সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মানের জন্য এখানে নাম উল্লেখ করা গেলোনা। ইতালী প্রবাসী এক বাংলাদেশী নাগরিক ইতালীর নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন ২০১৮ সালে। তারপরই তিনি পরিবার নিয়ে চলে আসেন ব্রিটেনে।
সেই লোক এপ্রিলে ইতালীতে যায় তার ব্যাক্তিগত কাজে। কিন্তু ফেরার সময় তার পাসপোর্ট আটকে দেয় ইতালী ইমিগ্রেশন! কারন তিনি নাগরিকত্ব আবেদনের সময় প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছিলেন, অবৈধ পন্থায় ঘুষ দিয়ে তিনি তার নাগরিকত্ব আবেদন করে সফল হন। এখন বিপদ হচ্ছে, তার পুরো পরিবার ব্রিটেনে আর তিনি আটকা পড়েছেন ইতালীতে! তিনি ২০১৬ সালের এপ্রিলে তার নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলেন।
এমন ঘটনার শিকারের ঝুঁকিতে রয়েছেন অন্তত ২ হাজার বাংলাদেশী, এরমধ্যে অন্তত ৪০০/৫০০ বাংলাদেশী আছেন যারা ব্রিটেনে এসেছিলেন এমন ইতালীয় প্রবাসী।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে ২০ জুলাই ২০২০ সালে ইতালীর রাজধানী রোমের পাবলিক প্রসিকউটর অফিসের জারি করা একটি চিঠির কপি এসেছে। সেই চিঠিতে ১০ জনের একটি জালিয়াত চক্র যাদের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও বাইরের দালাল রয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এই একই চিঠিতে ৪৮৬ টি পাসপোর্ট আবেদনের রেফারেন্স নাম্বার উল্লেখ করা আছে। এরকম আরো বেশ কিছু চিঠি ইতালীর বিভিন্ন শহর থেকে ইস্যু করা হয়েছে। সেই চিঠিতে উল্লেখ আছে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪৮৬টি আবেদনের রেফারেন্স নং দেয়া আছে। এই ৪৮৬ পাসপোর্ট আবেদনের তদন্ত হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত । মূলত কোভিডের আগে এই সিটিজেনশীপ বাতিলের চিঠি দেয়া হলেও নতুন করে আবারো গত ২ মাস থেকে এই চিঠি দেয়া হচ্ছে।
ব্রিটেন প্রবাসী ইতালীর থেকে আসা বাংলাদেশী নাগরিক যিনি আবার ব্রিটেনস্থ ইতালী এম্বেসীর প্রবাসী রাজনীতিবিদদের নিয়ে গঠিত কমিটির ১৮ জন সদস্যের অন্যতম গোলাম মাওলা টিপু বলছিলেন, সামগ্রিক ভাবে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার সিটিজেনশীপ বাতিল হতে পারে এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী আছেন। আমার কাছেই প্রায় ডজন খানেক এসেছিলেন চিঠি নিয়ে। এটা নিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, ইতালী থেকে ব্রিটেনে আসা অনেক বাংলাদেশীরা ইতালী এম্বেসীতে রেজিস্টার করেন নি, মানে ইতালীর সরকারের হিসাবে তারা অনেকেই ইতালীতেই আছেন। এরমধ্যে যারা এই জালিয়াতি করেছিলেন তাদের অনেকেই আছেন। তাদেরকে ইতালীর সরকার ইতালীর ঠিকানায় চিঠি দিয়েছেন, সেই চিঠির খবরই জানেননি অনেকে। এখন ইতালীতে যাওয়ার পর পাসপোর্ট আটকে রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন যাদের পাসপোর্ট ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে তাদের আবারো সেই ১০ বছর বৈধভাবে থেকে তারপর নতুন করে সিটিজেনশীপ আবেদন করতে হবে।
ইতালী প্রবাসী সাংবাদিক সোহেল মজুমদার বলেন, অনেকেই শুধুমাত্র অলসতার কারনে দালালদের শরনাপন্ন হয়ে এমন বিপদ ডেকে এনেছেন। নিজে যে কাজ করা যায় সেই কাজ সময় বাচানোর জন্য দালালদের হাতে করিয়ে আজ অনেকেই পথে।
গোলাম মাওলা টিপু বলছিলেন, এখন উচিত যারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত তারা যৌথভাবে একজন ভালো মূলধারার আইনজীবি নিয়োগ করা যিনি ইতালীর আইন বুঝেন। নাহলে সামনে আরো বিপদ হতে পারে।