ক্যাশিয়ার থেকে প্রধানমন্ত্রী

 

গত সপ্তাহে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের নেতারা যখন গ্রুপ ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন তখন বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীকে তারা সামনের সারিতেই দাঁড় করিয়েছিলেন। আর এই কনিষ্ঠতম সরকার প্রধানটি হচ্ছেন ফিনল্যান্ডের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ৩৪ বছরের সান্না মারিন।

 

সম্মেলনে সান্না মারিনের মুখে ছিল চওড়া হাসি। আর থাকবে না-ই বা কেন? কারণ গত মাসেই যে তিনি পেয়েছেন বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীর উপাধি। ফিনল্যান্ডের প্রাক্তন যোগাযোগমন্ত্রী মারিনের ভাগ্য খুলেছিল তার দল স্যোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতার পদত্যাগের বদৌলতে।

 

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফিনল্যান্ডের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের অংশীদার পাঁচটি দলের নেতাই নারী। শুধু তাই নয়, এদের প্রত্যেকের বয়সই ৩৫ এর নিচে। ঐতিহ্যগতভাবে যে দেশটির শীর্ষ নেতারা হন বয়স্ক পুরুষ, সে দেশের জন্য এটা রীতিমতো ইতিহাস।

 

হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক স্টাডিজের গবেষক টিমো মেইতিনেন জানান, মারিনের তারুণ্য ও লিঙ্গ ‘তার পূর্বসূরীদের থেকে স্বতন্ত্র করেছে, যেখানে অধিকাংশই পুরুষ, যাদের বয়স ৫০ এর ঘরে’।

 

প্রায় এক শতাব্দি আগে বিশ্বের প্রথম নারী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিল ফিনল্যান্ডে। সেই সময় থেকে মারিনের আগ পর্যন্ত স্রেফ দুজন নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিল দেশটিতে। তবে এদের কেউ এক বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন নি।

 

গড়পরথা বিশ্বনেতাদের মতো মারিনের পারিবারিক ইতিহাস কিন্তু ঐতিহ্যবাহী নয়। ২০১৬ সালে ব্লগে মারিন লিখেছিলেন, মদ্যপান অভ্যাসের কারণে বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে তার মা জড়িয়ে পড়েছিলেন সমকামী সম্পর্কে। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় বাস করতেন তিনি।

 

১৫ বছর বয়সে একটি বেকারিতে জীবনের প্রথম চাকরিতে যোগ দেন মারিন। হাইস্কুলে পড়ার সময় অর্থের জন্য ম্যাগাজিন বিলি করতেন তিনি। স্নাতকের পর তিনি চাকরি করেছেন ক্যাশিয়ার হিসেবে। তাই ইস্তোনিয়ার পররাষ্টমন্ত্রী চলতি সপ্তাহে মারিনকে উপহাস করে বলেছিলেন, ‘সেলস গার্ল’। একইসঙ্গে তিনি মারিনের দেশ পরিচালনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

 

এর জবাবে টুইটারে মারিন লিখেছেন, ‘আমি ফিনল্যান্ড নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। এখানে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা নিজেরা শিক্ষিত হতে পারে এবং তাদের জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এমনকি একজন ক্যাশিয়ারও হতে পারে প্রধানমন্ত্রী’।

 

ফিনল্যান্ডবাসীদের অনেকেই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবাদে জড়িত। দেশজুড়ে শিল্প ধর্মঘটের জের ধরে এর আগের প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। এখন দেখার বিষয়, কতোটা শক্তহাতে বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী তার দেশের হাল ধরে রাখতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *