গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীর রোবট তৈরি

মানুষের মত গঠন আকৃতি’র রোবট তৈরি করেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ছয় শিক্ষার্থী।

 

কথা বলা, বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের উত্তর দেয়া, ভার্চুয়াল কাজে পারদর্শীতাসহ বিভিন্ন সুবিধা সম্বলিত এই রোবট আনুমানিক ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। রোবটটির নাম দেয়া হয়েছে ‘মিরা’ (MIRAA)। মিরার পূর্ণাঙ্গ রূপ হচ্ছে ‘মোবাইল অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্ট রোবট ফর অ্যাডভান্সড অ্যাসিস্ট্যান্স’।

 

সিএসই বিভাগ থেকে দেওয়া প্রকল্পের আওতায় রোবট মিরা’র উদ্ভাবক ওই বিভাগের ২০তম ব্যাচের ছয় শিক্ষার্থী। ওই দলে দলনেতা হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ রিফাত। এ ছাড়া আরো ছিলেন-মাহতাবুর রহমান সবুজ, মাহমুদা আক্তার নিঝুম, মারুফ হোসেন, সাফিক হাসান ও শারমিন নাহার তোহফা।

 

দলটি সিএসই বিভাগের প্রভাষক রোয়িনা আফরোজ অ্যানির অধীনে চলতি বছরের ২০ জুলাই থেকে রোবটটির কাজ শুরু করেন তারা। প্রায় আড়াই মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে ‘মানুষের মত গঠন আকৃতি’তে রোবট তৈরিতে সফল হন তারা।

 

রোবট তৈরিতে বিভিন্ন ধরণের প্রোগামিং কোড ব্যবহার করা হয়েছে যেমন জাভা, পাইথন, এআইএমএল, ডট কনফ এবং কোডের সর্বমোট দৈর্ঘ্য আনুমানিক প্রায় ১২ থেকে ১২ হাজার লাইন। বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন নিরিবিলি ফাল্গুনি হাউজিংয়ের ল্যাবে রোবট তৈরির যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়। এটি তৈরিতে অসামান্য অবদান রাখেন উজ্জল সরকার ও মাসুদ রানা নামের দু’জন ব্যক্তি।

 

রোবটটির প্রধান বৈশিষ্ট সম্পর্কে গ্রুপের সদস্য মাহতাবুর রহমান সবুজ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এটি মূলত পোর্টেবল এবং অটোমেটেড অর্থাৎ বাইরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই পূর্ণ কাজ করতে সক্ষম। সফটওয়্যার চালুর পর এটি নিজে নিজেই সব কাজ করতে পারে। রোবটের আর্টিফিশ্যাল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং ক্যাপাবিলিটি তাকে বাইরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাজ করার সক্ষমতা দিয়েছে। পূজার ছুটি শেষে আগামী ১২ অক্টোবর (সম্ভাব্য) রোবটটি ক্যাম্পাসে সকলের জন্য প্রদর্শন করা হবে।’

 

অসামান্য এই উদ্ভাবনের বিষয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. করম নেওয়াজ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই অভাবনীয় সাফল্যে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্ববোধ করছি। এটি একটি অত্যাধুনিক রিসার্চ ওয়ার্ক। বিভাগ থেকে আমরা নিয়মিত ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের গ্রুপ করে বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ দিয়ে থাকি। এসব কাজ করার মাধ্যমে তারা হাতে কলমে শিখতে পারে, যেটা তাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।’

 

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম তৈরি এই রোবটটি মানুষের সঙ্গে কথা বলা, জটিল প্রশ্নের উত্তর দেয়াসহ বিভিন্ন ভার্চুয়াল এবং শারীরিক কাজে সক্ষম। ভার্চুয়াল কাজের মধ্যে ইমেইল পাঠানো, পছন্দের গান বাজানো, নির্দিষ্ট কাজের কথা মনে করিয়ে দেয়া (রিমাইন্ডার), সময় ও তারিখ জানানো, ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করা, আগাম পূর্বাভাস দেয়া ইত্যাদি কাজ করতে পারে। শারীরিক কাজের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি যেমন হ্যান্ডশেক বা হাই ফাই করা, কাজের সময় কফির কাপ ধরে রাখা, জোকস শোনানো, রক পেপার সিজার খেলা ইত্যাদি কাজে সক্ষম। এ ছাড়া রোবটটি যাদের সঙ্গে কথা বলবে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য মনে রাখতে পারবে এবং ওই তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে কথোপকথন করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *