ডাটা সেন্টার থেকে বছরে আয় হবে ৩৫০ কোটি টাকা

 

দেশে স্থাপন করা জাতীয় ফোর টায়ার ডাটা সেন্টার থেকে বছরে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে বলেও বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডাটা সেন্টারটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে স্থাপিত দেশের বৃহত্তম ও বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম জাতীয় ফোর টায়ার ডাটা সেন্টারের উদ্বোধন করেন।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনিও ডাটা সেন্টারের সাহায্যে দেশের অর্থ সাশ্রয় ও সেখান থেকে আয় করার কথা জানান। ডাটা সেন্টারটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ, ব্যাকআপ, রিকভারি, ডাটা সিকিউরিটি, ডাটা শেয়ারিং, ই-গভর্নেন্স, ই-সার্ভিস, কোলোকেশন সার্ভিস ও ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের কাজে ব্যবহার করা যাবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এনএম জিয়াউল আলম এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে ডাটা সেন্টারটির উদ্বোধন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এসময় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন। ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর ডাটা সেন্টারটির নির্মাণে একনেকে একটি প্রকল্প পাশ হয়।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ডাটা সেন্টার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান জেডটিই করপোরেশন বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ভিনসেন্ট লুই, গভর্নমেন্ট এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চেন উই এবং প্রতিষ্ঠানটির এ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।

 

চীনের শেনঝেন ভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেডটিই করপোরেশনের দায়িত্বে নির্মিত হয়েছে পার্ক ও ভবন, ডাটা সেন্টার ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিসিপিআই), আইটি সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার এবং ফোর টায়ার ডাটা সেন্টারের ওঅ্যান্ডএম সার্ভিস। এ প্রকল্পের মূল অংশ হিসেবে ডিসিপিআই নকশা ও নির্মাণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আপটাইম ইনস্টিটিউটের টায়ার ফোর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যার রিল্যায়াবিল্যাটি লেভেল হবে ৯৯.৯৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডাটা সেন্টারটি নির্মাণ করা রয়েছে অত্যাধুনিক শক-প্রুফ, ফ্লাড-প্রুফ এবং এক্সপ্লোশন-প্রুফ ডিজাইনে। এ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন বিশ্বসেরা পণ্য ও সেবাদানে জেডটিইর সক্ষমতারই প্রমাণস্বরূপ।

 

বাংলাদেশে একটি টায়ার থ্রি ডাটা সেন্টার থাকলেও এর ধারণক্ষমতা ইতিমধ্যেই পূর্ণ। এজন্য, হাই-টেক পার্কে জেডটিইর মাধ্যমে টায়ার ফোর ডাটা সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ডাটা সেন্টারটির ধারণক্ষমতা দুই পেটাবাইট। এক পেটাবাইট ১০ লাখ গিগাবাইটের সমতুল্য। আপটাইম ইনস্টিটিউটের টায়ার ফোর সনদপ্রাপ্ত এ ডাটা সেন্টারটি মিশন ক্রিটিক্যাল অপারেশনে সহায়তা প্রদানে সর্বোচ্চ পরিমাণে অ্যাভেইলাবিলিটি ও রিসাইলেন্স রয়েছে। এটা দেশের প্রথম জাতীয় ডাটা সেন্টার যার আপটাইম টায়ার ফোর ডিজাইন সার্টিফিকেশন ও ফ্যাসিলিটি সার্টিফিকেশন রয়েছে। এবং এ ডাটা সেন্টার আপটাইম টায়ার ফোর ফ্যাসিলিটি সার্টিফিকেশন পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ডাটা সেন্টার এবং বিশ্বের সপ্তম টায়ার ফোর ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার।

 

ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার নিয়ে জেডটিই করপোরেশন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ভিনসেন্ট লিউ বলেন, ‘তথ্য সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি অনেক প্রযুক্তি সহজে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে নতুন ডাটা সেন্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কেন্দ্রস্থল বলে বিবেচিত হবে। আপটাইম ইনস্টিটিউটের টায়ার ফোর স্ট্যান্ডার্ড মেনে এ ডাটা সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে বিবেচনা করা হয়েছে এর নকশা, নির্মাণ, কার্যক্রম ও রক্ষণাবেক্ষণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রার অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত।’

 

জেডটিই করপোরেশন বাংলাদেশের গভর্নমেন্ট এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চেন উই বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ খাতের উন্নয়নে ইতিমধ্যেই সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জাতীয় ডাটা সেন্টার অত্যন্ত কার্যকরী উদ্যোগ। এ ডাটা সেন্টার বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলেই আমার বিশ্বাস।’

 

সরকারি অর্থে ও চীনের কারিগরি সহায়তায় নির্মিত ডাটা সেন্টারটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। সেসময় প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং এটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে এর কাজ শেষ করার মেয়াদ ধরা হলেও তা কিছুটা সময় পিছিয়ে শেষ হয়। আর বৃহস্পতিবার থেকে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *