ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ : বাংলাদেশের বিদায়, ভারত সেমিতে

বামিংহাম থেকে : শুরুতে টস হারলেন মাশরাফি। মোস্তাফিজ ছাড়া বল হাতে তেমন সুবিধা করতে পারলেন না টাইগার বোলাররা। ক্যাচ মিসের সঙ্গে ছিল মিস ফিন্ডিংও। ব্যাটিংয়ে ছিল টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। সবকিছু মিলিয়ে এজবাস্টনের হতাশার এক দিনই পার করলো বাংলাদেশ। ৩১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭৯ রানের সময় আউট হলেন সাকিব। ৬ উকেট হারিয়ে তখন বড় ব্যবধানেই হারের শঙ্কা! কিন্তু ভারতের রক্ত ঠান্ডা করে দিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। প্রথমে সাব্বিরকে নিয়ে ৬৬, এরপর রুবেল হোসেনের সঙ্গে ২৯ রানের জুটি গড়লেন।

 

শেষ ১৪ বলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৯ রান। অপরপ্রান্তে সাইফুদ্দিন অপরাজিত ৫১ রানে, তখনই জাসপ্রিত বুমরাহর দুই বলে রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজ বোল্ড হলে বামিংহামের এজবাস্টন স্টেডিয়ামে স্বপ্নের সমাধি ঘটে বাংলাদেশের। ২৮ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘন্টা বেজে যায় বাংলাদেশের, আর ভারত পাকা করেনি সেমিফাইনাল। আজ নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হবে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের। আগে সেমিফাইনালে নিশ্চিত করে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। অপর সেমিফাইনালিস্ট হতে পারে নিউজিল্যান্ড।

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ ৩’শ করে জিতেছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছিল টাইগাররা। তাই শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষেও আশা ছিল। কিন্তু টপ অর্ডারের দায়িত্বহীন ব্যাটিং তাহতে দেয়নি। বিশেষ করে ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাট হাতে ব্যর্থতা আর ফিল্ডিংয়ে খামখেয়ালিপনা তাকে দাঁড় করাচ্ছে কাঠগড়ায়। গতকাল প্রায় প্রতিটি ম্যাচের মতোই আত্মবিশ্বাসী শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। প্রয়োজন ছিল দায়িত্ব নিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়া। ৩৯ রানের জুটিও গড়লেন। কিন্তু বাজে এক শট হাঁকাতে গিয়ে অরক্ষিত স্টাম্প গুড়িয়ে গেল শামির বলে। ২২ রান করে দিনের হতাশা আরো বাড়িয়ে দিলেন। আশা ছিল সৌম্য সরকারকে ঘিরে। কিন্তু এদিনও ব্যর্থ টাইগারদের ভবিষ্যৎ। ৩৮ বলে ৩৩ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে জীবন দিলেন সৌম্য। দলীয় ৭৪ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়। এরপর শুধু সাকিব আল হাসানের লড়াই। সঙ্গ দিতে এসে মুশফিকুর রহীম হতে পারলেননা দলের ভরসা। মুশফিক এদিন ২৪ রানে আউট হলেন চাহালের বলে। লিটন এসে আশা জাগালেন কিন্তু দায়িত্ব নিতে পারলেন না। পান্ডিয়ার ওভারে একটি দারুণ ছয় হাঁকালেন তিনি লং অনের উপর দিয়ে। ঠিক এক বল পরেই উচ্চবিলাসি শট। ফল ২২ রানে সাজঘরে। সেই সঙ্গে দলের হারও প্রায় নিশ্চিত করে দিলেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়েছেন। তবে ময়মনসিংহের আরেক তরুণ মোসাদ্দেককে তার ছাঁয়া মনে করা হচ্ছিল। তাই দলের শেষ ভরসা মনে হচ্ছিল তাকে। কিন্তু সাকিবকে সঙ্গ দিতে এসে ৩ রানেই বিদায়। এরপর হাল ছাড়লেন সহ অধিনায়কও। কত লড়বেন? ৭ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি ও ৪ ফিফটির মালিক তিনি। ৫৪২ রান করে বিশ্বকাপের সেরা রান সংগ্রহকারীর তালিকাতে দ্বিতীয় স্থানে। গতকাল শেষ পর্যন্ত ৬৬ রান করে হাল ছাড়লেন তিনিও। দলের ১৭৬ রানের সময় সাকিবের বিদায়। কিন্তু কে জানতো এদিন সাইফুদ্দিন চমকে দিবেন সাবাইকে। প্রথমে সাব্বির রহমান রুম্মানকে নিয়ে দলের সর্বোচ্চ ৬৬ রানের জুটি। সাব্বির তার প্রমাণের ম্যাচে এসে ৩৬ রানের অবদান রেখেই দায়িত্ব শেষ করলেন। তখনো জয়ের সম্ভাবনা ছিল যদি তিনিও দায়িত্বশীল হতেন। এরপর অধিনায়ক মাশরাফি ৮ ও রুবেল হোসেন ৯ রান করে আউট হলেন। সেই সঙ্গে মিলিয়ে গেল সব স্বপ্ন। টাইগার ভক্তরা বেরিয়ে গেলেন নিরবে।

ক্রিকেটে ক্যাচ মিসকে বলা হয় খেলারই অংশ। আবার ‘ক্যাচ মিস যে ম্যাচ মিস’ এই কথাটিও সত্য। সেটা আরও বেশি প্রকট হয় যখন ক্যাচ ফসকায় এমন কোনো ব্যাটসম্যানের যে একাই সব তছনছ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কাল এজবাস্টনে তামিম ইকবাল যার ক্যাচ ছাড়লেন, সেই রোহিত শর্মার ওয়ানডেতেই আছে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি। তামিমের হাতে জীবন পাওয়া রোহিত আর ডাবল করতে পারেননি। ৯ রানে জীবন পেয়ে আউট হওয়ার আগে যোগ করেছেন আরো ৯৫ রান। তামিমের ভুল শেষ পর্যন্ত পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন মোস্তাফিজ। পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতের সংগ্রহটা আয়ত্তের মধ্যেই রাখেন বাংলাদেশের এ ‘কাটার মাস্টার’। বিনা উইকেটে ১৮০ রান করা ভারত থামে ৩১৪/৯-এ। বিশ্বকাপে এটি মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম পাঁচ উইকেট। মানবজমিন

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *