ইউক্রেনকে কতটা সহায়তা করতে পারবে পশ্চিমা বিশ্ব

নিউজ ডেস্কঃ পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র ইউক্রেন। রাশিয়ার পরে এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। ইউক্রেনের পশ্চিমে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণ-পশ্চিমে রোমানিয়া ও মলদোভা, দক্ষিণে কৃষ্ণসাগর ও আজভ সাগর, পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তরে বেলারুশ। দক্ষিণে ক্রিমিয়া উপদ্বীপে অবস্হিত স্বায়ত্তশাসিত ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের সীমান্তের মধ্যে পড়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের গভীর সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে রাশিয়ান ভাষাও ব্যাপকভাবে প্রচলিত। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব বহুদিন ধরেই হুমকি দিয়ে আসছে যে ইউক্রেনে হামলা চালালে রাশিয়াকে ঐতিহাসিক পরিণতি ভোগ করতে হবে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব নিষেধাজ্ঞা ছাড়া আর কতোটা সহায়তা করতে পারবে ইউক্রেনকে তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপে রাশিয়া তার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। রাশিয়া চায় ইউক্রেন যাতে ন্যাটোতে যোগদান না করে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ এবং ন্যাটো মিত্রদের সমন্বয়ে গঠিত পশ্চিমা জোট এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন চান পূর্ব ইউরোপে পশ্চিমা এই প্রতিরক্ষা জোটের সামরিক তত্পরতাসহ সেখানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা হোক। এই পূর্ব ইউরোপকে মস্কো তার নিজের ঘরের পাশের প্রভাব-বলয় বলে মনে করে।ভ্লাদিমির পুতিন

ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এবং পরস্পরের ওপর দোষ চাপানোর প্রচেষ্টার মধ্যেই ওই দুই দেশসহ ফ্রান্স এবং জার্মানির রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের মধ্যে চতুর্পক্ষীয় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্যারিসে। কাল মঙ্গলবার বৈঠকটি হচ্ছে। যদিও এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভ্লাদিমির পুতিন এবং দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে।

কিন্তু আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি। রুশ সৈন্যরাও ইউক্রেনীয় সীমান্তেই রয়ে গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া এমন কোনো প্রমাণ দেয়নি যে তারা আক্রমণ করবে না। এমনকি পুতিনের সাম্প্রতিক বিবৃতি পশ্চিমকে উদ্বিগ্ন করেছে। পশ্চিমের আক্রমণাত্মক পদ্ধতির বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিশোধমূলক সামরিক ব্যবস্হা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

ওপরের প্রশ্ন করার আগে আমাদের জানতে হবে, রাশিয়ার হামলা মোকাবিলা করার কতোটা সামর্থ্য আছে ইউক্রেনের। যু্ক্তরাষ্ট্রের এনবিসি টেলিভিশন এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে যা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। ইউক্রেনের তিন দিকে রাশিয়া ১ লাখের বেশি সৈন্য মোতায়েন করেছে। ইউক্রেনের বেশির ভাগ সৈন্য মোতায়েন আছে ডনবাস অঞ্চলে। সেখানে আবার রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রয়েছে। তাদের সঙ্গেও ইউক্রেনে সৈন্যদের লড়াই করতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার সৈন্যরা যদি পুরোদমে আক্রমণ চালায় তাহলে ইউক্রেন সৈন্যদের পিছু হটতেই হবে। থিংক ট্যাংক র‍্যান্ড করপোরেশনে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক স্কট বস্টন বলেছেন, রুশ সৈন্যরা দ্রুত এগুলে ইউক্রেন সৈন্যরা ধরা পড়ে যাবে, বন্দিদের মুক্ত করতে পারবে এবং অস্ত্রশস্ত্রও জব্দ করতে পারব। বিশ্লেষজ্ঞরা জানান, কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। তাই সেখানকার ইউক্রেনের বন্দরও রাশিয়ার দখলে যেতে পারে। ইউক্রেনের খাল এবং অনেক সেতুও রাশিয়ার দখলে চলে যেতে পারে। রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিরাপদ এলাকার পরিমাণও বাড়বে। পূর্ব ইউক্রেনের অর্ধেকই দখল করতে পারে রাশিয়া।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালাবে বলেই তার ধারণা, তবে যদি রুশ অভিযান ছোটখাটো আকারে হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের জবাবও মৃদু হবে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই কথায় অবশ্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোডিমির জেলেনস্কি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। বাইডেন নিষেধাজ্ঞার কথা বারবার বললেও ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।

২০১৪ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রতি বছর ৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে। শনিবারও কিয়েভে ২০ কোটি ডলারের মারণাস্ত্র পাঠিয়েছে যু্ক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেনও ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র দিচ্ছে। কারণ রাশিয়ার ট্যাংকের মাত্র এক ভাগ আছে ইউক্রেনের। তুরস্কও সশস্ত্র ড্রোন সরবরাহ করেছে।

ইউক্রেনের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভেন পিফার জানান, যু্ক্তরাষ্ট্র তার অবস্হান স্পষ্ট করেছে। আর ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট যদি সৈন্য পাওয়ার আশা করেন তাহলে সেটি ভুল হবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের প্রধান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা যার মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধস নামবে। আর অস্ত্র এবং উপদেষ্টা ইউক্রেনে পাঠানো হতে পারে। আবার ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে। কারণ ইউরোপের গ্যাসের তিন ভাগের এক ভাগ আসে রাশিয়া থেকে।

যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা বললেও ইউরোপিয়ান নেতারা বলছেন, রাশিয়া ভবিষ্যত্ নিয়ে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারে না। ফ্রান্সও এই নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ইউরোপ ন্যাটোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং রাশিয়ার সঙ্গে নিজস্ব পদ্ধতিতে আলোচনা চালাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, এটা কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ব্যাপার না। এখানে ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। তাই এখানে ইউরোপের প্রতিনিধিদের থাকার ব্যাপার রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *