তাজিয়া মিছিল- কারবালা নিয়ে শিয়াদের ধোঁকাবাজী

রওশন হক

 

‘শিয়া’ হচ্ছে ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সম্প্রদায়। শিয়া ইসলাম অনুসরণকারীদের শিইতি বা শিয়া বলা হয়। ‘শিয়া’ হল ঐতিহাসিক বাক্য ‘শিয়াতু আলি’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ যার অর্থ “আলি অনুগামীরা বা আলির দল”। দশই মুহররম পবিত্র আশুরা দিবস। মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র দিন। শোকের মাস মুহররম। হযরত হুসাইন (রাঃ) এর মর্মান্তিক শাহাদতে প্রতিটি মুসলমানদের হৃদয়ে ঝড় উঠেছে। মনের অজান্তে চোখের কোণে জমা করেছে বেদনাশ্রু। কিন্তু এ বিষয়টিকে প্রতিপাদ্য করে শিয়া রাত যে নাটক আর অপপ্রচারের ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে তা ইতিহাসে বিরল। মুহররমের দশ তারিখ মানেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে কারবালার ময়দান। যে ময়দানের সেই চিত্রই আমরা কল্পনা করি যেভাবে কল্পনা করতে শিখিয়েছে আমাদের শিয়াদের লিখিত মিথ্যা ইতিহাস। বিষাদ সিন্ধুর মত জঘন্য মিথ্যাচারে ভরপুর কুফরী কিতাবের মিথ্যার ভাগারকে স্মৃতিপটে এঁকে তুষ্টি লাভ করছি। প্রশান্ত করছি মনকে আশুরা মানেই কারবালা। আশুরা মানেই বিষাদ সিন্ধু বইয়ে চিত্রিত জঘন্য মিথ্যাচার নির্ভর অহেতুক নাটক। যা হযরত হুসাইন (রাঃ) এর মর্মান্তিক শাহাদতের মূল স্পিরিটকে করে দিচ্ছে ধুলায় ধুসরিত। কলঙ্কিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে নবী দৌহিত্রের মহান শাহাদতকে। ভুলে গেছি আশুরা মানেই শুধুই কারবালা নয়। এটি একটি মহান দিন। এই দিন শুধু কারবালার ঘটনার কারণে মহান নয়। এটি শুধু নবীজী (সাঃ) এর দৌহিত্র জান্নাতের যুবকদের সর্দার হযরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের কারণে মহানতার মর্যাদা লাভ করেনি।
.
এ মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন। (সহীহ বুখারী)। এদিন রোযা রাখার প্রতি রাসূল সাঃ আকাংখা প্রকাশ করেছেন। এদিন অনেকেই রোযা রাখেন। হাদীসে এসেছে,
“তোমরা আশুরার দিনের রোযা রাখ এবং ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্য পরিত্যাগ কর। তাই তোমরা আগে বা পরে একদিন রোযা রাখ।”
.

তাজিয়া মিছিলে শোকের মাতম

তাহলে বুঝা গেল আশুরার দিন শুধু কারবালার ঘটনার জন্য তাৎপর্যময় নয়। এটি ইহুদীদের কাছেও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিন তারাও রোযা রাখতো। রাসূল সাঃ তাই ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আগে বা পিছে একদিন রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন শিয়াদের মর্সিয়া মাতম আর “কারবালা” “কারবালা” বলে চিৎকার আমাদের এ দিবসের আসল তাৎপর্যময়তা ভুলিয়ে দিয়েছে। ভুলিয়ে দিয়েছে এদিন ধৈর্য আর সবরের শিক্ষা গ্রহণ করে রোযা রাখার নবী’র নির্দেশকে হা হুতাশ আর মাতম মর্সিয়াকে বানিয়ে দিয়েছে দ্বীন। অথচ রাসূল সাঃ এর নির্দেশ হল এ দিন রোযা রাখা। এদিন জঘন্য কাজকর্ম থেকে মুক্ত থাকা। এ পবিত্র মাসের পবিত্রতা বিনষ্ট না করা। আফসোস মুসলিম উম্মাহের জন্য। শিয়াদের ফাঁদে পা দিয়ে আমরা এদিনের আসল তাৎপর্য ভুলে গেছি।
.
শিয়ারা সুন্নিদের চাইতে অনেক বেশি শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান এমনটা মানুষ কে বলতে শুনেছি। রক্তাক্ত তাজিয়া মিছিল নিয়ে প্রসিদ্ধ মাদরাসার শিক্ষক গবেষক আলেম মাওলানা আবদুর রহমান তিনি তার লেখায় বলেছেন,
“ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকালের পরে সংঘটিত কোনো মুসিবত বা আনন্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো দিন বা কোনো মাসের নতুন কোনো ফযীলত বা নতুন কোনো বিধান আবিষ্কার করা যাবে না। এমন করা হলে তা হবে পরিষ্কার বিদআত ও গোমরাহী, যার ঠিকানা জাহান্নাম।”
.


বাংলাদেশে এবার শিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান-পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া শোক মিছিলে মাতম (‘হায় হোসেন’ মাতম তুলে যারা দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি নিয়ে নিজেদের শরীর র’ক্তাক্ত করেন) যা এবার বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।এছাড়া আয়োজকদের ১৩টি নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে এক সমন্বয় সভায় এসব কথা বলেন।
নির্দেশনাগুলো হলোঃ
তাজিয়া শোক মিছিলে কোনো পাইক( কালো কাপড়ে মোড়ানো) কেউ অংশ নিতে না পারে, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। তাজিয়া শোক মিছিলে সব প্রকার ধারালো অস্ত্র, ধাতব পদার্থ, দাহ্য পদার্থ, ব্যাগ, পোটলা, লাঠি, ছোরা, চাকু, তরবারি/তলোয়ার, বর্শা, বল্লবের ব্যবহার এবং আতশবাজি নিষিদ্ধ। পোশাকের সঙ্গেও এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।এত সব নিষিদ্ধতার পর ও স্বাভাবিক ভাবেই সব কিছু কেউ মানে নাই।

.

তাজিয়া মিছিল

পুরান ঢাকায় হোসেনী দালান ইমামবাড়ায় শিয়া মসজিদ থেকে বের হওয়া তাজিয়া মিছিল বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ যা হয়ত অনেকেই আমরা কাছে দেখে অনেকেই দেখেছি। তাজিয়া মিছিলে এক শিয়া বাবা মাতম করবার উদ্দেশ্যে তার নিজ শিশু পুত্রকে ক্ষুর দিয়ে রক্তাক্ত করছে। এই ছবি আমরা বিভিন্ন টিভি নিউজ পেপার সোশ্যাল মিডিয়া মোটামুটিভাবে সব জায়গায় দেখেছি। শিশুদের প্রতি অন্যায় এই ধরনের বর্বরতা সুস্থ মস্তিষ্কে মেনে নেয়া যায় না। এ ছাড়াও মিছিলে শতশত যুবকরা স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেকে ধারালো ছুরি দিয়ে আহত করতে দেখা যায়। আর এসব বাসাবাড়ি ও রাস্তার শিশু কিশোর সহ সব বয়সি মানুষ জডো হয়ে দেখতে থাকে।
.
সমাজের এই শিশু কিশোররা যখন বড় হবে, খুব সহজেই সে তার নিজ সন্তানকেও একই রকম বর্বরতা শিক্ষা দিবে । এইটাই মানব সমাজের স্বাভাবিক বাস্তবতা। মানুষ যা দেখে দেখে সে বড় হয় তা তার কাছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক বলে মনে হয় এবং তা ই সে অনুসরণ করে। আমি আমেরিকায় কুইন্সের একবার তাজিয়া মিছিল দেখবার সুযোগ হয়েছিল। এখানে ধারালো কোন কিছু তাদের হাতে ছিল না। শ’খানেক লোকের মিছিলে খালি গায়ে শুধু বুক চাপড়ে কিছু বলতে শুনেছি। তাদের সেই ভাষা বুঝতে পারিনি তবে মিছিলকারীদের চাইতে পুলিশের সংখ্যাই বেশি ছিলো।
মানব শিশু শিয়ার ঘরে জন্মালে শিয়া হবেন। সুন্নির ঘরে জন্মালে হবেন সুন্নি। ঈশ্বর নির্ধারণ করে একজনের জন্মস্থান এবং বাকিটা নিয়ম নীতি সমাজ নিশ্চিত করে। সমাজের প্রতি বিশ্বাসের কারণে সমাজে যা শিক্ষা দিবে তাই মানব সন্তান শিখে নিবে। একমাত্র মানব সন্তান-ই পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করে অতি দুর্বল হয়ে, তাদের কে পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে বেড়ে উঠতে হয়। অন্যন্যা প্রাণীদের বেলায় শিশুর জন্মের কিছু সময় পরই তারা হাঁটতে শুরু করে। তাই তারা নিজের পছন্দের জীবন যাপন করতে পারে। মানব সমাজের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বা প্রভাব অনুযায়ী হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কুংবা সুন্নি শিয়া বানানো প্রক্রিয়া মানুষ হয়ে জন্মেছি বলেই সহজতর হয়ে গেছে। পেছন থেকে ইতিহাস ঘেঁটে আমরা দেখি এ যেন ইসলামের ইতিহাস না ,মানুষের ইতিহাস।

——
ওশন হক
লেখক, সাংবাদিক এবং কলামিস্ট
নিউইয়র্ক

——
এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব। গ্লবালভিউ২৪ এর সম্পাদকীয় নীতির সাথে প্রকাশিত মতামত মিলতে নাও পারে। তাই এই মতামতের দায়ভার সম্পর্ন লেখকের নিজের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *