ধান আছে, মান নেই : সুনামগঞ্জের কৃষককূলে শঙ্কা

চলতি আমন মৌসুমে সুনামগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় মাঠে মাঠে এখন সোনালী ধান খেলা করলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। বর্তমানে মণ প্রতি দাম ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা পেলেও কৃষকরা বলছেন তা অনেক কম। তাছাড়া তারা সিন্ডিকেট ও মহাজনের কাছে জিম্মি রয়েছেন। কৃষকরা সরকারি গুদামে সরাসরি ধান দিতে না পারায় অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের কাছে বিক্রি করছেন।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে এবার ৭৬ হাজার ২৪৪ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৮১ হাজার ৩৮৭ হেক্টরে। আবাদকৃত ধানের মধ্যে ৬৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর উফসি জাতের ও ১৬ হাজার ৮৭২ হেক্টর স্থানীয় জাতের।

 

হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ টন হারে এবার জেলায় দুই লাখ ৮৪ হাজার ৮৫৪ টন আমন ধানের চাল উৎপাদনের প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ। এদিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় দুই হাজার ১৫০ জন কৃষকের তালিকা হয়েছে, লটারি করে ১ হাজার ১৬৫ জনের কাছ থেকে ১ টন করে ধান কেনা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদফতর। একইভাবে দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ২০৪ টন, দোয়ারাবাজারে ১,২৪১ টন, ছাতকে ১,৩৪৩ টন, জগন্নাথপুরে ৮৪০ টন, দিরাইয়ে ২৬৮ টন, শাল্লায় ৪৯২ টন, ধর্মপাশায় ৫৩৩ টন, জামালগঞ্জে ৪৫৫ টন, তাহিরপুরে ৬৫৩ টন এবং বিশ্বম্ভরপুরে ৯২৪ জন কৃষকের কাছ থেকে লটারির মাধ্যমে এক টন করে ধান নেয়া হবে। এভাবে এক টন করে জেলায় এ বছর মোট ৮ হাজার ১১৮ টন ধান সংগ্রহ করা হবে।

 

সরেজমিনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আছিমপুর, টোকের বাজার, ও লালপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে চলছে এখন ধান কাটার ধুম। নিয়মিত বিরতি দিয়ে বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। এতে কৃষকরা খুশি হওয়ার কথা থাকলেও সঠিক দাম না পাওয়ায় চাপা কষ্টের মাধ্যমে ধান কাটছেন তারা।

 

সরকার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা বা প্রতি মণ ১ হাজার ৪০ টাকায় ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। কৃষকদের অভিযোগ তারা সরাসরি খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারছেন না। ফলে মহাজন বা সিন্ডিকেটের কাছে প্রতি মণ ধান ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে তারা লাভের পরিবর্তে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

 

লালপুর এলাকার কৃষক নূর মিয়া বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে ধান ভালো হইছে। কিন্তু দাম নাই। যে টাকায় ধান লাগানিত লাগে তার থকি দাম অনেক কম। এই রকম ওইলে ধান চাষ করিয়া লাভ নাই। আমরা সরাসরি গুদামও ধান দিতে পারি না।‘

 

দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের হাঁসকুড়ী গ্রামের কৃষক লতিফ বলেন, ‘ধান ভালাই হইছে। শ্রমিক নাই যে ধান কাটতাম। তাছাড়া তারা যা পারিশ্রামিক চায় এই টাকা দিলে আমার লাভ থাকতোই না। আর ধানের দাম খুব কম ৫৫০ টাকা মণ। এই দামে ধান বিক্রি করলে ঘর সংসার চলবো কিলা।’

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সফর উদ্দিন বলেন, ‘এবার সুনামগঞ্জে আমনের ভালো ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান পেয়েছি। আগাম জাতের ধানগুলো আগেই কাটা হয়েছে। এখন চলছে নিয়মিত যে আমন ধানগুলো পাই সেগুলো। আমি মনেকরি না কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, সরকার প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকেই ধান কেনার নির্দেশনা দিয়েছে।’

 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, কোনো দালাল বা ফরিয়ার কাছ থেকে ধান কেনার প্রশ্নেই আসে না। সরকার যে দাম ঠিক করে দিয়েছে সেই দামেই ধান কেনা হচ্ছে। তাছাড়া ধানের টাকা নগদে কৃষকের হাতে দেয়া হয় না, সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায়। তাই কৃষক তার ব্যাংক একাউন্ট কাউকে দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *