যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে “ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির” প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

নিউজ ডেস্কঃ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে সংগঠনটির নিউইয়র্ক চ্যাপ্টার। ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শনিবার দিনটি উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা করেন তারা।

আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি ফাহিম রেজা নূর।

সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা নুরন নবী বলেন, “শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জীবন ও আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি কখনোই ভাবিনি যে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আমাকে দেখতে হবে। অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা আমরা গড়তে পারিনি বলেই আজ এমনটি হচ্ছে।”

সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ তার আলোচনায় জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপর। এর অন্যতম কারণ ৭২-এর সংবিধান প্রণয়নের দাবি থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।”

মুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলী বলেন, “বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু বলা যেত না, স্বাধীনতা বিরোধীরা যখন সারাদেশে আস্ফালন দেখাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে এ সংগঠনের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করেছিলেন জাহানারা ইমাম।”

সংগঠনের উপদেষ্টা ও নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক বাঙালি’ সম্পাদক কৌশিক আহমেদ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে যদি দ্বিতীয় কোন মহান ঘটনা থাকে সেটি ছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন ও এ সংগঠনের আন্দোলনের সূচনা।”

ঢাকা থেকে সভায় সংযুক্ত হয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, “যে উদ্দেশ্য নিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন শুরু হয়েছিল, আমি মনে করি তার পরিপূর্ণ সুফল আমরা এখনও পাইনি। কারণ শুধু শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, কিন্তু তাদের সহযোগী এবং দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের বিচারের কাজ এখনও সম্পন্ন করতে পারিনি।”

বঙ্গবন্ধু পরিষদ ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রানা মাহমুদ যুক্তরাষ্ট্রে লুকিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী ও যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান খানকে দেশে ফিরিয়ে নিতে ‘সম্মিলিত উদ্যোগের’ আহ্বান জানান।

সুইডেন থেকে সর্ব-ইউরোপীয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি তরুণ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমান সাম্প্রদায়িকতার অন্যতম কারণ শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন। শিক্ষা ব্যবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, জাহানারা ইমাম, জাতীয়তাবাদ, মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা না হলে এর পরিণাম আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।”

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ সভাপতি নাজনিন সিমন ও মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন, সহ সাধারণ সম্পাদক শুভ রায়, জাকির হোসেন বাচ্চু, সাহদাত হাসান ও মশিউল আলম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *