ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে শঙ্কা

নিউজ ডেস্কঃ তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির এ সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি অন্যতম আলোচিত একই সঙ্গে সমালোচিত নাম। যদিও এ কারেন্সি কোনো সরকার বা রাষ্ট্র উৎপাদন বা সরবরাহ করে না। বিভিন্ন জটিল সব অ্যালগোরিদম, ব্লক এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি অনুসরণ করেই একেকটি কয়েন বানাতে হয়। এবং এই কারেন্সি শুধু ভার্চুয়াল দুনিয়াতেই ব্যবহার করা সম্ভব।

ভার্চুয়াল এ মুদ্রার ঊর্ধ্বমুখী ‘গতি’ নিয়ে গভীর শঙ্কায় ভুগছে ‘ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ)’। ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং এর বাজার এত দ্রুত বিস্তার লাভ করছে যে এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না আইনপ্রণেতা ও নীতিনির্ধারকরা। জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ক্রিপ্টো সম্পদের বাজারমূল্য আগের বছরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি।

ডিজিটাল মুদ্রা খাতের সংশ্লিষ্টদের অভিজ্ঞতার অভাব, গ্রাহক ঝুঁকি আর সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থি কর্মকাণ্ডে এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে শঙ্কিত আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে অক্টোবর মাসেই আইএমএফ-এর সহকারী বিভাগ প্রধান ইভান পাপ্পাজিওর্জিও বলেছেন, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার নজর কাড়ার মতো বেড়েছে-পুরো প্রক্রিয়াটি উল্লেখযোগ্য স্থিতিশীলতা দেখাচ্ছে কিন্তু বেশ কিছু কৌতূহল উদ্দীপক স্ট্রেস টেস্টও হয়েছে।’ ডিজিটাল মুদ্রার যে বিষয়গুলো নিয়ে আইএমএফ শঙ্কিত তার মধ্যে প্রথমেই আছে এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সাম্প্রতিক সময়ে যারা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাঠে নেমেছেন তাদের ‘ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ এবং ঝুঁকি মোকাবিলার’ ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে।

পরিস্থিতি জটিল করছে ‘ইনফ্লুয়েন্সাররা’

ক্রিপ্টো খাতের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারদের সংশ্লিষ্টতাই বর্তমান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলছে। ‘প্রতারকরা সামজিক মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে জল্পনা-কল্পনার ভিত্তিতে নতুন টোকেনের দাম বাড়িয়ে আবার বেচে দিয়ে মুনাফা লুটে নিচ্ছে নিয়মিতভাবে। কিছু ইনফ্লুয়েন্সার এমন ক্রিপ্টো কয়েন নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন যে পরে দেখা যায় তার অস্তিত্বই নেই।’-সেপ্টেম্বর মাসেই এই বক্তব্য দিয়েছিলেন এফসিএ প্রধান চার্লস র‌্যান্ডাল।

কিম কারদাশিয়ানের ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার সংখ্যা ২০ কোটির বেশি। বছরের শুরুতেই ‘ইথেরিয়ামম্যাক্স’ নামের এক ক্রিপ্টোমুদ্রার বিজ্ঞাপনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার আরও ইনফ্লুয়েন্সার।

সমাধান কী?

ভার্চুয়াল এ মুদ্রার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে বিজ্ঞাপনী প্রচারণার ওপর নজর রাখা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি সম্পর্কে ভোক্তাদের পরিষ্কার তথ্য দেওয়া উচিত নীতিনির্ধারকদের। এক দিনের ব্যবধানে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন আসছে এই ডিজিটাল মুদ্রার বাজারে। এ খাতে তরুণদের আগ্রহ নিয়েও বিপাকে পড়েছেন নীতিনির্ধারকরা।

নির্বিচারে ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রয়োজন নেই। তবে তার লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। ‘নিষেধাজ্ঞা জারির পরিবর্তে বিশ্বজুড়ে ভার্চুয়াল সম্পদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে একটি আন্তর্জাতিক নীতি প্রণয়ন করা উচিত।’ উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে উপকৃত হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *