প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার

নিউজ ডেস্কঃ কম্পিউটিং মেশিনের অ্যালগরিদম লেখার জন্য ইংরেজ গণিতবিদ অ্যাডা লাভলেসকে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার বলা হয়। ১৮০০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামিং লিখেন। ২৭ নভেম্বর ছিল প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামারের প্রয়াণ দিবস।

পরিচয়- ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত কবি লর্ড বায়রনের কন্যা অগাস্টা অ্যাডা বায়রন (‘অ্যাডা লাভলেস’ নামে অধিক পরিচিত)। অল্প বয়স থেকেই গণিতশাস্ত্রে অবদান রাখতে থাকেন। যেহেতু অ্যাডা কম্পিউটারের অনেক ধ্যান-ধারণা ও পদ্ধতির প্রবক্তা। তাই তাকে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

জন্ম- অ্যাডা লাভলেস ১০ ডিসেম্বর ১৮১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিখ্যাত কবি লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রনের একমাত্র বৈধ সন্তান ছিলেন। মা লেডি অ্যান ইসাবেলা মিলবাঙ্কে বায়রনের সঙ্গে লর্ড বায়রনের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। জন্মের কয়েক সপ্তাহ পরেই তার মা স্বামীর সংসার ত্যাগ করেন। কয়েক মাস পর লর্ড বায়রনও ইংল্যান্ড ছেড়ে যান। এরপর অ্যাডা তার বাবাকে আর দেখতে পাননি।

শৈশব ও কৈশোরকাল- ১৮০০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে অ্যাডাকে অস্বাভাবিক জীবনযাত্রার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মায়ের পীড়াপীড়িতে টিউটররা তাকে গণিত ও বিজ্ঞান শেখাতেন। এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং বিষয় সে সময়ের মেয়েদের জন্য আদর্শ ছিল না। কিন্তু তার মা বিশ্বাস করতেন, কঠোর অধ্যয়ন অ্যাডাকে তার বাবার মেজাজ এবং অপ্রত্যাশিত মেজাজের বিকাশ থেকে বাধা দেবে। তাকে দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকতে বাধ্য করা হতো। কারণ তার মা বিশ্বাস করতেন, এটি তাকে আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে।

ব্যাবেজের সান্নিধ্য- মাত্র ১৭ বছর বয়সে অ্যাডা খ্যাতনামা গণিতবিদ ও উদ্ভাবক চার্লস ব্যাবেজের শরণাপন্ন হন। তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অনেক বয়স্ক ব্যাবেজ অ্যাডার পরামর্শদাতা হিসাবেও নিয়োজিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, ব্যাবেজের মাধ্যমে অ্যাডা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অগাস্টাস ডি মরগানের সান্নিধ্যে এডভান্সড ম্যাথম্যাটিকস পড়ার সুযোগ পান।

ব্যাবেজের বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিন এবং অ্যাডা- কম্পিউটারের জনক হিসাবে পরিচিত ব্যাবেজ ডিফারেন্স ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। যা গাণিতিক গণনা করার কাজে ব্যবহৃত হতো। পরে ব্যাবেজ বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিন নামে পরিচিত আরেকটি ডিভাইস তৈরির পরিকল্পনা করেন। যা আরও জটিল গণনা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। অ্যাডাকে ব্যাবেজের এই বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিনের একটি নিবন্ধ অনুবাদ করতে বলা হয়েছিল। অ্যাডা শুধু মূল ফরাসি পাঠ্যকে ইংরেজিতেই অনুবাদ করেননি, সেই সঙ্গে নিজের চিন্তাভাবনা ও ধারণাও এতে যোগ করেন। নোটগুলোতে অ্যাডা দেখিয়েছেন, সংখ্যার সঙ্গে অক্ষর এবং চিহ্ন ব্যবহার করে কীভাবে কোড তৈরি করা যেতে পারে।

ব্যক্তিগত জীবন- ১৮৩৫ সালে লাভলেস উইলিয়াম কিংকে বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান ছিল। বেশিরভাগ সময় তার স্বামী তার একাডেমিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতেন। অ্যাডা ও তার স্বামী, বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে, লেখক চার্লস ডিকেন্সসহ তৎকালীন সময়ের অনেক নামকরা বিখ্যাত মানুষের সংস্পর্শ লাভ করেন।

মৃত্যু- ১৮৩৭ সালে কলেরা রোগে আক্রান্ত হলে অ্যাডার স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগে থেকেই তার হাঁপানি এবং তার পাচনতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা ছিল। অ্যাডা ২৭ নভেম্বর ১৮৫২ সালে লন্ডনে জরায়ু ক্যান্সারে মারা যান।

কর্ম স্বীকৃতি- কম্পিউটার সায়েন্সে অ্যাডার অবদান ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত অধরা ছিল। ১৯৫৩ সালে বি.ভি. বোডেন তার নোট ফাস্টার দ্যান থট : এ সিম্পোজিয়াম অন ডিজিটাল কম্পিউটিং মেশিনস (Faster Than Thought: A Symposium on Digital Computing Machines) নামে পুনঃপ্রকাশ করেন। এরপরই অ্যাডা কর্ম স্বীকৃতিস্বরূপ অসংখ্য মরণোত্তর পুরস্কার পায় ১৯৮০ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ তার নামে একটি নতুন উন্নত কম্পিউটার ভাষা অ্যাডা নামকরণ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *