আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসছেন পুতুল?

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৃতীয় প্রজন্মের উত্তরাধিকারী হিসেবে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হতে যাচ্ছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে আসন্ন সম্মেলনে ১ নম্বর সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়ে বড় চমক হতে যাচ্ছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা অটিজম বিশেষজ্ঞ পুতুল। দলের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 

আগামী ২০ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। পরদিন ২১ ডিসেম্বর উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে দ্বিতীয় অধিবেশনে হবে নেতৃত্ব নির্বাচন। দুই অধিবেশনেই সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

 

সম্মেলনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই দলের সভাপতি পদে পরিবর্তন ছাড়া বাকি পদে নেতৃত্ব পরিবর্তন এবং নতুন মুখ কারা আসছেন, তা নিয়ে গুঞ্জনের ডালপালা ভারী হচ্ছে। এবারের সম্মেলনেও বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় প্রজন্ম কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোনো কেউ নেতৃত্বে আসবেন কি না, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।

 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দুই সন্তান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় এবং অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নাম আলোচনায় রয়েছে।

দলটির নীতিনির্ধারণী মহল জানাচ্ছে, আজ ও আগামী দিনের নেতৃত্ব বিবেচনায় আওয়ামী লীগ সভাপতির দুই সন্তান জয় ও পুতুলের মধ্যে এবার কেবল একজনই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১ নম্বর সদস্য হিসেবে ঠাঁই পাচ্ছেন। আর একমাত্র পুত্র জয় বর্তমানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসতে চান না, এটা তিনি এরই মধ্যে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও পারিবারিক আয়োজনে ইশারা-ইঙ্গিতে স্পষ্ট করেছেন। এ পরিস্থিতিতে পুতুলই আসছে কমিটিতে স্থান পেতে যাচ্ছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

 

আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার উত্তরসূরী হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামই বহুল আলোচিত। এর আগে, দলের সর্বশেষ ২০তম জাতীয় সম্মেলনে তখনকার সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত সজীব ওয়াজেদ জয়কে ইঙ্গিত করে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের নেতা, আগামী দিনের ভবিষ্যৎ আজ আপনাদের সামনে উপস্থিত।

 

সৈয়দ আশরাফের মতো একই মনোভাব পোষণ করেন দলের আরও অনেক নেতাই। তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্ম কাউকে না কাউকে দলের নেতৃত্বে প্রয়োজন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল— সবখানেই এই আওয়াজ রয়েছে। তবে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে অনাগ্রহের ইঙ্গিত জয় আগে থেকেই দিয়ে আসছেন, যদিও শেখ হাসিনার সন্তান ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে পরোক্ষভাবে দল ও সরকারের জন্য পরামর্শক হিসেবে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

 

মাঠের রাজনীতিতে জয়ের সক্রিয়তা দৃশ্যমান না হলেও গত ১৭ নভেম্বর রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নতুন কমিটিতে এক নম্বর সদস্য হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন তিনি। পরে ২৬ নভেম্বর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল শেষে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক নম্বর সদস্যও করা হয় জয়কে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগ কমিটিতে স্থান পাওয়া জয় হয়তো দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে রাজি নাও হতে পারেন। সে কারণেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পুতুলের আসার সম্ভাবনাই বেশি।

 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সবাই প্রত্যাশা করি, তাদের কেউ নেতৃত্বে আসুক। এই প্রত্যাশা আমাদের সবার আছে। তারা দু’জনেই (জয় ও পুতুল) জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য সন্তান। নিজ নিজ চিন্তা-চেতনা ও কর্মদক্ষতায় তারা শুধু দেশে নয়, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও মানুষের মন জয় করে চলেছেন। তাদের কেউ কমিটিতে স্থান পেলে সেটা নেতাকর্মীদেরও উজ্জীবিত করবে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, জয় আমাদের নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন। পুতুল কোনো পদে নেই, কিন্তু নিজ যোগ্যতায় তিনি সারাবিশ্বে পরিচিত মুখ। তারা (জয়-পুতুল) দু’জনেই নিজ নিজ কর্ম ও যোগ্যতায় সরকার ও দলীয় ঘরানার ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। আমাদের নেত্রীও চান, তাদের দু’জনের কেউ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসুক। আমরাও আশা করছি, সম্মেলনে নেত্রী এমন চমক উপহার দিতেই যাচ্ছেন।

 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান জয়ের জন্ম হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্রের হাতে সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা লন্ডনে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। সেখানেই মায়ের সঙ্গে ছিলেন জয়। পরে মায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয় পান

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *