সাকিব আল হাসান শেষ পর্যন্ত ভারত সফরে যাবেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনো কাটেনি। এ ব্যাপারে আজ জানা যাবে বলে আগের দিন সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান। তবে আজ বড় একটি দুঃসংবাদই শুনতে হতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। শুধু ভারত সফর নয়, সম্ভবত ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন সাকিব!
দেশের দৈনিক সমকাল আজ তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, দুই বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে এক ক্রিকেট জুয়াড়ির কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সেই প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করলেও নিয়মানুযায়ী আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে (আকসু) জানাননি। এ কারণেই আইসিসি তাকে শাস্তি দিতে যাচ্ছে।
আইসিসির কোড অব কন্ডাক্টে বলা আছে, বাজিকরদের কাছ থেকে ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হবে। আকসুকেও অবহিত করতে হবে। সে খবর নিজে লুকিয়ে রাখলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। সাকিব তার কোনোটাই করেননি।
সমকাল বলছে, দুই বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে এক ক্রিকেট জুয়াড়ির (বুকি) কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সেটি তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করলেও আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানিয়ে গোপন করেন তিনি। বিষয়টি পরে আইসিসি জানতে পারে। আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের কল রেকর্ড ট্র্যাকিং করে এ ব্যাপারে তারা তথ্য উদ্ধার করে। ওই জুয়াড়ি আইসিসির কালো তালিকায় থাকাদের একজন। বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর সম্প্রতি সাকিবের সঙ্গেও কথা বলেন আকসু প্রতিনিধি।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে সমকাল আরও বলছে, সাকিবও নিজের ভুল স্বীকার করেছেন আকসু তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, জুয়াড়ির প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেননি বলেই জানাননি। বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়াটাই তার জন্য কাল হয়েছে। সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন তিনি।
আজ অথবা আগামীকাল নাকি সেই তথ্যই প্রকাশ করতে যাচ্ছে আইসিসি। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সাকিবকে নিষিদ্ধ করলে সেটি বাংলাদেশের জন্য হবে বড় ধাক্কাই।
এর আগে ২০০৮ সালেও একবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে জুয়াড়ির কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সেবার অবশ্য দ্রুতই বিষয়টি বোর্ড ও আকসুকে জানিয়েছিলেন তিনি।
ভারত সফর সামনে রেখে গত শুক্রবার শুরু হয় জাতীয় দলের প্রস্তুতি ক্যাম্প। ক্যাম্পের প্রথম দিন সাকিব মাঠে ছিলেন না। অধিনায়ক ক্যাম্পে যোগ দেন দ্বিতীয় দিন। পরের দুই দিন মিরপুরে ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে খেলেন দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সাকিব সেই দুই ম্যাচে খেলেননি।
সমকাল বলছে, আইসিসিই নাকি সাকিবকে জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন না করার নির্দেশনা দিয়েছে বিসিবিকে। এ কারণে অসুস্থ বলে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দেননি সাকিব।
কিছুদিন আগে ১১ দফা দাবিতে (পরে নতুন করে যোগ হয় আরও দুই দফা) শীর্ষ ক্রিকেটাররা যে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন, সেটার অগ্রভাগে ছিলেন সাকিব। পরে বোর্ড অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন ক্রিকেটাররা।
এর মধ্যেই আবার বিসিবির অনুমতি না নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের সঙ্গে স্পন্সরশিপ চুক্তি করেন সাকিব। তার সেই চুক্তি সম্পূর্ণভাবে বেআইনী বলে সংবাদমাধ্যমে জানান বোর্ড প্রধান।
গত কয়েক দিনের নানা ঘটনাপ্রবাহে সাকিব তাই আলোচনার কেন্দ্রই ছিলেন। তবে তিনি যে নিষিদ্ধ হতে পারেন, এমন খবর অন্তত ছিল না। যদিও এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে আইসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পরই।