‘ওয়েস্টল্যান্ড’ ও ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ উদযাপন

সাহিত্য ডেস্কঃ কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা ও টি এস এলিয়ট বিরচিত পাশ্চাত্য আধুনিক কবিতায় যুগান্তকারী কাব্যকৃতি ওয়েস্টল্যান্ড বা পোড়োজমির গৌরবময় শতবর্ষ এবার উদযাপিত হচ্ছে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন ভ্যানুতে।

এতে বিংশ শতকের এই দুই মহান কবিতা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রদর্শিত হচ্ছে দি রেবেল এন্ড দ্যা ওয়েস্টল্যান্ড শীর্ষক কাব্যনাট্য পরিবেশনাও। ইতিমধ্যেই সিলেটে চোখ ফিল্ম সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় এই প্রোডাকশন শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটোরিয়ামে মঞ্চস্থ হবার পর হলভর্তি দর্শকেরা তাদের মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

ইতিপূর্বে এটি যুক্তরাজ্যের লিডস শহরের সেভেন আর্টস থিয়েটারে ২ অক্টোবর থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ উদযাপন শুরু হয়ে গত ১৪ নভেম্বর ইস্ট-লন্ডনের রিচমিক্স থিয়েটারে মঞ্চায়িত হয়। ৮ ডিসেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ অডিটরিয়াম, ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত এবং নৃত্যকলা মিলনায়তন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার তেজগাঁও কলেজ অডিটরিয়ামে প্রদর্শিত হবার পর এই বিশেষ কাব্যনাট্য মঞ্চায়িত হবে কলকাতার নজরুল তীর্থ অডিটরিয়ামে ১৩ই ডিসেম্বর।

আগামী বছর এটি ইউরোপের বিভিন্ন শহরে মঞ্চায়িত হবার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌধের প্রতিষ্ঠাতা এবং থিয়েটার পরিবেশনার পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার। ভারতীয় মার্গসঙ্গীত ও দক্ষিণ এশীয় শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীতের শীর্ষ সংস্থা সৌধ সোসাইটি অব পোয়েট্রি এন্ড ইন্ডিয়ান মিউজিকের প্রযোজনায় অনুষ্ঠিত এই বিশ্বব্যাপী শতবর্ষ উদযাপনে বাংলাদেশে সার্বিক সহযোগিতা ও ব্যবস্থাপনায় থাকছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখ ফিল্ম সোসাইটি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ গবেষণাকেন্দ্র, ঢাকাস্থ নজরুল সেন্টার এবং রাধারমন চর্চা কেন্দ্র। দ্যা রেবেল এন্ড ওয়েস্টল্যান্ড শীর্ষক কাব্য-আলেখ্যে অবধারিতভাবেই থাকছে দুই কবিতার নির্বাচিত অংশ থেকে পাঠ, আনুষঙ্গিক সঙ্গীত এবং এলিয়ট ও নজরুলের চরিত্রের নাট্য-দৃশ্যায়ন—জানিয়েছেন দ্যা রেবেল এন্ড দ্যা ওয়েস্টল্যান্ডের পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার।

এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে টি এম আহমেদ কায়সার জানান, এলিয়ট এবং নজরুলের মতো মহান কবির অনন্য সাহিত্যকর্ম অয়েস্ট ল্যান্ড ও বিদ্রোহী নিঃসন্দেহে বিংশ শতকের অবক্ষয়বাদী আধুনিক কাব্য-ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। দি রেবেল এন্ড দ্যা ওয়েস্টল্যান্ডের মঞ্চায়নে আমরা বেছে নিয়েছি কিছু সাংকেতিক মিল বা সাদৃশ্যের জায়গা; যেখানে এলিয়ট শেষ করছেন ভারতীয় মহামন্ত্র শান্তি! শান্তি! শান্তি উদ্ধৃত করে, সেখানে, অন্যদিকে, উপনিবেশবাদ-বিরোধী বাঙালি কবি নজরুল গাইছেন তার সর্বপ্লাবী বিদ্রোহের ইশতেহার! স্ফলিঙ্গ জ্বলে উঠছে কবিতার ছত্রে ছত্রে—এতেও কি প্রকারান্তরে নিহত আছে শান্তি-অন্বেষণ বা অবগাহনের ইঙ্গিতও? আহমেদ কায়সার জানান, এই উদযাপনের মধ্যদিয়ে আমরা বিশ্বের দুই প্রধান কবিতার শক্তি, সৌকর্ষ ও সুষমা আরও বিপুলভাবে পৌঁছে দিতে চাই বিবিধ সংস্কৃতি ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে। এই অভিনব কাব্য-আলেখ্যে অভিনয়, আবৃত্তি, অথবা নাটকীয় দৃশ্য-পরিক্রমার সঙ্গে রয়েছে হৃদয়স্পর্শী সঙ্গীতও। ফলে, দর্শকেরা নাটক বা কবিতার সৌন্দর্যের পাশাপাশি সঙ্গীতের ঘোর নিয়েই বাড়ি ফিরবেন বলে আশা করছি। ইতিপূর্বে লিডসে ও লন্ডনে যে দুটো মঞ্চায়ন হয়েছে তাতে আমরা হলভর্তি দর্শকদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পেয়েছি।

অভারতীয় দর্শকদের মাঝে নজরুলের কবিতা নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ‘আমরা সৌধের উদ্যোগে যেহেতু দীর্ঘ প্রায় একযুগ ধরে ভারত উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও অন্যান্য শিল্পকলা সারা ব্রিটেনে প্রচার করেছি, কলকাতার বহু শিল্পরসিক এবং মহান শিল্পীরা আমাদের শিল্পভাবনা ও শিল্পকৃতি সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন। এবার নজরুল তীর্থে কলকাতার সঙ্গীত, সাহিত্য, দর্শনের বোদ্ধা সারস্বত সমাজ আশা করছি সেখানে যোগ দেবেন। প্রকারান্তারে যেন এই উদযাপন শিল্পীদের, লেখকদের, শিল্পরসিকদের মেলা হয়ে ওঠে।’ এই পরিবেশনায় টি এস এলিয়টের ভূমিকায় থাকছেন ব্রিটিশ লেখক মাইক শরীফ, নজরুলের ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, নন্দিত আবৃত্তিশিল্পী “সৈয়দ সাইমুম আনজুম ইভান এবং অধ্যাপক শিব কুমারের হিসাবে থাকছেন টি এম আহমেদ কায়সার। কবিতা থেকে পাঠ করবেন তামিরা মিজান চৌধুরি, ডঃ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ডঃ শর্মি হোসেন এবং এক বিশেষ চরিত্রে থাকছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *