জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিৎ

কাওসার চৌধুরী
কাওসার চৌধুরী

পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলোচিত হয় তাদের শিক্ষার মান, গবেষণা আর অর্জনের জন্য। বৃটেনে দেখেছি ইউনিভার্সিটিগুলো তাদের সেরা গবেষক/বিজ্ঞানী/নোবেল লরিয়েটদের ছবি ইউনিভার্সিটির দেয়ালে সুন্দর করে সাটিয়ে রাখে; সাথে তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় আর অর্জনের এক্সক্লুসিভ তালিকা। এসব ক্যাম্পাসে মিছিল/মিটিং দূরের কথা কোন হট্টগোল কখনো চোখে পড়ে না। কে শিক্ষক? কে ভিসি? কে নেতা? এগুলো বড় পরিচয় হিসাবে বিবেচিত হয় না কখনো। এসব ইউনিভার্সিটিতে সিলেবাস মুখস্থ করে পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হওয়ার নেশা কিংবা তাড়া নেই। এসব ইউনিভার্সিটি গবেষণা আর নতুন নতুন আইডিয়াকে উৎসাহিত করে।

গত কয়দিন থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খবরের শিরোনাম হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম কিংবা গবেষণায় অর্জন নিয়ে নয়; আলোচনা হচ্ছে ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন তহবিল নিয়ে। আরো স্পষ্ট করে বললে চান্দাবাজি নিয়ে। এর সাথে সম্পৃক্ত ইউনিভার্সিটির ভিসি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারি! বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক-ছাত্র নতুন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বেশ কিছুদিন থেকে আন্দোলনও করছেন।

খবরে প্রকাশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ৪-৬ পারসেন্ট চাঁদা দাবি করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ৮ আগস্ট রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করে এই চাঁদা দাবী করেন দুই নেতা। উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার পেয়েছে- এমন কোম্পানির কাছ থেকে ভিসিকে টাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন শোভন ও রাব্বানী। কিন্তু ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) তাতে রাজি না হওয়ায় তার সঙ্গে দুই নেতা রূঢ় আচরণ করেন।

প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন কাজের জন্য এ বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৫টি আবাসিক হল (তিনটি ছাত্র ও দুটি ছাত্রীনিবাস) নির্মাণের জন্য ৩৬৭ কোটি টাকার টেন্ডার চূড়ান্ত হয়েছে।

এ বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়েছে। স্বয়ং ভিসি উনার সাথে দেখা করে বিষয়টি তুলে ধরেন। পরে বিভিন্ন পত্রিকায়ও এ বিষয়ে খোলামেলা বক্তব্য দেন। এজন্য এসব ভাগবাটোয়ারার খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। ছাত্রলীগের প্রধান এই দুই নেতার কথা মতো উন্নয়ন প্রকল্পের ৫% তাদের পকেটের উন্নয়নে বরাদ্দ দিলে তার মোট পরিমাণ হবে ৭২ কোটি টাকা! ভাবা যায়? তাহলে সারা দেশের পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোর বরাদ্দের ৫% কমিশন যোগ করলে কত হবে? নিশ্চিতভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

শুধু এই কমিশন কেন? এরা সারা দেশে কমিটি দিতেও কমিশন চাইবে। যা আগের কমিটিগুলোও করেছে বলে অভিযোগ আছে। শুনা যায়, শুধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি পদে নিয়োগের জন্য তার কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা নিয়েছে এই দুইজন! বলেছে ৬ মাসেই নাকি এই বিনিয়োগ ডাবল হবে! অন্য ইউনিভার্সিটি/বিভাগ/সিটি/জেলা/উপজেলা পদের বিপরীতে কত ইনকাম হতে পারে?

অভিযোগ আছে,নির্বিঘ্নে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঈদের আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে এক কোটি ও শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দিয়েছেন; এমন অভিযোগে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনে চালিয়ে যাচ্ছে একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

এখন কথা হচ্ছে, ভিসি এই টাকা কোথায় পেলেন? উন্নয়ন প্রকল্পের ২ কোটি টাকা তিনি কোন অধিকার বলে একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে দিলেন? এই টাকা নিশ্চয় তার বাপ-দাদার সম্পত্তি বিক্রি করে দেন নাই। দেশের নাগরিক হিসাবে স্পষ্ট জবাব চাই। একজন ভিসি কোন নৈতিকতার বলে গুন্ডাদের চাঁদা দিলেন? শুনা যায় উনার স্বামী/সন্তান এই উন্নয়ন ঠিকাদরীর সাথে জড়িত! এই দালালদের পুনর্বাস করা হয় ভিসি হিসাবে? এসব অভিযোগ সত্য হলে ভিসির পদে থাকার কোন নৈতিক ভিত্তি উনার নেই। এখনই তাকে সম্মানী এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিৎ।

কাওসার চৌধুরী

লেখক, ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিস্ট

——-

এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব। গ্লবালভিউ২৪ এর সম্পাদকীয় নীতির সাথে প্রকাশিত মতামত মিলতে নাও পারে। তাই এই মতামতের দায়ভার সম্পর্ন লেখকের নিজের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *