রাবি শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিতে পারবেন কর্মকর্তারাও

নিউজ ডেস্কঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আইন ১৯৭৩ এর ২৫টি ধারা আবারও বিজ্ঞপ্তি হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। এই আইন অনুসারে, প্রত্যেক শিক্ষক, প্রক্টোরিয়াল বডি এমনকি কর্মকর্তারাও যেকোনো শিক্ষার্থীকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে নিজ বিবেচনায় জরিমানা ও শাস্তি দিতে পারবেন। এদিকে কর্মকর্তাদের এমন ক্ষমতায়নের উল্লেখে আশঙ্কায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

গত রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির ১৭টি পয়েন্ট-এ এসব নিয়ম প্রকাশ করা হয়েছে। পরে তা আবাসিক হলগুলোতে নোটিশ আকারে টাঙিয়ে দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তির ৫ নম্বর পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক ও অফিসারের প্রক্টোরিয়াল ক্ষমতা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা যথাপোযুক্ত সে ব্যবস্থা নিতে পারবেন, যা প্রক্টর মহোদয়কে রিপোর্ট করবেন।’

উল্লেখিত আরও কয়েকটি ধারা হচ্ছে, প্রক্টোরিয়াল বডির ক্ষমতা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সহ প্রত্যেক হলের কমন রুম ও ক্যান্টিনেও, রাতের খাবারের পর হলে প্রাধ্যক্ষের ইচ্ছেমতো সময়ে রোল কল হবে, এসময় অবশ্যই নিজকক্ষে থাকতে হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ও হল ছাত্র সংসদ, বিভাগীয় সমিতি ছাড়া কোনো সংগঠন গঠন করতে পারবে না। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মেস বদল করতে লাগবে তার হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি। আবাসিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হলে অবস্থান করা আবশ্যকসহ সব শিক্ষার্থীদের অধ্যাদেশ অনুযায়ী আরও কিছু ধারা মেনে চলতে হবে।

পুরাতন ও অসংশোধিত এসব অধ্যাদেশকে কঠোর ও শিক্ষার্থীবান্ধব নয় বলে অভিহিত করে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতা ও অনেক শিক্ষকরাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টিকে নিয়ে অনেক সমালোচনা লক্ষ্য করা গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামক একটি গ্রুপে বিজ্ঞপ্তিটির ছবি পোস্ট করা হলে সেখানে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। পোস্টে শ্রাবণী বিশ্বাস নামের একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, ‘এটি পড়ে আসামি আসামি ফিল হচ্ছে। মনে হচ্ছে মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের অনুমতি ব্যতীত দেশ (রাজশাহী) না ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

পুরাতন অধ্যাদেশ বর্তমানে প্রচলিত হিসেবে দেখা না গেলেও এনিয়ে শঙ্কায় নতুন শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নতুন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এত নিয়ম কানুন আমাকে হতবাক করেছে। আমরা যারা নতুন এসব নিয়ম দেখে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েছি। অনেকটা শঙ্কিতও আমরা। কারণ নতুন হিসেবে দুয়েকবার ভুল হয়ে যেতেই পারে। এছাড়া একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষকদের পাশাপাশি কর্মকর্তারাও শাস্তির আওতায় আনতে পারবেন, এমনটি কাম্য নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এসকল ছাত্র অবান্ধব আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’

রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের নিয়মকানুন মোটেই কাম্য নয়। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের জন্য যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে, এই বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও জোরদার করবেন। কিন্তু এর নাম করে যে শিক্ষার্থীদের একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হলে প্রবেশ করতে হবে এটা ঠিক নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। এটি অনেক পুরানো একটি বিধিবিধান। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের জানার জন্য দেওয়া হয়েছে যে, এরকম বিধিবিধান আছে। যেসব স্বাভাবিক নিয়ম কানুনে আমরা অভ্যস্ত সেগুলোর জন্য এই মুহূর্তে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *