পহেলা ফাল্গুনসহ তিন দিবসে চাঙা ফুলের বাজার

নিউজ ডেস্কঃপহেলা ফাল্গুনসহ তিন দিবসকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে উঠেছে ফুলের বাজার। আজ ঋতুরাজ বসন্ত বরণে আনন্দে মাতবে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ। বাসন্তী রঙের শাড়িতে সাজবে তরুণীরা। মাথায় গুঁজবে বাহারি ফুল। কাল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রেমিক প্রেমিকাকে উপহার দেবে লাল গোলাপ।

এ ছাড়া আসছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের স্মরণে সবার হাতে থাকবে ফুল। প্রতি বছরই দিসবগুলোতে অন্যতম অনুষঙ্গ হিসাবে থাকে ফুল। এ সময় ফুলের চাহিদা সারা বছরের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। রমরমা হয়ে

ওঠে বাজার। মাঠপর্যায়ে চাষি থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার এখন চাঙা।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার (ফুল) সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশে ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এ কারণে বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কৃষক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দেশে ২০০-২৫০ কোটি টাকার ফুলের বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে যশোরের গদখালি ও সাভারের সাদুল্লাহপুরসহ কয়েকটি স্থানে ৮০-৯০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। বাকিটা হবে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানে।

বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বেশি হওয়ায় এবং আমদানি করায় বাহারি রঙের ফুল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে জারবেরা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, কসমস, ডালিয়া, টিউলিপ, কালো গোলাপ, ঝুমকা লতা, গাজানিয়া, পামেরিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। দামও হাতের নাগালে। কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলোয় চাহিদা বেশি থাকায় অতি মুনাফার লোভে বেশি দামে ফুল বিক্রি করেন অনেক ব্যবসায়ী।

সাভারের সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের (গোলাপ গ্রাম) ফুলচাষি নাসির যুগান্তরকে বলেন, এবার ফুল বিক্রি ভালো হচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে ফুল নিয়ে যাচ্ছেন। ৩-৪ দিন আগে থেকেই পাইকাররা আসতে শুরু করেছেন। তরুণ-তরুণীরাও ফুল কিনতে ভিড় করছেন।

যশোরের গদখালি ইউনিয়নের ফুলচাষি আনজু সরকার বলেন, ফেব্রুয়ারিতে ফুল বেশি বিক্রি হয়। তাই লাভও বেশি হয়, যা বছরের অন্য সময় হয় না। এ সময় ফুল চাষিদের মনে আনন্দ থাকে। যে দামে মাঠ থেকে আমরা ফুল বিক্রি করি, তা খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুণ বেশিতে ক্রেতাদের কিনতে হয়। এতে লাভ যা করার খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা করেন।

এদিকে সারা দেশের খুচরা বিক্রেতারা রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট ও আগারগাঁওয়ে পাইকারি মার্কেট থেকে ফুল কিনে থাকেন। রাজধানীর এসব বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবার ও শনিবার বিক্রি অনেক বেশি হয়। আর বিশেষ দিবস যেমন পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে বিক্রি হয় দেদার।

শাহবাগের পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের ফুল দোকানে তুলেছেন। স্থায়ী ও ভাসমান ফুল ব্যবসায়ীরা ভিড় করছেন এসব দোকানে। ফুল কিনছেন সাধারণ মানুষও। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাহবাগের অনন্যা পুষ্প বিতানের মালিক লোকমান হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শাহবাগসহ অন্যান্য বাজারে ট্রাকভর্তি ফুল আসছে। এরই মধ্যে তিন দিবসকে ঘিরে ফুল বেচাকেনাও জমে উঠেছে। এ বছর খুচরা ও মৌসুমি বিক্রেতারা আগেভাগে ফুল কিনতে এসেছেন। যার কারণে কিছু দিন আগে থেকে ফুলের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে।

শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে মানভেদে একটি গোলাপ পাঁচ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা ১৫-২০ টাকা, গাডিওলাস ১০-১৮ টাকা ও রজনীগন্ধা ৬-৮ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এ ছাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার গাঁদাফুল। তবে খুচরা বাজারে একই ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে।

খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, একটি গোলাপ ২৫ থেকে ৪০ টাকা, আর একটু বড় সাইজের গোলাপ ৫০-৮০ টাকা, জারবেরা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাডিওলাস ২০ থেকে ৩৫ টাকা ও রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ১০-১৫ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

আর গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো তোড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকায়, যা অন্য সময়ের চেয়ে দাম একটু বেশি।

মৌসুমি ফুল ব্যবসায়ী জামিল যুগান্তরকে বলেন, পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আগে থেকেই ফুল সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়েছি। এবার ৩০-৪০ হাজার টাকার ফুল কিনব। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুমনা বলেন, বসন্তবরণ উপলক্ষে ফুল কিনতে এসেছি। এবার ফুলের দাম একটু বেশি বলে মনে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *