এই ছবিটা আঁকার ইচ্ছে ছিল বহুদিনের। শেষমেশ শখ পূরণ করলাম। (‘সিন্ধুপারে’ ‘On The Edge Of The Sea’. Inspired by the poem of Rabindranath Tagore. Acrylic on canvas. 2017) ছবিটা আঁকার পিছনে প্রেরণা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা। তার আগে অন্য কথা

আমাকে প্রায়ই শুনতে হয় একটি প্রশ্ন- আপনি শুধু মেয়েদের ছবি আঁকেন কেন? সাধারণত আমার উত্তরটা সরাসরি হয়ঃ- ‘কারণ ছেলেদের ছবি আঁকতে পছন্দ করিনা, তাই।’ কিন্তু গুঢ় কারণ অন্যখানে। আমি সৌন্দর্যর চর্চা করি, তাই মেয়েদের ছবি আঁকি। কিন্তু এই উত্তরেও আপনাদের ভুল বোঝার অবকাশ আছে। আমি যে সৌন্দর্যের কথা বলছি সে সৌন্দর্য আপনাদের সমাজের সংজ্ঞায়িত সৌন্দর্য নয়। সে সৌন্দর্য শুধুমাত্র মানুষ নামক এই প্রাণীর মুখের সৌন্দর্য নয়। বাতাসের দোলায় যখন গাছের পাতা নড়ে তখন সে দোলায় আমি একটি মেয়ের মুখ দেখতে পাই, যখন রঙধনু দেখে ভাল লাগে, বিড়ালের লাফালাফি দেখে আনন্দ পাই, একটি বাচ্চা ছেলের হামাগুড়ি দেখে হাসি, অথবা স্বামী-স্ত্রী হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে -এই দৃশ্য দেখে প্রশান্তি লাভ করি তখন এসব কিছুর মাঝে আমি একটি মেয়ের মুখ দেখতে পাই। আর সেটাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আঁকি। মোৎসার্টের বাজনা শুনলে, ভাল এককাপ চায়ে চুমুক দিয়ে, একটা ভাল উপন্যাস পড়ে, জঙ্গলে পাহাড়ের রাস্তায় হেঁটে যে আনন্দ পাই, তাতে আমি একটি মেয়ের উপস্থিতি অনুভব করি। একদল ছেলে গাছের ডাল থেকে ঝুলতে ঝুলতে পুকুরে ঝাঁপ দিচ্ছে – এই দৃশ্যের পিছনে আমি একটি নারীর মুখ দেখতে পাই। ভোরে ঘুম ভেঙে উঠে যখন একটা নতুন দিন পাওয়ার আনন্দ জাগে মনে, সেই আনন্দে আমি একটি নারীর ভালবাসা দেখি। জীবন আমাকে টানে নারীর মত, মায়ের মত, প্রেমিকার মত, কন্যার মত, নারীবন্ধুর মত।

এটাই আমার কাছে সৌন্দর্য। আর সেটাই আমি আঁকি।
এ হচ্ছে আনন্দের কথা। কারণ জীবনটা শুধুমাত্র ভালবাসার আর আনন্দের। আবার জীবনে যেখানে বেদনা, দুঃখ আসে, সেখানেও আমার ওই নারী, কারণ জীবনে যত বেদনা তা ওই নারীর বিরহের কারণে। সেটাও আঁকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *