প্রতি বছরে পেশি-হাড়ের চিকিৎসায় ব্যয় ৫ হাজার কোটি টাকা

নিউজ ডেস্কঃ  মাংসপেশি ও হাড়সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। বছরে এই খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট হিসাব প্রকাশ করেছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠান বলছে, পুরুষের তুলনায় নারীদের চিকিৎসা ব্যয় বেশি।

‘রোগভিত্তিক খরচের হিসাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে চিকিৎসা ব্যয় সম্পর্কে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় বছরে ৩৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে নারীর চিকিৎসায় খরচ হয় ২০ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। আর পুরুষের চিকিৎসায় খরচ হয় ১৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কী পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছিল, তা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বড় দাগে এ রকম ২১টি শ্রেণির রোগের ব্যয় নিয়ে এই খরচের হিসাব বের করা হয়েছে।

দুই ধরনের উৎস থেকে তথ্য নিয়ে রোগের পেছনে খরচের এই হিসাব বের করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে: ২০১৪-১৫ সালের বাংলাদেশ জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যয় হিসাব, ২০১৬-১৭ সালের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ব্যয় উপাত্ত, আন্তর্জাতিক বাজার জরিপ অনুসারে ওষুধের দামের তথ্য, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র জরিপ, ভর্তি ও বহির্বিভাগের রোগী জরিপ। সুনির্দিষ্ট রোগের পেছনে খরচের হিসাব বের করার জন্য আরও তিনটি পন্থা অবলম্বন করা হয়: সরকারি হাসপাতালের তথ্য, বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারের তথ্য এবং ফার্মেসির ওষুধ বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ।

গতকালের অনুষ্ঠানের পর স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক মো. শাহাদত হোসেন মাহমুদ বলেন, ‘রোগ ধরে ধরে এ ধরনের খরচের হিসাব দেশে এটাই প্রথম। এই হিসাব থেকে পরিকল্পনাকারীরা বুঝতে পারবেন কোন রোগের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব বা মনোযোগ দেওয়া উচিত।’

কোথায় কত খরচ

২০১৫ সালে চলতি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ছিল (শিক্ষা ও গবেষণা ব্যয় ছাড়া) ৪১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় খরচ ছিল ৩৯ হাজার ৮ কোটি টাকা।

পেশি ও হাড়ের রোগের শ্রেণিতে অনেক ধরনের রোগ আছে। শরীরের বিভিন্ন হাড়ে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রোগ হয়। যেকোনো আঘাত একটু গুরুতর হলেই শরীরের যেকোনো হাড়ের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, ‘পেশি ও হাড়ের রোগের ব্যাপ্তি অনেক বেশি, এসব রোগের চিকিৎসার বিকল্প বেশি এবং অস্ত্রোপচারের মতো ঘটনায় ব্যয় অনেক বেশি। সে কারণে রোগের শ্রেণিভিত্তিক হিসাবে এই খাতে জাতীয়ভাবে ব্যয়ও বেশি দেখা যাচ্ছে।’

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরচ হয় পরিপাকতন্ত্রের রোগে। এই খাতে খরচ হয় ৫ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে আছে শ্বাসতন্ত্রের রোগে খরচ, এই খাতের খরচ ৩ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। রক্ত পরিবহনতন্ত্র ও সংক্রমণ সংশ্লিষ্ট রোগের অবস্থান চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে। এই দুই শ্রেণিতে খরচ যথাক্রমে ৩ হাজার ৫৪২ কোটি এবং ৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা।

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের চিকিৎসায় বেশি খরচ হচ্ছে। অন্যদিকে খরচের ৪৩ শতাংশ যায় ওষুধের পেছনে।

এই হিসাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘নারীর চিকিৎসায় খরচ বেশি এবং প্রজননক্ষম বয়সে চিকিৎসায় খরচ বেশি—এ দুটো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। এই দুটি ক্ষেত্রে কেন খরচ বেশি তা জানা গেলে ভবিষ্যতে নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন সহজ হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *