যে কারণে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল

ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন খ্রিষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক। ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে চিকিৎসক হিসেবে তখন তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।

বন্দী অবস্থায় ভ্যালেন্টাইন এক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল।

ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যু সম্পর্কিত আরও একটি গল্পের প্রচলন রয়েছে। জানা যায়, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন যখন রাজার কারাগারে বন্দি অবস্থায় ছিলেন, তখন তাকে দেখার জন্য অনেকেই সেখানে আসত। তারা ভ্যালেন্টাইনের জন্য বিভিন্ন উপহার ও ফুল নিয়ে আসত। তাদের মধ্যে কারা রক্ষকের অন্ধ কন্যাও ছিলেন। যার চিকিৎসা করার কারণে ভ্যালেন্টাইনকে প্রাণ দিতে হয়।

বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ রয়েছে, অন্ধ মেয়েটি ও ভ্যালেন্টাইন না-কি অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতেন। একসময় ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির প্রেমে পড়ে যান। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে কারাগারে আসতেন অন্ধ মেয়েটি।

এরপর আকস্মিকভাবে একদিন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায় মেয়েটি। এরপর ভ্যালেন্টাইন ও মেয়েটির প্রেমের গল্প ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যে। রাজা যখন এ খবর শুনতে পান; তখন তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

আরও এক কাহিনী অনুসারে, নিষ্ঠুর রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস বরাবরই দাম্ভিক ছিলেন। অল্পতেই রেগে যেতেন তিনি। তার ছিল বিশাল সৈন্যবাহিনীর। উগ্র আচরণের কারণে কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি হত না। এরপর সম্রাট এক কৌশল ফাঁদলেন, তিনি রাজ্যে ঘোষণা দিলেন যুবকরা যেন কোনোভাবেই নারীদের কাছে না যায়।

যুবকরা যেন বিয়ে কিংবা ভালোবাসা থেকে দূরে থাকে। সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞায় সেখানকার অবিবাহিত নারী-পুরুষরা ক্ষেপে যায়। তবে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন না-কি এ নিদ্ধান্ত মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াসকে ভালোবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন।এরপর তিনি গির্জায় গোপনে যুবক-যুবতীদের বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন। এ খবর সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতার করে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনকে হত্যা করা হয়। এমন অনেক কাহিনী রয়েছে কিংবদন্তী ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যু নিয়ে।

এরপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন। বর্তমানে পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসে। কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশেও বর্তমানে এই দিবস পালন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির মিশ্রণে ভিন্নভাবে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ নামে এটি পালিত হয়।

তবে ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সেদেশের আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *