‘চিত্রাঙ্গদা’ অবলম্বনে চীনা শিল্পীদের ‘চিত্রা’

এক বসায় পরপর দুটি নাটক দেখা গেল, রবীন্দ্রনাথকে পাওয়া গেল চীনা ভাষায়। সন্ধ্যার আগেই শেষ হলো দুটি নাটকেরই প্রদর্শনী। রোববার নাটক দেখতে গিয়ে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হলো ঢাকার দর্শকদের।

 

চীনা সাংস্কৃতিক মাস উপলক্ষে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে রোববার বিকেলে মঞ্চস্থ হয়ে গেল চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ‘চিত্রা’ এবং ঢাকার লোক নাট্যদলের ‘রথযাত্রা’। তবে দর্শকের জন্য নতুন পাওয়া হলো চীনা ভাষায় রবীন্দ্রনাথ, ‘চিত্রা’ নাটকে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকের ভাষা, কাঠামো, চরিত্র বিভাজন-দেহ সঞ্চালন-জীবন সংযোগে চিরায়ত রীতি ভেঙে নতুন নাট্যধারায় নিরীক্ষা করেছেন চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হৌ ইং চুয়ে। ‘রক্তকরবী’, ‘তাসের দেশ’-এর পর হৌ ইং চুয়ে তাঁর নতুন নাটক ‘চিত্রা’-তেও বজায় রেখেছেন সেই ধারা।

 

১৮৯২ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘চিত্রাঙ্গদা’ নাটক প্রকাশ করেন। এই নাটকের বিষয়বস্তু মহাকাব্য ‘মহাভারত’ থেকে নেওয়া হয়েছে। নাটকে বীর অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদার প্রেমের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের সেই চিত্রাঙ্গদা অবলম্বনেই নির্মিত হয়েছে চীনের ‘চিত্রা’। অধ্যাপক হৌ ইং চুয়ে মনে করেন, মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা ও কবিগুরুর লেখা নাটকের চিত্রাঙ্গদার মধ্যে অমিল আছে। হৌ ইং চুয়ে বলেন, ‘মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা ছিলেন একজন অপরূপা, লাবণ্যময়ী। আর রবীন্দ্রনাথের নাটকে চিত্রাঙ্গদার বিপরীত চরিত্র। তিনি লাবণ্য বোঝেন না; ভয় কী তা-ও তিনি জানেন না। সারা দিন তিনি শুধু তির-ধনুক নিয়ে থাকেন।

‘চিত্রা’ নাটকে রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’র বহু অধ্যায় বেছে নিয়েছেন অধ্যাপক হৌ ইং চুয়ে। চরিত্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুজন অভিনেতাকে নিয়ে একটি চরিত্র করিয়েছেন। হৌ ইং চুয়ে বললেন ‘রবীন্দ্রনাথের নাটক সৃষ্টির ক্ষেত্রে এটাই আমার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। “রক্তকরবী”, “তাসের দেশ” থেকে “চিত্রা” নাটক সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমি কমবেশি এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছি।’ নাটকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বেশ কিছু লম্বা সাদা কাপড়, পোশাকেও ছিল সাদার আধিক্য। নাটকের চরিত্রগুলোর বাস্তবতা সংযোগে এটি ভূমিকা পালন করছে বলে জানান এই চীনা নির্দেশক।

 

‘চিত্রা’ নাটকটি বাংলা থেকে চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছেন পাই থাই ইউয়ান। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন লু চিয়া হুয়া, চিয়াং চাও লে, লাই হাই ফোং, লি লিন খুন ও লিউ চিংই। পাই থাই ইউয়ান বলেন, ‘বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি বাংলাদেশের সংস্কৃতি। আমাদের লক্ষ্য অভিনয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চীনের সংস্কৃতির উপাদানের সঙ্গে বাংলা সংস্কৃতির সমন্বয় করে দুই দেশের সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ বিকাশকে আমরা দৃশ্যমান করতে চাই।’

 

নাটকটি দেখতে এসেছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতিসচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বিনা মূল্যে দুটি নাটক দেখার সুযোগ পেয়েছেন দর্শক। প্রথম ‘চিত্রা’ প্রদর্শনীর পর দ্বিতীয় পর্বে মঞ্চস্থ হয় ‘রথযাত্রা’। লোক নাট্যদলের পরিবেশনায় ‘রথযাত্রা’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহারিয়ার কামাল, আবু বকর বকশী, জিয়াউদ্দিন শিপন, বিপুল কুমার দাস, মাস্উদ সুমন, শাহারিয়ার কামাল, জুলফিকার আলী, আজিজুর রহমান সুজন, শিশির কুমার রায়, ফজলুল হক, জুলফিকার আলী প্রমুখ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *