নিউইয়র্ক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ-কে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশী কমিউনিটি ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সমাবেশ থেকে আবরার-কে হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের বিশেষ ট্রাইবুনালে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানানো হয়েছে। এছাড়াও গত ১১ অক্টোবর শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে আবরারের বিদেহী আতœার শান্তি কামনায় নিউইয়র্কের মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হয়েছে। খবর ইউএনএ’র।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাত তিনটার দিকে ঢাকাস্থ বুয়েটের শেরে বাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতারা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন আবরারের বাবা বরকত উল্ল্যাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন। এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
বুয়েট’র প্রাক্তন শিক্ষার্থী: আবরার হত্যার প্রতিবাদে নিউইয়র্ক প্রবাসী বুয়েট-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা গত ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এসময় তারা আবরার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড বহন করেন। এই সমাবেশের আয়োজকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা ছিলেন বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশন নিউইয়র্ক-এর রনি, ফৌজিয়া (কুমো), শরীফ রহমান, আরিফ রহমান, কামার জামান ও জিয়া হায়দার।
কুষ্টিয়া জেলা সমিতি: কুষ্টিয়া জেলা সমিতি ইউএসএ আবরার হত্যার বিচার দাবীতে গত ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সংগঠনের সভাপতি আবু মুসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান। সভায় বিশিষ্টজনদের মধ্যে সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ রাশেদুল আলম, সাবেক সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন, সহ সভাপতি আব্দুল মমিন বিশ্বাস ও কাজী পারভেজ বাবু, কোষাধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আম্বিয়া অন্তরা, ক্রিড়া সম্পাদক আবদুল্লাহ যুবায়ের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটি: আবরার হত্যার প্রতিবাদে ‘তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটি’ গত ১১ অক্টোবর শুক্রবার রাতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় হিলসাইড এভিনিউতে একটি পার্টি হলে এক সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদল। সভায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস খান, নিউজার্সী বিএনপি নেতা নূরল ইসলাম খসরু, আবুল কালাম, জামাল হোসেন, হোসেন পাঠান বাচ্চু, রেজাউল হক, আকবর এ আবেদীন রনী, মজিবর রহমান, আলী দোনার, মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আকতার হোসেন বাদল তার বক্তব্যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং বিরাজিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসে বিএনপি পরিবারের সকলের ঐক্য কামনা করেন। এছাড়াও ওয়াশিংটর ডিসিতে ওয়াইট হাউজের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে গত শনিবার আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষাভ-সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রবাসী নাগরিক সমাজ: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)এর মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নিউইয়র্কস্থ প্রবাসী নাগরিক সমাজ। গত ১২ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এ সমাবেশ করে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। এসময় বক্তারা বলেন, আবরার ফাহাদের হত্যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বড় আঘাত। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আজ চূড়ান্তভাবে হুমকির সম্মুখীন। গণতন্ত্রের অনুপুস্থিতি বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখবার বিনিময়ে পুরো দেশকে দখলে নিতে চায় প্রতিবেশী দেশ। বক্তারা ভারতের সাথে দেশ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিলের দাবী জানান।
মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শওকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর ড. ওয়াজি উল্লাহ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট গিয়াস আহম্মেদ, ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর রেস্টোরিং ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ইমরান আনসারী, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট হুসনে আরা বেগম, জসীম উদ্দিন ভূইয়া, মো: শাহাদাত হোসেন রাজু প্রমূখ।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন যুবনেতা আবু সাঈদ আহমদ, আমান হোসেন আমান, মনিরুল ইসলাম মুনীর, মাসুম আহমদ, সোহেল আহমদ ও ফারজানা আক্তার মৌ। এছাড়াও নিউইয়র্কের বিভিন্ন কলেজের বিপুল পরিমাণ ছাত্রছাত্রী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে ড. শওকত আলী বলেন, আমি আমেরিকার অর্থনীতিবিদের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করেও এদেশ থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়েছি। কিন্তু আমেরিকানরা আমাকে হত্যা করেনি বরং চাকুরি দিয়েছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমত পোষণের কারণে আবরার জীবন দিতে হয়েছে। যা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যা।
ড. ওয়াজি উল্লাহ বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক তারপরও আমি এ হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাই। তিনি অবিলম্বে খুনীদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান। গিয়াস আহমেদ বলেন, বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্য বানানোর অংশ হিসেবেই আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যেকোনো চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
ইমরান আনসারী বলেন, আবরার ফাহাদের হত্যাকান্ড বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চলমান যড়যন্ত্রের একটি পরিকল্পিত ঘটনা। এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগনের কণ্ঠকে চিরতরে স্তিমিত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন। এসময় তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।
জসীম উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ফেনীর বাসিন্দা হিসেবে তিনি উদ্বিগ্ন ফেনী নদীর পানি উত্তোলন করা হলে ওই এলাকার কৃষি ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মূখে পড়বে। তিনি অবলম্বে দেশ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিলের দাবী জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ফরহাদ খন্দকার বলেন, অনতিবিলম্বে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েটের মেধাবী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে জড়িত সকল সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় এনে ফাঁসি দিতে হবে। তিনি বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) এর মুক্তির দাবী করে বলেন, একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে দেশে ফেরার পর এয়ারপোর্ট থেকে আটক করা আসলেই চরম বর্বরতা ও অগণতান্ত্রিক আচরণ। তিনি অবিলম্বে মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ-এর মুক্তি দাবী করে বলেন, নতুবা বর্তমান অনির্বাচিত সরকার দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না।