যে খাবারগুলি পুনরায় গরম করে খাওয়া বিপজ্জনক

বীথি সাইমূম:: 

আমরা অনেকেই আছি যাঁরা সুস্বাস্থ্যকর খাবারের চেয়ে মুখরোচক খাবারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর একারনে নানান রকমের সমস্যার সাথে সন্ধি ঘটে আমাদের।

দৈনন্দিন ব্যস্ততায় প্রতিদিন রান্না করে খাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে রান্না করা খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করে খাই আমরা। তবে কিছু খাবার ফ্রিজে রেখে খাওয়া অনুচিত। কারণ এগুলো পুনরায় গরম করলে পুষ্টিগুণ হারিয়ে ফেলে। শুধু তাই নয়, অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে এসব খাবার। এগুলো খেলে হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। কিন্তু কিছু খাবার আছে যা গরম করে খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এই খাবারগুলি রান্না করার পর গরম গরম খেয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন ডাক্তাররা। এসব বিপজ্জনক খাদ্যের তালিকায় রয়েছে বাঙালিদের প্রিয় বেশ কিছু খাবারও।

★ যে সকল খাবার পুনরায় গরম করলে মন্দের পরিমান বেশি থাকে সেগুলো হলোঃ-

 

মুরগির মাংসঃ- মুরগির মাংসে যে প্রোটিন থাকে তার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। রান্না করা মুরগির মাংস গরম করলে এই প্রোটিনের অণুগুলি ভেঙে যায়। তাই গরম করা মাংস খেলে পেটের সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া অনেক সময় রান্নার পরেও স্যালমোনেলা নামের এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মুরগির মাংসের অংশবিশেষে রয়ে যায়। রান্না করা মুরগির মাংস যদি মাইক্রোওয়েভে গরম করা হয় তাহলে এই ব্যাকটেরিয়া মাংসের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে

 

শাকঃ- যে কোনো রকমের শাক হোকনা কেন তা গরম করে খেলে পুষ্টিগুণ চলে যায় আর গ্যাস হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে। যে কোনও শাক-পাতাতেই নাইট্রেট থাকে। যখন ঠান্ডা হয়ে যাওয়া রান্না করা শাকপাতা পুনরায় গরম করা হয় তখন ওই নাইট্রেট থেকে নাইট্রোস্যামাইন নামের এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যা ক্যান্সারের বীজ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া নাইট্রোস্যামাইন যেমন বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেনের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, তেমনই বাচ্চাদের মধ্যে প্রবল শ্বাসকষ্টেরও কারণ হতে পারে।

 

চাঃ- চা কখনোই বার বার গরম করে খেতে নেই। এতে চা পেটে প্রচুর গ্যাস করে।

 

ভাতঃ- অনেক পুষ্টিবিদদের মতে ভাত গরম করে না খাওয়াই ভালো। তবে আমরা অনেকেই ঠান্ডা ভাত খেতে পছন্দ করিনা এক্ষেত্রে ভাত প্রয়োজন অনুপাতে বার বার রেঁধে খেতে পারেন আবার হটপটেও রাখলে গরম থাকে। সাধারণত ভাত রান্না করার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া হয় না। উনুন থেকে নামানোর পরে ভাত যদি ঘরোয়া তাপমাত্রাতেই রেখে দেয়া হয় তাহলে ভাত যত ঠান্ডা হতে থাকে তত ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে থাকে। সেই ঠান্ডা হওয়া ভাত যদি আবার গরম করা হয় তবে ব্যাকটেরিয়াগুলির ক্ষতিকারক প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়।

 

ডিমঃ- ডিম এমন একটা খাবার যা ধোয়া ওঠা গরম গরম না খেলে ঠান্ডা হলে বিশ্রী স্বাদ লাগে। আবার বারবার গরম করলেও পুষ্টি চলে যায় এবং খেতেও খুব একটা স্বাদ থাকেনা। ডিম হচ্ছে এমন একটি খাবার যা উচ্চ তাপের সংস্পর্শে এলে বিষাক্ত হয়ে যায়। তাই স্ক্র্যাম্বল এগ বা সেদ্ধ ডিম পুনরায় গরম করা কখনই উচিত নয়। কারন তা খেলে আমাদের হঠাৎ করেই পেট খারাপ হতে পারে।

 

শালগমঃ- শালগম যে খাবারে ব্যবহার করবেন তা বার বার গরম করে খেলে তা বিষাক্ত হয়।

 

দুধঃ- দুধ বার বার গরম করলে এতে ঘনত্ব বাড়ে আর তা বেশিই ক্ষতিকর স্বাহ্যের পক্ষে। বিশেষ করে যাঁরা ডায়েট করে তাঁদের একবারের বেশি গরম না করাই ভালো।

 

মাশরুমঃ- মাশরুম বার বার গরম করে খাওয়া পেটের জন্য ক্ষতিকর। মাশরুম গরম করে খাবেন না কখনো। যেদিন রান্না করবেন অবশ্যই সেদিনই খেয়ে ফেলবেন। বাসি মাশরুম গরম করলে মাশরুমের প্রোটিনের পরিবর্তন ঘটে। এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।

 

আলুঃ- আলুর তরকারি পুণরায় গরম করে খেলে পুষ্টির চেয়ে ক্ষতির আশংকাই বেশি রয়। আলুর ক্ষেত্রে সমস্যাটি অনেকটা ভাতের মতোই। রান্না করা বা সিদ্ধ করা আলু ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিলে তাতে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। সেই ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিকরতা বৃদ্ধি পায় আলু গরম করার সময়। এর পরিণামে পেটে মারাত্মক ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।

 

বিট : এই সবজিটিতেও রয়েছে পালং শাকের মতো নাইট্রেট যা পুনরায় গরম করা অত্যন্ত বিপদজনক। তবে এর মানে এই না যে পরের দিন এটা আর খাওয়া যাবে না শুধু মাত্র গরম না করে খেলেই হবে।

 

সেলারি : এটিও রান্নার পর পুনরায় আর গরম করা উচিত নয় কারন এতে থাকা নাইট্রেটের শতকরা হারের জন্য। তবে সেলারি ডাটা পুনরায় গরম করলে এর নাইট্রেট পুরোপুরি নাইট্রেইটে রূপান্তরিত হয়। শরীরে বেশি মাত্রায় নাইট্রেইট প্রবেশ করলে তা মেথিমোগ্লোবিনেমিয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এটি এমন একটি পর্যায়, যেখানে নাইট্রেইটে শরীরের রক্তে হেমোগ্লোবিন ও আয়রনের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করে জীবন্ত কোষে অক্সিজেন বহনে বাধা দেয়। যা শারীরিক জটিলতা থেকে শুরু করে মৃত্যুও ঘটাতে পারে।  তবে যেহেতু স্যুপ বা এই ধরনের রান্নাতেই সাধারণত সেলারি ব্যবহার করা হয় তাই যদি পরে গরম করতেই হয় তাহলে সেই রান্না করা খাবার গুলো থেকে সেলারি ফেলে দিয়ে পুনরায় গরম করে খেতে পারেন।

 

শালগম : উচ্চ মাত্রার নাইট্রেট থাকে শালগমেও। তাই এটিও পুনরায় গরম করা উচিত নয়, পরে খেতে হলে ঠাণ্ডা খাওয়াই উত্তম। তাই এখন থেকে যেকোনো খাবার সংরক্ষনের উদ্দেশে রান্না করে ফ্রিজে রাখার সময় এবং তা পুনরায় গরম করার সময় একবার ভেবে নেবেন। আর যদি এখানে উল্লেখিত খাবার গুলো তার মাঝে রয়েই যায় তাহলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পুনরায় গরম না করেই খেতে হবে।

 

পোড়া বা খাবার তেলঃ- আমরা অনেক সময় কোনোকিছু ভাজার পর অতিরিক্ত তেল ফেলে না দিয়ে রেখে দিই সেটি দিয়ে অন্য কোনো তরকারি রাঁধতে। এটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।  এই তেল দিয়ে রান্না খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে সাথে গ্যাসের সমস্যা তো থাকছেই। এ ভাবে গরম করা তেল স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *