নিউজ ডেস্কঃ মহামারি করোনা সংকটের কারণে বিলম্বিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চমক দেখিয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাশের হারে সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে সিলেট। ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ পাসের হারে সারাদেশে প্রথম হয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। তবে,পাশের হারের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে সর্বনিম্নে রয়েছে সিলেট বোর্ড।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. কবির আহমদ জানান, বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর থেকে শতাংশের হারে এবার সবচেয়ে ভাল ফলাফল হয়েছে। বিশেষ করে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করায় এ চমক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর অরুণ চন্দ্র পাল জানান, এবার ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে পাশ করেছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭শ’ জন। পাশের হার ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বিগত বছরগুলোর তুলনায় পাসের হার বেড়েছে। বেড়েছে জিপিএ-৫। ২০২০ সালে বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৭৯।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ৯১৯টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ১৪৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিনটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করায় বোর্ডে পাশের হার বেড়েছে। তবে, এবার গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে কোন পরীক্ষা হয়নি। সার্বিক ফলাফল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলেজ পরিদর্শক ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, বিদ্যালয় পরিদর্শক মঈনুল ইসলাম, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হাবিবা বাসিত, শরিফ আহমদ, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ফারুক আহমদ, সিবিএ সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
ফলাফল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ বেড়েছে ৫৭১টি। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা সর্বাধিক ৪ হাজার ৪৫৪ জন জিপিএ-৫ অর্জন করে। এর মধ্যে ছেলে ১ হাজার ৯২৫ এবং মেয়ে ২ হাজার ৫২৯ জন। মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২৯ জন। এর মধ্যে ছেলে ৫০ ও মেয়ে ১৭৯ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ-৫ লাভকারী ১৫১ জনের মধ্যে ছেলে ৫৩ ও মেয়ে ৯৮ জন। এবারের পরীক্ষায় পাশ করা ১ লাখ ১৫ হাজার ৭শ’ জনের মধ্যে ছেলে ৫১ হাজার ৩৮৬ জন এবং মেয়ে ৬৪ হাজার ৩১৪ জন। পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়ে ১২ হাজার ৯২৮ জন বেশী।
এবারের পরীক্ষায় এ গ্রেড পেয়েছে ১৮ হাজার ৯৩৮ জন, এ মায়নাস ১৯ হাজার ৭৩৯ জন, বি গ্রেড ২৮ হাজার ৪৫৩ জন, সি গ্রেড ৪১ হাজার ২৬৫ জন এবং ডি গ্রেড পেয়ে পাশ করেছে ২ হাজার ৪৭১ জন।
এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২১ হাজার ৪৯০ জন অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২০ হাজার ৪৭৭ জন। এর মধ্যে ছেলে ৯ হাজার ৪৮৫ এবং মেয়ে ১০ হাজার ৯৯২ জন। বিভাগ ভিত্তিক পাশের হারে বিজ্ঞান বিভাগ ৯৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।
মানবিক বিভাগে ৮৮ হাজার ৬০৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৮৬ হাজার ১৭৭ জন। এর মধ্যে ছেলে ৩৭ হাজার ১৫ এবং মেয়ে ৪৯ হাজার ১৬২ জন। মানবিক বিভাগে পাশের হার ৯৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৯ হাজার ৪৫৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৯ হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে ছেলে ৪ হাজার ৮৮৬ এবং মেয়ে ৪ হাজার ১৬০ জন। ব্যবসায় শিক্ষা থেকে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৬৩।
ফলাফল পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জেলা ভিত্তিক পাশের হারে এবার এগিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলার ২৬ হাজার ৪৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ২৫ হাজার ৩৪৩ জন। এর মধ্যে ছেলে ১২ হাজার ১৪৯ জন অংশ নিয়ে পাশ করে ১১ হাজার ৭৮৬ জন এবং মেয়ে ১৩ হাজার ৯০০ জন অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১৩ হাজার ৫৫৭ জন। জেলার পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫৩। সুনামগঞ্জ জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬২৭ জন।
সিলেট জেলায় ৪৩ হাজার ৫৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৪১ হাজার ৮৩২ জন। এর মধ্যে ছেলে ১৯ হাজার ৫৩৫ জন অংশ নিয়ে পাস করে ১৮ হাজার ৯১৮ জন। মেয়েদের মধ্যে ২৩ হাজার ৫২১ জন অংশ নিয়ে পাস করে ২২ হাজার ৯১৪ জন। জেলায় পাশের হার ৯৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। সিলেট জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৯৮ জন। হবিগঞ্জ জেলায় ২৪ হাজার ৫৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ২৩ হাজার ১১৯ জন। এর মধ্যে ছেলে ১০ হাজার ৬৩৭ জন অংশ নিয়ে পাস করে ১০ হাজার ১৬৫ জন এবং মেয়ে ১৩ হাজার ৪১৭ জন অংশ নিয়ে পাস করে ১২ হাজার ৯৫৪ জন। এ জেলায় পাসের হার ৯৬ দশমিক ৫৫ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৬৯ জন। মৌলভীবাজার জেলায় ২৬ হাজার ৩৩৪ জন অংশ নিয়ে পাশ করে ২৫ হাজার ৪০৬ জন। এর মধ্যে ছেলে ১১ হাজার ১১ জন অংশ নিয়ে পাশ করে ১০ হাজার ৫১৭ জন এবং মেয়ে ১৫ হাজার ৩৮৩ জন অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১৪ হাজার ৮৮৯ জন। এই জেলায় মোট পাসের হার ৯৬ দশমিক ৭৯। মৌলভীবাজার জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪০ জন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ এই দুই সূচকেই ছেলেদের থেকে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। জিপিএ-৫ এর দিক দিয়েও গেল বছরের মতো এ বছরও এগিয়ে আছে মেয়েরা।