন্তত দুই থেকে তিনবার ব্যবসা ও অবকাশের জন্য ইউরোপে যান আলেক্সা মুর। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, ঊঞওঅঝ সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ার গুঞ্জন আমাকে একটু নার্ভাস করে তুলেছিল। কিন্তু কিছু গবেষণা করার পরে সেই প্রাথমিক ধাক্কা অবশ্যই কমে গেছে। এখনো আমাদের জন্য ইউরোপ ভ্রমণ করা সহজ। এটি ভ্রমণের আগে আমাদের আরও একটি পদক্ষেপ নিয়ে ভাবতে হবে।’
ঊঞওঅঝ সদস্য দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। এসব দেশ চারটি বিভাগে বিভক্ত। ১. স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালির মতো পূর্ণ শেনজেন সদস্য; ২. ইউরোপীয় ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (ETIAS) দেশ যেমন- আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড; ৩. ভবিষ্যত শেনজেন সদস্য যেমন- বুলগেরিয়া ও সাইপ্রাস এবং ৪. প্লাস ইউরোপীয় মাইক্রো স্টেট যেমন- অ্যান্ডোরা ও মোনাকো। এর যেকোনো একটি সদস্য দেশে যেতে হলে অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
ঊঞওঅঝ-এর লক্ষ্য হলো সীমান্ত নিরাপত্তা কঠোর করা, সেইসাথে ডিজিটালি স্ক্রিন করা এবং ইইউ দেশগুলোতে প্রবেশ ও ত্যাগকারী ভ্রমণকারীদের ট্র্যাক করা। এর উদ্দেশ্য এবং আবেদনের প্রক্রিয়াটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ভ্রমণকারীদের জন্য ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথরাইজেশন (ETIAS) প্রোগ্রামের অনুরূপ- যা অনেক লোককে নতুন প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আরও বোঝার সুযোগ করে দিয়েছে।
ইউরোপ যখন তার নতুন ETIAS প্রোগ্রাম চালু করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তখন এটা লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে আমেরিকানরা পর্যটক হিসেবে ইউরোপে যে সময় ব্যয় করতে পারে তা পরিবর্তন হচ্ছে না। মার্কিন পাসপোর্টধারীদের ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিন পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। ৯০ দিনের বেশি সময় থাকার জন্য একটি বিশেষ ভিসা প্রয়োজন।
কখন নতুন ভ্রমণ অনুমোদন প্রয়োজন হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটি চালু হওয়ার সময় কিছুটা বিশৃঙ্খলা হলেও ঊঞওঅঝ শেষ পর্যন্ত কাউকে ইউরোপ ভ্রমণ থেকে বিরত করবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *