শিউল মনজুরের গুচ্ছ কবিতা

ভাবনা

বহুদূর থেকে দেখছি; তুমি চলে যাচ্ছো বহুদূরের পথে। শিস দিতে দিতে পাখিরা যেভাবে মাঝে মধ্যে অতিক্রম করে সীমান্ত।
নিজস্ব ভাষা ছাড়া কেউ কী মানসিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পেরেছে!
পাখিরা যদিও উড়াল দেয়; আবহাওয়া অতিক্রম করে ভিন্ন ভিন্ন আকাশে ঘুরে বেড়ায়, তবু শেষ পর্যন্ত ফিরে আসে প্রগাঢ় আহ্বানে নিজস্ব তাপমাত্রায়।
আজ এই জীবন পাখির মতন! ফিরে যাবো সবুজের মাত্রায়।
.

জলঘরে উড়ে পানকৌড়ি

১.
হাতবাড়াও, প্লিজ হাতবাড়াও
খা খা করছে বাড়ির উঠোন
ভালো লাগছে না, ভালো লাগছে না
একদম না…
মেঘের ভেতর জন্ম নিচ্ছে ঘুমের পিপাসা
দূরে, গাঙতীরে দাঁড়িয়ে আছে মাছরাঙা ভোর!

২.
হাতবাড়াও, প্লিজ হাতবাড়াও
খা খা করছে বাড়ির উঠোন
ভালো লাগছে না, ভালো লাগছে না
একদম না…
কর্পোরেট ভবনে উড়ছে ধূলি…
দিঘিদের বাগান বাড়ি ঘুরছে একা একা প্রজাপতি
বেলা শেষে চলে গেছে সমুদ্র জলের ধীবর!

৩.
হাতবাড়াও, প্লিজ হাতবাড়াও…
খা খা করছে বাড়ির উঠোন…
ভালো লাগছে না, ভালো লাগছে না
একদম না…

৪.
দূরে, জলঘরে উড়ে পানকৌড়ি!

.
আশা ও রমনার ফেরিওয়ালা

ডিটারজেন্ট বিজ্ঞান ধুয়ে দেয় তন্তুর ময়লা। ব্লিচিং যাদুতে ঝকঝক হয়ে ওঠে ঘরের মেঝ। ঝলমল দুপুরে দাঁড়িয়ে থাকে প্রযুক্তিদিন। রাতদিন ভি আই পি উড়োজাহাজ গর্জন করে জিয়ার রানওয়ে। তবু আশার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে বারবার! তবু অগ্নিতরঙ্গে পোড়ে যায় জীবনের চারদিক! আর কোথাও কোথাও ডেকে ডেকে রৌদ্রদিনের কাব্য বিকি করে রমনার ফেরিওয়ালা।
.

বৃষ্টি কন্যা

বৃষ্টির সাথে দেখা হলো টিলাগড়ে, ভর দুপুরে
বৃষ্টি কন্যা যায় উড়ে উড়ে ঐ বাতাসের তোড়ে
আমার সাথে ছিল মন একখান
বৃষ্টিতে ভিজে সে হলো ছত্রখান!
.

বিশ্ব পুড়ছে

বিশ্ব পুড়ছে। আমি পুড়ছি।
রাষ্ট্র পুড়ছে। আমি পুড়ছি।
তোমাদের অন্তর বাহির পুড়ছে।
তোমাদের পোশাক পরিচ্ছদ পুড়ছে।
তোমাদের ঘর বাড়ি বারান্দা উঠোন পুড়ছে।
আর আমি ভীষণ পুড়ছি…
আর আমি পুড়ে পুড়ে জ্বলছি…
আর আমি মাগো জ¦লছি আর জ্বলছি…
.

মাছরাঙা মাছের মুখ

এক.
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে
রুমাল ছুড়ে দিলে
আকাশের মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে।

দুই.
জানালায় দাঁড়িযে
এক ঝলক দেখা দিলে
বাতাসের তীব্রতায় নদীর বুকে ঝড় ওঠে।

তিন.
এক টুকরো হাসিমুখ নিয়ে
দরজায় দাঁড়ালে
বুক থেকে নেমে যায় বরফের কালো পাথর।
.

মন ও মৌনতা

মন ও মৌনতা নিয়ে ঘুরি। ঘুরতে ঘুরতে মৌনতাকে পুড়াই। পুড়তে পুড়তে মৌনতা মনের ভিতর খাঁটি স্বর্ণের মতো ঝিলিক দেয়। অত:পর মন ও মৌনতা পরস্পর হাত ধরে, দূরের পথে হেঁটে যায়।

_________________________
শিউল মনজুর।
মেরীল্যান্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *