সিলেট বিভাগে শনাক্তের হার বেড়ে ৩৬.১৩ শতাংশ

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্তের হার প্রতিদিন বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৩৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। একদিনে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১৫ ভাগ বেড়ে হয়েছে ৩৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। আক্রান্তের মধ্যে হবিগঞ্জ বিচারিক আদালতের ১০ জন বিচারক রয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তারা এজলাসে আসেননি। এদিকে, সিলেটের ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীদের প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার সকল শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই উল্লেখ করে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হিমাংশু লাল রায়।

জানা যায়, সিলেট বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৩৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ ২৪ ঘণ্টায় ৫২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় সিলেট জেলার ২ জন করোনায় মারা গেছেন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বিভাগে শনাক্তের হার বেড়েছে ১২ দশমিক ১৫। এর আগের দিন শনিবার আক্রান্তের হার ছিল ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। শনাক্তের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি সুনামগঞ্জ জেলায়। সেখানে প্রায় নমুনা পরীক্ষায় প্রায় ৫০ ভাগের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।

শনাক্তদের মধ্যে সিলেট জেলার ৩৪৪ জন,ওসমানী হাসপাতালের ৫৩ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৩৭ জন, হবিগঞ্জ জেলার ২৫ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ৭০ জন। সিলেট জেলায় শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ, সুনামগঞ্জ জেলায় ৪৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, হবিগঞ্জ জেলায় ৪৭ দশমিক ১৭ শতাংশ ও মৌলভীবাজার জেলায় ৪৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বর্তমানে চার জেলার হাসপাতালে ভর্তি ১৪৯ জনের মধ্যে সিলেট জেলার ১৩২ জন,সুনামগঞ্জ জেলার ৩জন, হবিগঞ্জ জেলার ২ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ১২ জন। এছাড়া, সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি ১৪ জন রোগীর মধ্যে করোনা সন্দেহজনক ৪ জন ও পজিটিভ ১০ জন।

এর মধ্যে হবিগঞ্জে ১০ জন বিচারক কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেলে হবিগঞ্জ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। হবিগঞ্জ আদালতের পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান বিকেলে বলেন, “জেলার বিচার বিভাগে কর্মরত ২৮ জন বিচারকের মধ্যে ১০ জনই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পেয়েছেন। তাই আদালত পাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশ কাজ করছে।“ আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন- ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিরাজাম মুনীরা, জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ তানিয়া ইসলাম, সহকারী জজ অভিজিৎ চৌধুরী, সাজিদ-উল-হাসান চৌধুরী ও মো. আব্দুল হামিদ, মুখ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন প্রধান ও মো. জাকির হোসাইন, বিচারিক হাকিম ফখরুল ইসলাম, রাহেলা পারভীন ও তাহমিনা হক। পরিদর্শক আনিসুর আরো বলেন, বিচারকরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তারা এজলাসে আসেননি।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকাদান কর্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেটের ৪ জেলায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হয়েছে। ৭ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার টার্গেটের প্রায় ৯০ ভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে শতভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামীকাল বুধবার ২৫ জানুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সিলেট ও সুনামগঞ্জে টিকা দান সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান খান জানান, ইতিমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ২য় ডোজ দেয়া শেষ হয়েছে। এখন ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম চলছে। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে শতভাগ এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। তবে অনেক বেসরকারি স্কুল, মাদরাসা তাদের শিক্ষার্থীদের আনা এবং যোগাযোগ রাখতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সিলেটে শনাক্তের হার বাড়ছে এবং বর্তমান হার থেকেও আক্রান্ত বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, এখন অনেকেই নমুন পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে বড় কোন ক্ষতি হয় না এমন শোনা কথায় লক্ষণ থাকার পরও অনেকে পরীক্ষা না করেই ঘরে আছেন। তাই প্রকৃত অবস্থা বুঝতে আরো কিছুদিন লাগবে। তিনি বলেন, করোনা থেকে সুরক্ষার একমাত্র পথ হলো মাস্ক ব্যবহার। মাস্ক ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।

উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ১ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ৮৭৮ জন মারা গেছেন, ওসমানী হাসপাতালে ১১৮ জন, সুনামগঞ্জে ৭৫ জন, হবিগঞ্জের ৪৮ জন ও মৌলভীবাজারের ৭২ জন। এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হচ্ছে ৫৭ হাজার ৯৯৮ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সিলেট জেলায় ৩০ হাজার ৯৬০ জন, ওসমানী হাসপাতালে ৫হাজার ১৪১ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৬ হাজার ৩৭৬জন, হবিগঞ্জ জেলায় ৬হাজার ৯০০ জন ও মৌলভীবাজার জেলায় ৮ হাজার ৬২১ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *