দল গোছাতে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ

নিউজ ডেস্কঃ তৃণমূল পর্যায়ের সাংগঠনিক তৎপরতায় গতি ফিরিয়ে আনতে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। পরিকল্পনা করা হচ্ছে আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দলের বর্ধিত সভা আয়োজনের। সারাদেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে দলের বিভিন্ন শাখার দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করে দ্রুত মেয়াদোত্তীর্ণ তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন করা, চলমান সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম জোরদার এবং আগামী বছর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানসহ দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে তোলার নানা পরিকল্পনা গ্রহণই এই বর্ধিত সভা আয়োজনের উদ্দেশ্য।

দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে আগামীকাল রোববার যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সম্মেলনে যোগ দিয়ে লন্ডন হয়ে ১৫ নভেম্বর দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার। দলীয় প্রধানের দেশে ফেরার পর ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। এই বৈঠকেই দলের বর্ধিত সভার তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। আর বর্ধিত সভায় সারাদেশের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে দল গোছানোর বিভিন্ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া সমকালকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হবে। এর পরপরই দলের বর্ধিত সভা ডাকা হতে পারে। যেখানে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এবার প্রায় সাড়ে চার বছর পর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দলটির সর্বশেষ বর্ধিত সভা হয়েছিল ২০১৭ সালের ২০ মে। ওই সভায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানোর নানা পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে নানা দিকনির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। তারুণ্যনির্ভর নতুন এ কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে দল গোছানোর নানা পরিকল্পনা নেওয়া হলেও নানা কারণে সেগুলোর বাস্তবায়ন করা যায়নি।

নেতারা বলছেন, দলীয় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর একটি বর্ধিত সভা করার কথা। তবে জাতীয় সম্মেলনের মাত্র তিন মাসের মাথায় দেশের করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ায় অন্য সব ক্ষেত্রের মতো রাজনৈতিক অঙ্গনেও স্থবিরতা নেমে আসে। এই কারণে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি এতদিন বর্ধিত সভা করতে পারেনি। করোনার সংক্রমণ অনেকটা কমে আসায় দ্রুতই বর্ধিত সভার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

নেতারা আরও বলছেন, করোনাকালে রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে কয়েক দফা উদ্যোগের পরও আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৩টি জেলার সম্মেলন করা গেছে। বাকি রয়েছে ৪৩টি সাংগঠনিক জেলা সম্মেলন। সিংহভাগ উপজেলা, পৌরসভা ও অন্য ইউনিট কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিন হয়। আর দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় প্রায় সব জায়গাতেই একচ্ছত্র ক্ষমতার বলয় তৈরি হয়েছে। বাড়ছে দ্বন্দ্ব-কোন্দল এবং মন্থর হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। ত্যাগী, দক্ষ ও স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতারা দলে জায়গা না পেয়ে হতাশ হয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। এই অবস্থায় বিভিন্ন সম্মেলন শেষ করে দক্ষ ও স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাদের নিয়ে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে দলের। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত জেলা সম্মেলনগুলোর মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটেছে বলেও দাবি করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

এদিকে, করোনার কারণে দেড় বছর স্থগিত থাকার পর আবারও জেলা সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়েছে বেশ জোরেশোরেই। সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর রাজবাড়ী জেলা সম্মেলন হয়েছে। নভেম্বরে আরও কয়েকটি জেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।

এর পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন অথবা নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগও নেওয়া হবে দলের পক্ষ থেকে। আর যেসব সংগঠনের সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি, সেগুলোতেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে মাঠে নামানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের কয়েকজন নেতা।

অবশ্য এরই মধ্যে দেশজুড়ে ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচন শুরু হওয়ায় ব্যস্ত সময় কাটছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। এই ব্যস্ততার মধ্যেও দল গোছানোর নানা কার্যক্রম গ্রহণ এবং বাস্তবায়নও তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

এদিকে দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমেও গতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা নেওয়া হবে বর্ধিত সভা থেকে। ২০১৭ সালের ২০ মে সর্বশেষ বর্ধিত সভার মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্যপদ নবায়ন অভিযান নতুন করে উদ্বোধন করা হলেও এই কার্যক্রম বর্তমানে এক রকম স্থবির হয়ে আছে। এর আগে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি দলের আরেকটি বর্ধিত সভায় এক দফায় এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে পরবর্তী প্রায় সাড়ে সাত বছরেও সেটা শেষ করা যায়নি। ফলে সর্বশেষ বর্ধিত সভায়ও নতুন করে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে হয়েছিল।

সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই দলকে শক্তিশালী করার সব পরিকল্পনাকে গুছিয়ে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু করেছেন তারা। আগামী দিনে এই প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা হবে।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সমকালকে বলেন, করোনার কারণে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা স্থবির হলেও, এখন তাতে নতুন করে গতি আসছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন সারাদেশের নেতাকর্মীরা। সাংগঠনিক সফর, দলের অন্তর্কোন্দল ও দ্বন্দ্ব নিরসন, তৃণমূল সম্মেলন ও নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি এবং নতুন সদস্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতেও তৎপর রয়েছেন তারা। জনগণের সমর্থনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টাও চলমান থাকবে বলে জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *