চীনের বিজ্ঞানীরা মানুষ ও শূকরের জিনের একটি নতুন মিশ্রণ ব্যবহার করে গবেষণাগারে সৃষ্টি ত্বকের নমুনা তৈরি করেছেন। তারা প্রতাশা করছেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ততা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ত্বকের প্রতিস্থাপনে অদূর ভবিষ্যত তারা গবেষণাগারে তৈরি ত্বক কাজে লাগাতে পারবেন।
নানচাং বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত হাসপাতালের একদল চিকিৎসকের এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানী লিজিন জো। বিশেষ এই ত্বকের নমুনার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে ম্যাকাও প্রজাতির বানরের ওপর।
বিজ্ঞানী জো জানান, হাইব্রিড ত্বকের নমুনাটি ম্যাকাওয়ের ওপর ২৫ দিন জীবিত ছিল, নতুন শরীরে ইমিউন সিস্টেমে কাজ করার জন্য কোনো অতিরিক্ত ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন ছাড়াই।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এটি সেরা ফলাফল।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ত্বকের এই নমুনাটি মানব শরীরে আরো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কেননা মানব জিনের উপস্থিতি ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া এড়াতে সহায়তা করতে পারে।
গবেষণাগারে সৃষ্টি ত্বকের নমুনা তৈরি করতে গবেষক দলটি শূকরের জিনোমে মানুষের ৮টি নির্দিষ্ট জিন যুক্ত করেছেন এবং শূকর থেকে ৩টি জিন সরিয়ে নিয়েছেন, যেন তা ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে যায়।
মানুষ-শূকরের জিনগুলোর নির্দিষ্ট মিশ্রণটির সফলতা গবেষণাগারে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরিতে বিজ্ঞানীদের বহু বছরের চ্যালেঞ্জ ‘নৈতিক সমর্থন’ পেতে সহায়তা করতে পারে।
মানুষের জন্য গবেষণাগারে প্রত্যঙ্গ তৈরিতে বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই শূকরের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। কিন্তু মানুষ এবং শূকর ফাইলোজেনেটিক্যালি ভাবে খুব কাছাকাছি না হওয়ায়, শূকরের ডিএনএ থেকে তৈরি নমুনাগুলোর প্রতি মানব শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
গবেষকদলটির মতে, এক্ষেত্রে উভয় প্রজাতির জিনকে পৃথক করে এবং সম্পাদনা করে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতি করা যেতে পারে।
নমুনা ত্বকের সাথে মানব জিনগুলো পরিচিত হওয়ায় নতুন শরীরে কোষের বন্ধনের সম্ভাবনা বাড়বে এবং শূকরের যে জিনগুলো ইমিউন সিস্টেমকে আক্রমণ করতে পারে সেগুলো অপসারণ করায় সফলতা পাওয়া সম্ভব হবে।
বার্মিংহামের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড কুপারের মতে, মানুষের শরীরে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য নিয়ন্ত্রকদের বোঝানোটা পরবর্তী ধাপের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হবে।
কুপার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই সংকর শূকরগুলোর যেকোনোটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য (মানুষের শরীরে) উপযুক্ত হবে। তবে এক্ষেত্রে অনুমতির জন্য আমাদেরকে প্রথমে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে রাজি করতে হবে।’
নতুন এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে সিআরআইএসপিআর পদ্ধতির মাধ্যমে, যা ২০১২ সালে উদ্ভাবন করা হয়েছিল। এটি একটি মাইক্রোস্কোপিক কৌশল, যা বিজ্ঞানীদের ডিএনএ সিকুয়েন্স কাটার, পরিবর্তন করার এবং পরিবর্তিত ডিএনএগুলো একসঙ্গে জোড়া লাগানোর ক্ষমতা দেয়।