ব্যাংকার থেকে নায়ক হয়ে যিনি জিতেছিলেন কোটি হৃদয়

আমি তাঁকে ডাকতাম ভদ্র নায়ক বলে। শুধু আমি কেন, পুরো চলচ্চিত্রের মানুষই তাঁকে ভদ্র মানুষ বলে জানেন।’ ২০১০ সালে ১৫ জুলাই বুলবুল আহমেদের মৃত্যুর পর প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেন চিত্রনায়ক রাজ্জাক।

 

প্রকৃতির নিয়মে বুলবুল আহমেদ ও রাজ্জাক, কেউ এখন নেই। তাঁরা চলে গেছেন চিরদিনের মতো। মৃত্যুকে জয় করা যায় না, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে মৃত্যুই শেষ কথা নয়। তাঁরা বেঁচে থাকেন তাদের কাজে, প্রিয়জন আর অনুসারীদের স্মৃতিতে। ফিরে আসেন বারবার। আজ ১৫ জুলাই যেমন ফিরে এসেছেন বুলবুল আহমেদ। ২০১০ সালের এই দিনে যার মৃত্যু হয়।

 

বেদনা মিশ্রিত ভালোবাসায় পরিবারের সদস্য, অনুরাগীরা স্মরণ করছেন বুলবুল আহমেদকে। খবরের কাগজে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজ ফুটে উঠছে চিরচেনা বুলবুল আহমেদের মুখখানি। চশমা চোখে গোলগাল মুখখানি। কোনটিতে স্মিত হাসি। যেন তিনি এখনো জাগতিক ভ্রমণের পথিক, হাঁটছেন নায়কের মতো। বাংলার নায়ক, যাকে বলা হতো ‘মহানায়ক’। সবাই ডাকতেন ‘দেবদাস’।

 

কণ্ঠস্বর ছিল বলিষ্ঠ, সুদৃঢ়। উত্তম কুমার, দিলীপ কুমারের বেশ ভক্ত ছিলেন বুলবুল আহমেদ; তাঁদের আদলে চুলের ছাঁট দিতেন। ছোট থেকে বড় হওয়া অবধি এই স্টাইল অনুসরণ করেছেন। সাদাকালো দেবদাস যুগ পেরিয়ে রঙিন মহানায়ক চলচ্চিত্রের মতোই তিনি সময় থেকে সময়কে জয় করেছেন স্বমহিমায়। সুদর্শন নায়ক বলতে যে কয়জন সত্তর-আশির দশকে বাঙালি দর্শকের মন জয় করেছেন, তরুণীদের স্বপ্নের মানুষ হয়েছেন, তাদের অন্যতম বুলবুল আহমেদ।

 

বছর ত্রিশেরও আগের কথা। আশি দশকের শেষের দিকে। পুরান ঢাকার হাটখোলা রোডের এক বাসায় থাকতেন বুলবুল আহমেদ। ৮৬ সাল থেকে এই এলাকায় সপরিবারে তাঁর বাস। প্রায় দেখতাম তাঁকে। তখন তিনি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় নায়ক। অথচ কী সাধারণ জীবনযাপন! সেই সময়কার হাটখোলা এলাকার এক পান দোকানির সঙ্গে কথা হলো আজ সোমবার। বুলবুল আহমেদের প্রসঙ্গ আসতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন সোহরাব হোসেন। বললেন, ‘আহা, দেবুদা! খুব একটা পানের অভ্যাস ছিল না, তবে আমার দোকান থেকে একটা পান খেতেন। সব সময় কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন। কোনো দেমাগ ছিল না লোকটার।’

 

রাজ্জাকের সুরেই গতকাল কথা বললেন বর্ষীয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন এই অভিনেতা এক তরুণ সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বুলবুল আহমেদ শুধু ভদ্রলোকই নন, একজন প্রকৃত মানুষ ছিলেন। এখন তো তাঁকে সরাসরি পাওয়া যাবে না, তাঁর সিনেমা দেখো।’ এ সময় এটিএম শামসুজ্জামানের হাতে ছিল বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পদক, চোখে ছিল অশ্রু।

 

বিটিভির আলোচিত নাটক দক্ষিণের জানালা, এই সব দিনরাত্রিতে বুলবুল আহমেদের সহশিল্পী ডলি জহুর প্রথম আলোকে দেওয়া স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘বেশ পরিপাটি মানুষ ছিলেন বুলবুল ভাই। সাবলীল ভঙ্গিতে কথা বলেন। নিপাট ভদ্র লোক, কাজের ফাঁকে মজা করতেন, গল্প শোনাতেন।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *