সংবিধান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে: আনোয়ার

নিউজ ডেস্কঃ জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুন্ন হয় এমন কোন আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী তৎপরতা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আপোষ করা হবে না। সংবিধান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে বলে রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু বলতে কোন বিভাজন নেই। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে ভিত্তি করে ভারত বর্ষ বিভক্ত হয়েছিলো। এই বিভক্তিকে পুঁজি করে উপমহাদেশে বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হয়। যা মহল বিশেষের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি গতকাল রবিবার পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা সদরে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আফগানিস্তানে ক্ষমতার রাজনীতির পরিবর্তন ঘটার পর উপমহাদেশে এর নানা রূপ প্রভাব পড়েছে। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক বাহিনী প্রত্যাহারের পর এ অঞ্চলে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গন্ডগোল সৃষ্টির পায়তারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর উষ্কানিতে এ ধরণের দাঙ্গা সৃষ্টির ঘটনা অতীতে বিভিন্ন সময় ঘটলেও সেসব রাষ্ট্রে নাগরিক বা অধিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও প্রতিরোধ প্রয়াস পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। সৃষ্টিকর্তার যেমন অসীম ক্ষমতা থাকে তেমনি রাষ্ট্রেরও অনেক অঙ্গ-প্রতঙ্গ থাকায় সাম্প্রদায়িকতার মত অশুভ প্রয়াস এক সময় নিরসন করা সম্ভব হয়।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি যে কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে এর নেপথ্যেও গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। অতীতে আমাদের দেশে অনুরূপ দু’একটি ঘটনা যখন ঘটেছিল, তখন আমরা সরকারে থেকে তা কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দিয়েছি। যেখানে গুলিবর্ষণের মত কঠিন সিদ্ধান্ত দিতেও আমরা দ্বিধা করিনি। দেশের উন্নয়নের প্রয়োজনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মত যেকোন আত্মঘাতি কার্যকলাপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, সকলকে বিরত থাকতে হবে। আগে দেখা যেত ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আত্মকোন্দল, যা অনেক সময় সংঘর্ষেও রূপ নিত। এখন দলে দলে সংঘর্ষ হ্রাস পেলেও দলীয় অভ্যান্তরীণ কোন্দল বা অন্তর্দ্বন্দ্বের ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। আমরা এ অঞ্চলে উন্নয়নের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ আছি। আমি যতদিন বেঁচে আছি আল্লাহ আমাকে যতদিন বাঁচিয়ে রাখবেন, ততদিন এ এলাকায় মানুষের স্বার্থ বিঘ্নকারী কোন ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না। ভান্ডারিয়ায় যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চমৎকার পরিবেশ বিরাজমান তা অক্ষুন্ন রাখতে হবে। ইসলামসহ সকল ধর্মেই ফ্যাসাদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঝগড়া না করে প্রয়োজনে নিশ্চুপ থাকতে হবে। আমরা কখনও নির্মূল বা উৎখাতের রাজনীতির কথা বলি নাই। নির্মূল করার ক্ষমতা শুধু সৃষ্টিকর্তার রয়েছে, মানুষের না। আল্লাহ ইচ্ছায় আমরা রাজনীতিতে এসেছি, তিনি যতদিন চাইবেন ততদিন মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবো। কাজের প্রশ্নে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এলাকায় মানুষের মধ্যে ঐক্য থাকলে শান্তি থাকে, তথা সেখানে উন্নয়ন কাজও অব্যাহত থাকে।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নিজের জীবনে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন-মোকাবিলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০০৭ সালে কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিলো। বহু রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত এ ধরণের যে মামলা হয়েছিলো, তা অনেকের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমার মধ্যদিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়। তার বিরুদ্ধের মামলাগুলো তিনি উচ্চ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেছেন। যাতে কেউ না বলতে পারে আইনের পথে নয়, রাজনৈতিক সুবিধা আমি নিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, মানুষের সঙ্গে সদাচরণ বা ভালো ব্যবহার করা উচিত। গত ৩৮ বছরে আমরা এলাকার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছি। এ সময় ভান্ডারিয়াসহ এ এলাকায় মানুষ পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বাদানুবাদ, কলহ-কাইজ্জা মুক্ত থেকে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের প্রচেষ্টায় ব্যাপৃত থেকেছে। এই শান্তির ধারা, উন্নয়ন প্রচেষ্টা তথা সহাবস্থানের পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখতে হবে।

ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় এলাকার আলেম-ওলামা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সীমা রানী ধরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ, ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম, উপজেলা জাতীয় পাটি-জেপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর কাউন্সিলর গোলাম সরওয়ার জোমাদ্দার, জেপির উপজেলা সদস্য সচিব ও ধাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফায়জুর রশীদ খসরু। এসময় মঞ্চে ছিলেন ভান্ডারিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মৃধা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা আক্তার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুমুর রহমান বিশ্বাস, গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান চৌধুরী, ভিটাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান খান এনামুল করিম পান্না, ইকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, তেলিখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দিন, উপজেলা জেপি নেতা ইউসুফ আলী আকন, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রশীদ তারিক প্রমুখ।

কাউখালী সংবাদদাতা রবিউল হাসান রবীন জানান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি গতকাল রবিবার রাতে কাউখালী উপজেলার জোলাগাতি মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত চার তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। এখানে অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ, কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া মনু, ইউএনও মোছা. খালেদা খাতুন রেখা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৃদুল আহমেদ সুমন, শিয়ালকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান সিকদার মো. দেলোয়ার হোসেন, জেপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হুমায়ুন কবির তালুকদার রাজু, উপজেলা জেপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নসু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান তালুকদার পল্টন, আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সুনীল কুন্ড, জেপির ইউনিয়ন সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, জেপির উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল মাহফুজ পায়েল প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *