জনবলহীন সিলেট প্রাণিসম্পদ বিভাগ

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট বিভাগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অর্ধেকের বেশি পদে লোকবল নেই। সিলেটের ৪ জেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৫২২ টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২২৭ জন। খালি রয়েছে ২৯৫টি পদ। অর্থাৎ মোট জনবলের প্রায় ৫৬ ভাগই শূন্য।

জানা যায়, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ভেটেরেনারি সার্জন, ভেটেরেনারি ফিল্ড এসিস্ট্যান্ট, ভেটেরেনারি ফিল্ড এসিস্ট্যান্ট (প্রজনন), কম্পাউন্ডার, ড্রেসার, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন পদে মোট ৫২২টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সিলেট বিভাগের ৪০টি উপজেলার মধ্যে ১৩টি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদ খালি রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার ৭টি উপজেলায়ই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদ শূন্য। এছাড়া, সিলেটে ৪টি উপজেলায় এবং হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের ১টি করে উপজেলায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদশূন্য রয়েছে। উপজেলা ভেটেরেনারি সার্জনের ৪০টি পদের মধ্যে ১৬টি উপজেলায় কোন ভেটেরিনারি সার্জন নেই। সিলেটের ৭টি উপজেলা, সুনামগঞ্জের ৪টি, হবিগঞ্জের ২টি এবং মৌলভীবাজারের ৩টি উপজেলায় কোন ভেটেরিনারি সার্জন নেই। এছাড়া, ভেটেরিনারি ফিল্ড এসিস্ট্যান্ট (ভিএফএ) এর ১১০টি পদের মধ্যে ৪৯টি এবং ভেটেরিনারি ফিল্ড এসিস্ট্যান্ট(কৃত্রিম প্রজনন) পদে ৪৩ পদের বিপরীতে ১৭ টি পদশূন্য রয়েছে। কম্পাউন্ডার, ড্রেসার, হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী, অফিস সহায়কসহ মোট ২৯৫টি পদে লোকবল শূণ্য রয়েছে।

এদিকে, লোকবল কম থাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাজ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জনবলের অভাবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে কখনো ভেটেরিনারি সার্জনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। কখনো ভেটেরিনারী সার্জনকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তাদেকে জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন সভায় বা প্রশিক্ষণে উপস্থিত থাকতে হয়। তখন প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জনসাধারণ সেবা বঞ্চিত হয়। তাছাড়া, ভ্যাকসিনেশনসহ বিভিন্ন কাজে ফিল্ডে যেতে হয় তাদের। তখনও উপজেলা অফিস খালি হয়ে যায়।
তারা বলেন, কৃষির মতো প্রাণিসম্পদ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উপজেলা কৃষি অফিসের অধীনে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। সেই তুলনায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে পুরো উপজেলা দেখতে হয়। ইউনিয়নে কর্মকর্তা দেওয়া দূরে থাক, মূল জনবল কাঠামো অনুসারে যে জনবল সেগুলোই পাওয়া যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটে প্রতিদিন মাংস, ডিম ও দুধের উৎপাদন বাড়ছে। খামারীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ বছর কোরবানীর সময়ে প্রয়োজনীয় কোরবানীর পশুর চাহিদার প্রায় পুরোটাই স্থানীয়ভাবে মিটানো হয়েছে বলে জানান তারা। সিলেটের বাজারে খোলা দুধ বিক্রির প্রচলন না থাকায় অনেকেই উৎপাদন বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েন বলে জানিয়েছেন। ডিম উৎপাদনে সিলেট কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও লেয়ার মুরগীর খামার বৃদ্ধির পাশাপাশি সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে হাঁসের খামার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তারা।

সিলেট বিভাগ ডেইরী ফার্মাস এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহমদ বলেন, প্রাণিসম্পদের জনবল সংকটের কারণে ভালো সেবা পাওয়া যায় না। জরুরী প্রয়োজনের সময় তাদের দেখা মেলে না। পুরো উপজেলার জন্য একজন সার্জন, কৃত্রিম প্রজনন কর্মকর্তা থাকলে কিভাবে সেবা পাওয়া যাবে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, প্রতি উপজেলায় একজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং দুই জন ভেটেরিনারি সার্জনের পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। একই সাথে প্রতি ইউনিয়নে একজন করে কৃত্রিম প্রজনন কর্মকর্তা নিয়োগদানের ওপর জোর দেন তিনি। লোকবল কাঠামো এভাবে পরিবর্তন করলে খামারীরা উপকৃত হবেন এবং উৎপাদন বাড়বে। তিনি বলেন, করোনার সময় খামারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। অন্যরা কোন রকমে টিকে আছেন। তাই, খামারীদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত।

সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রুস্তুম আলী জানান, জনবল সংকটের বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ড. অমলেন্দু ঘোষ বলেন, প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রে সিলেটের সম্ভাবনা বিপুল। প্রতিদিনই খামারী ও উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারও প্রণোদনা, সহজ শর্তে ঋণসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। এই মুহূর্তে সরকারের ১১টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ বছর কোরবানীর পশুর চাহিদা স্থানীয়ভাবেই পূরণ করা গেছে। তিনি বলেন, অনেক শিক্ষিত যুবক এখন খামার স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছে। তারা যাতে বিজ্ঞানভিত্তিক পশুপালন করতে পারে-সেজন্য প্রাণিসম্পদ অফিস সার্বক্ষণিক তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। লোকবল সংকট থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *