এবার কি তবে সাকিব?

অনুশীলন মাঠের নেট থেকে উঠে সাকিব আল হাসান চললেন মূল স্টেডিয়ামের দিকে। আরও কিছুক্ষণ নক করবেন সেখানে। সাকিবকে যেতে দেখেই দৌড়ে তাঁর পিছু নিল ভারতীয় টিভি মিডিয়ার একাংশ। সাকিবের ফুটেজ যদি আরও কাছ থেকে পাওয়া যায়।

 

আইপিএলের সুবাদে বাংলাদেশ দলের সাকিব ‘হট কেক’ ভারতীয় মিডিয়ার কাছে। তাঁর সাক্ষাৎকারের জন্য মিডিয়া ম্যানেজারের মুঠোফোনে অনুরোধের স্তূপ। হবে না-ইবা কেন! বিশ্বকাপটা সাকিব খেলছেনও তো দুর্দান্ত! দুই অস্ট্রেলিয়ান ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ হয়তো রানে এখন এগিয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁরা খেলেছেন আটটি করে ম্যাচ। সাকিব ছয় ম্যাচেই ৪৭৬ রান করে আছেন তৃতীয় স্থানে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে গত ম্যাচে জ্বলে উঠেছেন বোলিংয়েও।

 

এজবাস্টনের অনুশীলন মাঠে এসে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার কাল অন্তত চারটি জটলার মুখোমুখি হলেন। একেক জটলায় কথাবার্তার বিষয়বস্তু একেক রকম। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের জটলায় বিষয়বস্তু সেই সাকিব। ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যানের কথার সারমর্ম, সাকিবের মতো অলরাউন্ড পারফরমার নিকট অতীতে দেখেনি বিশ্ব ক্রিকেট। আইপিএলে যে সাকিব প্রায়ই আপন আলোয় ফুটে উঠতে পারেন না, সেটিরও যুক্তিসংগত কারণ দেখছেন ধারাভাষ্যকার মাঞ্জরেকার। আইপিএলে একজন বোলার বল করেন মাত্র ৪ ওভার। সাকিব সেখানে কিছু দেখাতে না পারলেও সেটিকে তাঁর ব্যর্থতা হিসেবে দেখা যাবে না। মাঞ্জরেকার দেখতে বললেন টেস্টের সাকিবকে, যেখানে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট পাওয়ার সাফল্য আছে তাঁর ১৮ বার। টেস্টের এই পারফরম্যান্স বিবেচনায় মাঞ্জরেকারের বিশ্লেষণ, টি-টোয়েন্টির তুলনায় সাকিবের বোলিংটা ওয়ানডের জন্যই বেশি কার্যকর।

 

কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে যে কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না আসল সাকিবকে! প্রতিপক্ষ ভারত হলে সবার আগে মনে আসে মাশরাফি বিন মুর্তজার নাম। ২০০৪ সালে ঢাকায়, এরপর পোর্ট অব স্পেনে ২০০৭ বিশ্বকাপেও ভারতকে হারানো ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিনি। আসে মোস্তাফিজুর রহমানের নামও। ২০১৫ সালে অভিষেক ওয়ানডেতেই ভারতের বিপক্ষে নিয়েছেন ৫ উইকেট, পরের ম্যাচে ৬ উইকেট। ভারতকে হারানো এই দুই ম্যাচেরই ম্যাচসেরা ছিলেন বাঁহাতি পেসার। তামিম ইকবালের কথাই-বা বাদ থাকবে কেন! ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হলেই এখনো স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ২০০৭ বিশ্বকাপে তাঁর সেই তেড়েফুঁড়ে করা ব্যাটিংয়ের কথা।

 

এমন নয় যে ভারতের বিপক্ষে সাকিব বলার মতো কিছুই করেননি। সর্বশেষ জয়েই আছে অপরাজিত ফিফটি। মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমানের সঙ্গে ম্যাচ জেতানো দুটি জুটি। ২০১৫ সালের হোম সিরিজে তার আগের ম্যাচেও করেছিলেন ৫২ রান। কিন্তু এই বিশ্বকাপে সাকিব যেমন আপন আলোয় উদ্ভাসিত, বাংলাদেশের অনেক জয়েই যেমন তাঁর একক অবদান; সে রকম কিছু নেই ভারতের বিপক্ষে। নেই সেঞ্চুরি, নেই ৫ উইকেট। সর্বোচ্চ ইনিংস ৮৫ রানের, সেরা বোলিং ২৭ রানে ৩ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে ১৭ ম্যাচে সাকিবের সাত ফিফটি ও ১৮টি উইকেটও তাই তেমনভাবে চোখে পড়ে না।

 

এবার কি ভারত অন্য সাকিবকে দেখবে? আশাটা করাই যায়, কারণ বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বাংলাদেশ দল পরিণত তাঁর ‘ওয়ান ম্যান শো’তে। টুর্নামেন্টে নিজেদের সাতটি ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরও যে বাংলাদেশ এখনো সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছে, সেটি তো সাকিবের হাত ধরেই! আর ভারতের বিপক্ষে সাকিবেরও বড় কিছু করে দেখানোর দায় আছে। মাঞ্জরেকার যতই তাঁর আইপিএলের বোলিংয়ের পক্ষে যুক্তি দিন, সেটি সাকিবের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদই মানে কি না সন্দেহ। নইলে সর্বশেষ আইপিএলে ম্যাচের পর ম্যাচ তাঁকে এভাবে বসিয়ে রাখে! পেশাদার ক্রিকেটে ‘প্রতিশোধ’ শব্দটার হয়তো জায়গা নেই। কিন্তু খেলোয়াড়দের ভেতরের জেদটা সব সময় পেশার নিয়ম মেনে হয় না। সেখানে ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশও থাকে। সাকিব পারেন আজ সেটিও মিটিয়ে নিতে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *