ফের কিউইদের কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস ডেস্কঃ নিউজিল্যান্ডকে ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে হারিয়ে পঞ্চমবার ওয়ানডেতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে একটা আক্ষেপ ছিল। একদিনের ক্রিকেটে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অজিদের সেই অধরা এবার পূর্ণ হলো। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটের সপ্তম আসরের মুকুট নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া। এবারও প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড

২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনাল খেললেও শিরোপার দেখা পায়নি অজিরা। এরপর আর বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা হয়নি তাদের। চলতি বিশ্বকাপের শুরুর দিকে সেই স্বপ্নটা হয়তো তারাও দেখেনি। কিন্তু, সেমিফাইনালে ফেভারিট পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপার দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরে অজিরা।

গতকাল রবিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি ট্রফি নিজেদের করে নেয় অজিরা। অথচ, একদিন আগেও শিরোপার আক্ষেপের বিষয়টি ফুটে উঠে অজি দলপতি ও কোচের কথায়।

ফাইনালে টস জিতে কিউইদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া দল। অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ৮৫ রানের ইনিংসে ১৭৩ রানের ছুঁড়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু, বড় লক্ষ্য সহজে মোকাবিলা করে শিরোপার মুকুট মাথায় তুলে নেয় ফিঞ্চ-স্মিথরা। মূলত ব্যাটসম্যান ওয়ার্নার ও মার্শের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৭ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত হয় তাদের।

ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় ওভারে অধিনায়ক ফিঞ্চ ৫ রান করে আউট হন। তবে, প্রথম উইকেট হারানোর পর চতুর্থ ওভারে জ্বলে উঠেন মার্শ। মিলনের প্রথম তিন বলে ৬, ৪, ৪ হাকিয়ে এক ওভারে তুলে নেন ১৫ রান। চার ওভার শেষে সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩০ রান।

মার্শ-ওয়ার্নারের ব্যাটিং দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১২ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ যেখানে ২ উইকেটে ৮১ রান সেখানে অজিদের ১২ ওভারে সংগ্রহ ১ উইকেটে ১০৫। ৩৪ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। তবে, ১৩তম ওভারে বোল্টের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন তিনি। তার স্কোর ৩৮ বলে ৫৩ রান।

ওয়ার্নার আউট হয়ে গেলেও অপরপ্রান্তে ছিলেন মার্শ। ব্যাট চালিয়ে যান সমানে। ১৪তম ওভারে সোধির বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৩১ বলে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি। ওয়ার্নারের বিদায়ে ক্রিজে আসেন ম্যাক্সওয়েল। মার্শের সঙ্গে গড়েন রানের জুটি।

১৩ ওভার শেষে অজিদের দরকার ছিল ৪২ বলে ৬৬ রান। শোধির এক ওভারে ১৬ রান খরচ হওয়ায় ম্যাচটি অনেকটা অজিদের তালুবন্দি হয়ে যায়। পরের দুই ওভারে মিলনে দেন ১১ রান এবং সাউদি ১৩ রান দিলে কাঙ্গারুদের শিরোপার স্বপ্ন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়।

২৪ বলে ২৪ রান প্রয়োজন। ক্রিজে তখনও অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটসমেন ম্যাক্সওয়েল ও মার্শ। এরপর মুঠোয় আসা ম্যাচটি হাতছাড়া করতে ভুলেননি এই দুই তারকা ক্রিকেটার।

ম্যাক্সওয়েল খেলেন অপরাজিত ১৮ বলে ২৮ রানের ইনিংস। আর মার্শ খেলেন ৫০ বলে ৭৭ রানের ইনিংস। তার ব্যাট থেকে আসে ৪টি ছক্কা ও ৬টি চারের মার। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ২ উইকেট নেন বোল্ট।

এর আগে, অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ৮৫ রানের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৩ রানের লক্ষ্য দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপার লড়াই শুরু করে তাসমান সাগরতীরের দুই দল।

টসে জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ। ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ ওভারে প্রথম উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। সেই চাপ সামলাতে অধিনায়ক উইলিয়ামসন হাল ধরেন। বোঝেশুনে ব্যাট চালান তিনি।

অজি অধিনায়ক চাপে রাখতে বোলিংয়ে বারবার পরিবর্তন আনেন। ১০ ওভারের মধ্যে ৬ জন বোলার ব্যবহার করেন। সে কৌশল কাজেও লাগে। দশ ওভার শেষে কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় মাত্র ৫৭ রান।

অথচ, সেই ১০ ওভার শেষে অজিরা সংগ্রহ করে ৮২ রান। অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় জশ ১১তম ওভারে স্টার্কের তৃতীয় বলে উইলিয়ামসনের ক্যাচ না ছাড়েন লক্ষ্যটা আরও কম হতে পারত। সহজ ক্যাচ ছেড়ে চারে পরিণত করেন জশ। জীবন পেয়ে উইলিয়ামসনও জ¦লে উঠেন। পরের দুই বলে আরও ২টি চার হাঁকান তিনি।

এরপর ১৩তম ওভারে ম্যাক্সওয়েলকে পরপর ছক্কা হাঁকিয়ে অধিনায়ক অর্ধশতক পূর্ণ করেন। ৫০ রান সংগ্রহ করতে খেলেন মাত্র ৩২ বল। ফাইনালে সেই রেকর্ড ভাঙেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান মার্শ। ৩১ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি।

কিউই ইনিংসে ১৬তম ওভারে স্টার্কের বলে পরপর চার বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা মেরে দলের রানের গতি এগিয়ে নেন উইলিয়ামসন। ১৮তম ওভারে হ্যাজলউডের বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন উইলিয়ামসন ও ফিলিপ্স। ফিলিপ্স-এর ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ১৮ রান। কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৮৫ রান সংগ্রহ করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন। তার ব্যাট থেকে দশটি চার এবং ৩টি চারের মার দেখে ক্রিকেট ওয়ার্ডকাপ।

নিউজিল্যান্ডের গাপটিল ৩৫ বলে ২৮, মিচেল ৮ বলে ১১, নিশাম ৭ বলে ১৩ ও সেপার্ট ৬ বলে ৮ রান করেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে গতি বোলার হ্যাজলউড ৪ ওভারে ১৬ রান খরচ করে ৩টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া জাম্পা ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ এবং ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের স্বীকৃতি পান ওয়ার্নার। সিরিজে ২৮০ রান এসেছে ওয়ার্নার ব্যাট থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *