পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা রচনা

নিউজ ডেস্কঃ

জাতীয় পাখি দোয়েল

ভূমিকা

দক্ষিণ এশিয়ার জনবসতির আশপাশে দেখতে পাওয়া অনেক ছোট পাখিদের মধ্যে দোয়েল অন্যতম। এর কলকাকলিতে আমাদের ভোর হয়। এর গানে আমাদের মনে এক ধরনের ভালো লাগার শিহরণ জেগে ওঠে। এর বৈচিত্র্যপূর্ণ আকার ও আকৃতি আমাদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। অস্থির এই পাখিরা সর্বদা গাছের ডালে বা মাটিতে লাফিয়ে বেড়ায় খাবারের খোঁজে। গ্রামীণ অঞ্চলে খুব ভোরে এদের কলকাকলি শোনা যায়। দোয়েল গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও অপরূপ করে তোলে।

পরিচিতি

দোয়েল কর্ডাটা পর্বের প্যাসেরিফরম (অর্থাৎ চড়াই-প্রতিম) বর্গের অন্তর্গত একটি পাখি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus saularis। ইংরেজিতে এটি Oriental magpie-robin নামে পরিচিত। উল্লেখ্য, এ পাখির বাংলা নামটির সঙ্গে ফরাসি ও ওলন্দাজ নামের মিল আছে। ফরাসি ভাষায় একে বলা হয় Shama dayal এবং ওলন্দাজ ভাষায় একে বলা হয় Dayallijster। এটি বাংলাদেশের জাতীয় পাখি। বাংলাদেশের পল্লি অঞ্চলের সর্বত্রই দোয়েল দেখা যায়।

প্রাপ্তিস্থান

নাতিশীতোষ্ণ দক্ষিণ এশিয়ায় মূলত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও ফিলিপাইনে এদের পাওয়া যায়। সাধারণত কাঠসমৃদ্ধ বন, চাষাবাদকৃত জমির আশপাশে ও জনবসতিতে মানুষের কাছাকাছি এদের দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে এদেরকে বেশি দেখা যায়।

শনাক্তকরণ

দোয়েল আকারে ১৫-২০ সেন্টিমিটার বা ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। এর লম্বা লেজ আছে যা অধিকাংশ সময় খাড়া করে রাখে। পুরুষ দোয়েলের শরীরের উপরিভাগ ও গলার নিচে কালো রঙের, পেট সাদা। ডানার দুই পাশে সাদা রঙের পে্যাঁচ আছে। স্ত্রী দোয়েলের উপরিভাগ ও গলার নিচে ছাই-রঙা হয়। পেটের অংশ পুরুষ দোয়েলের মতো উজ্জ্বল নয়, বরং কিছুটা ফিকে সাদা। কিন্তু দেখতে অপরূপ।

বংশবিস্তার

দক্ষিণ এশিয়ায় দোয়েলের প্রজননকাল মার্চ থেকে জুলাই; আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জানুয়ারি থেকে জুলাই। প্রজনন সময় পুরুষ দোয়েলের শরীরের রং উজ্জ্বলতর হয়। গাছের ডালে বসে স্ত্রী দোয়েলকে আকৃষ্ট করার জন্য হরেকরকম সুরে ডাকাডাকি করে। ডিম দেওয়ার এক সপ্তাহ আগে এরা গাছের কোটরে বা ছাদের কার্ণিশে বাসা বানায়। সাধারণত ৪/৫টি ডিম দেয়। ডিমের রং ফিকে নীলচে-সবুজ, তার উপর বাদামি ছোপ থাকে। স্ত্রী দোয়েল ডিমে তা দেয়; ৮ থেকে ১৪ দিন পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। প্রজননকালে পুরুষ দোয়েল আগ্রাসী হয়ে ওঠে। তখন বাসার আশপাশে অন্য পাখিদের আসতে দেয় না।

স্বভাব-প্রকৃতি

নানা রকম সুরে ডাকাডাকির জন্য দোয়েল সুপরিচিত। অস্থির এই পাখিরা সর্বদা গাছের ডালে বা মাটিতে লাফিয়ে বেড়ায় খাবারের খোঁজে। কীট পতঙ্গ, ছোট ছোট শুঁও পোকা এদের প্রধান খাদ্য। কখনো কখনো সন্ধ্যার আগে আগে এরা খাবারের খোঁজে বের হয়। পুরুষ দোয়েল স্ত্রী দোয়েলকে আকৃষ্ট করার জন্য মিষ্টি সুরে ডাকাডাকি করে। তবে স্ত্রী দোয়েলও পুরুষ দোয়েলের উপস্থিতিতে ডাকতে পারে।

সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে দেশি ঐতিহ্যের প্রতীক হিসাবে দোয়েল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের লেখাতে এ পাখির উল্লেখ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মুদ্রাতে (টাকা) এই পাখির ছবি বহুল ব্যবহৃত। এ পাখির নামে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে দোয়েল চত্বর নামে একটি সড়ক চত্বর আছে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকার মাঝে অবস্থিত।

কেন জাতীয় পাখি

দোয়েল বাংলাদেশের সর্বত্র অত্যন্ত সুপরিচিত একটি পাখি। গ্রাম-শহর-গঞ্জ সব জায়গাতেই এর অবাধ বিচরণ। পাখিটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সুরেলা এর গান। দোয়েলের শিষ শুনে আমাদের ভোর হয়। পাখিটির গানে আমাদের মন ভরে যায়। বাঙালি সুর-পাগল জাতি। বাঙালির স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এ পাখিটি অত্যন্ত সাদৃশপূর্ণ বলে একে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় পাখির মর্যাদা দেয়া হয়েছে।

উপসংহার

বাংলাদেশের সর্বত্র দোয়েল দেখা গেলেও অন্যান্য পাখির মতো দোয়েল পাখিও প্রতিকূল পরিবেশের শিকার হচ্ছে। ক্রমশ ধ্বংস হচ্ছে এ পাখিদের আবাস ও বিচরণক্ষেত্র। এ ধরনের অবস্থা থেকে এদের সুরক্ষার প্রয়োজন। এজন্য আমাদের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *