ব্রিটেনকে যখন-তখন বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে রাশিয়া

নিউজ ডেস্কঃ ব্রিটেনের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন-সমুদ্রের তলদেশে রাশিয়ার নাশকতায় যখন-তখন ব্রিটেনের ইন্টারনেট মাধ্যমকে অচল করে দিতে পারে। পানির গভীরে ছড়িয়ে থাকা ওই তারগুলো দিয়ে দিনে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক চুক্তি সম্পন্ন হয়। আর সাবমেরিন কেবলগুলো ধ্বংস হলে পুরোপুরিই ভেঙে পড়বে ব্রিটেনের তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রা। ব্রিটিশ নবনিযুক্ত প্রতিরক্ষা স্টাফের প্রধান অ্যাডমিরাল স্যার টনি রাদাকিন মনে করেন, এই গুরুত্বপূর্ণ ধমনীগুলো বিকল করতে পারে-এমন এক বড় শত্রুর নাম রাশিয়া। গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সমুদ্রের তলদেশে হাজার হাজার ফুট ইন্টারনেট তারের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক রয়েছে-আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ৯৭ শতাংশই সম্পন্ন হয় এই তারগুলোর মাধ্যমে।

ডিজিটাল যুগে, ইস্পাত এবং প্লাস্টিকের আবরণে থাকা এই ভৌত তারগুলোই মূল চাবিকাঠি। যদি তাদের অক্ষম করা হয়, তবে এটি শুধু ফোন এবং ল্যাপটপে ওয়েব নেটওয়ার্কই নষ্ট করবে না, বরং সেইসঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সামরিক সরবরাহ এবং আর্থিক লেনদেন পর্যন্ত- সব ক্ষেত্রেই বাধা সৃষ্টি করবে। অবিলম্বে বিশ্ব নিমজ্জিত হবে নতুন বিষণ্নতায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুর্যোগপূর্ণ দৃশ্যটি পারমাণবিক যুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্ববাসীর জীবনযাত্রার জন্য একটি অস্তিত্বের হুমকি হিসাবে স্থান পেয়েছে। সাক্ষাৎকারে রাদাকিন বলেন, ‘গত ২০ বছরে রাশিয়ান সাবমেরিন কার্যকলাপে অসাধারণভাবে উন্নতি করেছে। তারা সমুদ্রের তলদেশে থাকা তারগুলোকে হুমকির মুখে ফেলার এবং সম্ভাব্যভাবে শোষণ করার ক্ষমতা বাড়িয়েছে।’

তবে আশার কথা হচ্ছে, তারের নির্মাতারা সম্ভাব্য নাশকতাকারীদের আক্রমণ প্রতিহত করার চিন্তা মাথায় রেখেই তারগুলো তৈরি করেছেন। সমুদ্রের নিচে প্রাকৃতিক কঠোরতা সহ্য করার জন্য এগুলো ডিজাইন করা হয়েছে এবং এগুলো সহজে কাটা যাবে না।

তবে একটি গুরুতর হুমকি হিসাবে চিহ্নিত একটি জাহাজ হল ‘ইয়ান্তার’। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি রাশিয়ান নৌবাহিনীর জাহাজ হলেও এটি ইঞ্জিনিয়ারিং মিশনের জন্য ডিজাইন করা দুটি মিনি সাবমেরিন বহন করে যা ৩.৭৫ মাইল পর্যন্ত পানির নিচের অঞ্চলগুলো পরীক্ষা করতে পারে। ২০১৫ সালে প্রথমবার সমুদ্রে যাওয়ার মাত্র চার মাস পর গোয়েন্দা মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করে ইয়ান্তার-যখন এটি মার্কিন উপকূল থেকে কিউবা যাওয়ার পথে শনাক্ত হয়, যেখানে সমুদ্রের তলদেশের তারগুলো গুয়ানতানামো উপসাগরের কাছে বিপর্যস্ত হয়।

গত আগস্টে, ইয়ান্তারকে আয়ারল্যান্ডের ডোনেগাল-মায়ো উপকূলে দেখা গিয়েছিল। সমুদ্রতলের চারটি তারের ওপর নজরদারি করতে আয়ারল্যান্ডের কাছে মাত্র একটি নৌযান রয়েছে। ইয়ান্তারের সাবমারসিবলগুলো তারগুলোকে ট্যাপ করতে সক্ষম প্রযুক্তি বহন করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।

সারা বিশ্বে এই সমুদ্রতলের তারের সংখ্যা ৪৩৬-যার মধ্যে আট লাখ মাইলেরও বেশি ফাইবার অপটিক্স রয়েছে। এদের সবার ‘বাবা’ এশিয়া আমেরিকান গেটওয়ে, যার দৈর্ঘ্য ১২ হাজার ৪৩০ মাইল। প্রতিটি তারের মধ্যে চার থেকে ২০০টি অপটিক্যাল ফাইবার থাকে-যেগুলো একটি ফাইবার প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ জিবি ডেটা পাঠাতে পারে বা প্রায় ৩৭৫ মিলিয়ন ফোন কলের জন্য যথেষ্ট। আটটি ফাইবার-অপ্টিক স্ট্র্যান্ড সমন্বিত একটি একক কেবল অক্সফোর্ডের বোদলিয়ান লাইব্রেরির সব বইসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ধারণ করতে পারে। ওই লাইব্রেরিতে রয়েছে ১২ মিলিয়নের বেশি বই, জার্নাল এবং পাণ্ডুলিপি। ২০১৭ সালে তৎকালীন সাংসদ ও চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক এক প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছেন, ধ্বংসের হুমকি থাকায় সমুদ্রের তলদেশের তারগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামো হিসাবে মনোনীত করা এবং এগুলোর সুরক্ষা অঞ্চল স্থাপন করা উচিত। এইচএমএস নর্থম্বারল্যান্ড নামে একটি ফ্রিগেট, ২০২০ সালের শেষের দিকে একটি রাশিয়ান সাবমেরিন দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছিল। ইউক্রেন এবং কাজাখস্তানের মতো দেশগুলো নিয়ে রাশিয়া এবং পশ্চিমের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের নাশকতামূলক ঘটনার সম্ভাব্যতাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *