এইচএসসিতে এগিয়ে, স্নাতকে পিছিয়ে

 

পৌনে দুই শ বছরের পুরোনো ঢাকা কলেজের ঐতিহ্য ছিল উচ্চমাধ্যমিকের জন্য। একসময় দেশ-বিদেশের সেরা শিক্ষার্থীরা পড়তে আসত এখানে। বছরের পর বছর নানামুখী সমস্যায় সেই ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে। বিদেশিরা আসে না। এখন আবার উচ্চমাধ্যমিকে বিশেষ নজর দিয়েছে কলেজ প্রশাসন। এতে ফল ভালো হচ্ছে। কিন্তু স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে ঠিকমতো ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। এই স্তরে সেশনজটের পাশাপাশি একাধিক বিষয়ে ফল খারাপ হচ্ছে।

 

আছে শ্রেণিকক্ষ, আবাসন ও পরিবহনসংকট। আটটি ছাত্রাবাসের মধ্যে পুরোনো পাঁচটির অবস্থা করুণ। একটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার সুপারিশ থাকলেও সেটিতেই ঝুঁকি নিয়ে থাকছে ছাত্ররা। নতুন একটি বাদে প্রতিটি ছাত্রাবাসেই আসনের চেয়ে কয়েক গুণ অতিরিক্ত ছাত্র থাকে। সার্বিকভাবে শিক্ষকের সমস্যা কম হলেও বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে প্রদর্শক না থাকায় ল্যাব ক্লাসে অসুবিধা হচ্ছে।

 

গত রোববার সরেজমিনে কলেজের এসব চিত্র পাওয়া গেছে। তিন বছর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রথম আলো কলেজটি নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল। তিন বছরের ব্যবধানে উচ্চমাধ্যমিকে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও অন্যান্য সংকট কমবেশি আগের মতোই রয়ে গেছে।

 

কলেজের অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চমাধ্যমিকের মান ফেরাতে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শুধু উচ্চমাধ্যমিকের জন্য ক্লাসের ব্যবস্থা করা, ফিঙ্গার প্রিন্টে সব শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা, শ্রেণিকক্ষে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে ক্লাস তদারক করা, ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণ কমিটি’ করে দেখভাল করা, শিক্ষার্থী নিয়মের ব্যত্যয় করলে অভিভাবকদের জানানোসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে উচ্চমাধ্যমিকের পরিস্থিতি অনেক ভালো। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সমস্যা সমাধানেও চেষ্টা চলছে।

 

ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪১ সালে। উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে বর্তমানে ছাত্র প্রায় ২০ হাজার। এর মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ে আড়াই হাজার। ১৯টি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। মোট শিক্ষক ২২৪ জন।

 

মূলত নব্বইয়ের দশকের পর থেকে কলেজটির ঐতিহ্যে ভাটা পড়তে শুরু করে। তখন থেকে কলেজটিতে ছাত্ররাজনীতি নেতিবাচকভাবে হাজির হয়। অন্যদিকে তদবিরের মাধ্যমে যেনতেন শিক্ষকেরা বদলি হয়ে আসতে থাকেন। একপর্যায়ে অবস্থা এমন হয় যে দেশের মেধাবীদের অনেকেই এই কলেজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রশাসন উচ্চমাধ্যমিকের ঐতিহ্য ফেরাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এবার দেখা যায়, কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ফল গত ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হয়েছে। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ১ হাজার ২৮২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন ১ হাজার ২৭৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯১ জন।

 

কথা হয় দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ ইবনে রাফার সঙ্গে। বিজ্ঞানের এই ছাত্র বলেন, এখন ক্লাসে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। ফাঁকি দিলে পরীক্ষা দিতে পারবেন না।

 

স্নাতক-স্নাতকোত্তরে সেশনজট

 

কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের কার্যক্রম একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। তখনো কলেজে সেশনজট ছিল। ২০১৭ সালে ঢাকা কলেজসহ ঢাকার সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। কিন্তু সেশনজট কমেনি, বরং বেড়েছে। সদ্য স্নাতক শেষ করা ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ফেরদৌস রহমান বলেন, ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন। চার বছরের কোর্স শেষ হতে লেগেছে প্রায় ছয় বছর।

 

আবার কোনো কোনো বিষয়ে ফল বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটছে। এবার স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষে রসায়নে ৫৯ জন নিয়মিত ছাত্র পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন একজন। মানোন্নয়ন ও অনিয়মিত হিসেবে ৩৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন তিনজন।

 

একাধিক ছাত্র বলেন, স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরে ক্লাস হয় খুব কম। অবশ্য ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ওয়াসিম হায়দার বলেন, তাঁদের মতো যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের ক্লাস নিয়মিতই হচ্ছে। গত নভেম্বরে তাঁদের প্রথম বর্ষ পরীক্ষা হয়েছে। আগামী নভেম্বরে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা হওয়ার কথা। অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদ আশা করছেন, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সমস্যা পুরোপুরি কেটে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *