প্রিয়া সাহার বক্তব্য বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বাস্তব চিত্র : যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের বিবৃতি

নিউইয়র্ক : সম্প্রতি প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশের নির্যাতিত, বিপন্ন সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েছেন; আর, এই সাহায্যটা তিনি চেয়েছেন যাতে সংখ্যালঘুদের আর দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়ে সেখানে অবৈধ ভাবে বসবাস করতে না হয় তার জন্য। এই সত্যটি প্রকাশ্যে বলায়, বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে’ বিচারের দাবি ওঠেছে, মামলা হয়েছে, কুরুচিপূর্ণ হুমকি দেওয়া হচ্ছে, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যা বলেছেন তা সর্বাংশে সত্য। তাই, যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তাঁর বক্তব্যকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাচ্ছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সভাপতিমন্ডলী ও সাধারণ সম্পাদক, নিউইয়র্ক প্রেরিত বিবৃতিতে এ দাবী করা করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিপক্ষের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ওয়াশিংটনে এসে আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তো বটেই, খোদ প্রধানমন্ত্রীও যে অভিযোগ করেছেন এবং নিরাপত্তার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেছেন সেটা তো সুবিদিত। এর জন্য কারো রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে বিচার হয়নি। হঠাৎ প্রিয়া সাহাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে হয়রানি করা হচ্ছে কেন! প্রিয়া সাহা তো মিথ্যাচার করেন নি। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের কোন বিচার হয় না, তাই তিনি সাহায্য চেয়েছেন। নিজের মাতৃভূমিতে মানবাধিকার এবং সম-নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাস করার অধিকার লঙ্ঘিত হলে, ন্যয় বিচার না পেলে, সেটা বহির্বিশ্বকে অবহিত করাটাই স্বাভাবিক, যেমন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ করে থাকেন। আর, সেটা তো কোন অপরাধই নয়, রাষ্ট্রদ্রোহ বলা তো হাস্যকর ব্যাপার।

বিবৃতিদাতারা বলেন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য এবং অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া মানুষের পরিসংখ্যান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে- বলা হচ্ছে এর সবই মনগড়া, মিথ্যা। প্রিয়া সাহা দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া সংখ্যালঘু মানুষের সংখ্যাটা সম্ভবত: ভুল করেই অনেক কম বলে ফেলেছেন। বাস্তব অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, বলা হচ্ছে তিরিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যাবে। ১৯৪৭ সাল থেকে কত সংখ্যালঘু দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে সে হিসাব আমরা চাইছি না; আমাদের বক্তব্য হল, ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কিংবা পশ্চিম বঙ্গে মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে হার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে ও সেই হারটা একই হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা না হয়ে উক্ত সময়ে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের জনসংখ্যা ৫০% কমে গেল কেন?! প্রিয়া সাহার বক্তব্য মিথ্যে বলে দাবি করার আগে হিসেব কষে উক্ত প্রশ্নের জবাব দিতে বলি।

বিবৃতিদারা আরো বলেন, উচ্চ কণ্ঠে দাবী করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ বিশেষ। এই দাবী যারা করছেন তাঁদের কাছে আমাদের বিনীত জিজ্ঞাসা: একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা করা হল কেন; হাজার হাজার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ মিছিল করে গিয়ে সংখ্যালঘুদের গ্রামকে গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেয় কেন, যেমনটা করেছে যেমন রামুতে, নাসির নগরে; আমাদের প্রশ্ন: যারা সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ধ্বংস করে, তাঁদের মেয়েদের ধর্ষণ করে, তাদের বিচার হয় না কেন- এমনকি জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন তদন্ত করে যাদের সনাক্ত করে দিল তাদের পর্যন্ত বিচার হ’ল না কেন; যুদ্ধবিধ্বস্ত রমনা কালীবাড়ি ফেরৎ পেতে আমাদের কয়েক যুগ চেষ্টা করতে হল কেন; দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সকল পাকিস্তানী কালা কানুন বাতিল হল কেন কিন্তু শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল হল না কেন; আর, সুপ্রীম কোর্ট সেটা ১৯৭৪ সালে বাতিল করে দেওয়ার পরও সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করে সংখ্যালঘুদের লক্ষ লক্ষ একর সম্পত্তি লুটপাট করে নেয়া হল কেন; দেশে ইসলিামিক ফাউন্ডেশন হল কিন্তু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ফাউন্ডেশন হল না কেন; পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী বাঙালী দখলদার পাঠিয়ে ওদের সেখান থেকে উৎখাত করা হল কেন: এবং ১৯৯৬ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন আজও হল না কেন; জনসংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালঘুদের সেনাবাহিনীতে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডিপ্লোমেটিক সার্ভিস সহ সর্বত্র দেখিনা কেন? আমরা জানতে চাই, কেন প্রিয়া সাহার বাড়িতে আগুন দেয়া হল; তথাকথিত ওয়াযের নামে সংখ্যালঘু মানুষকে ইতরের ভাষায় গালাগালি করা হয় কেন, কী কারণে পাঠ্য বই থেকে সংখ্যালঘু লেখকদের ঝেটিয়ে বিদায় করা হল। এগুলো কি সামপ্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন? এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারলে, চুপ করে থাকাই কি শ্রেয়: নয়? সত্যকে ঢেকে রাখার কোন উপায় নেই। তাই, প্রিয়া সাহাকে আপনারা অনেক কিছুই বলতে পারেন, কিন্ত উনি দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন, বানোয়াট কিছু বলেছেন সেটা বলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *