ড্রপ আউট হওয়া পল মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা

আইটি ডেস্কঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ড্রপ আউট হওয়া একটা ছেলে মাত করল বিশ্বকে। প্রযুক্তি জগতে এলো আমূল-পরিবর্তন। বদলে গেল মানুষের জীবনযাপনের ধরন। বিংশ শতকের শেষদিকে যে জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় এত সব ঘটে গেল তিনি আর কেউ নন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেন। আজকের আয়োজনে এ প্রযুক্তি মহারথির কথা লিখেছেন- তানভীর তানিম

জন্ম

পল অ্যালেনের পুরো নাম পল গার্ডনার অ্যালেন। তবে পল অ্যালেন নামেই তিনি অধিক পরিচিত। অ্যালেন ১৯৫৩ সালের ২১ জানুয়ারিতে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে জন্মগ্রহণ করেন।

পরিচয়

প্রকৃতপক্ষে পল অ্যালেন ছিলেন আমেরিকান উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী। তিনি বিল গেটসের সঙ্গে মিলে মাইক্রোসফট করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে তিনি সর্বাধিক পরিচিত। এ ছাড়া পিসির সফটওয়্যার সিস্টেম ও অ্যাপ্লিকেশন উদ্ভাবনে তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

বিল গেটসের সান্নিধ্য

পল অ্যালেন ওয়াশিংটন উপশহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি বেসরকারি স্কুল, লেকসাইডে পড়াশোনা করেন। সেখানেই বিল গেটসের সঙ্গে তার প্রথম দেখা। এরপর দু’জনের সম্পর্ক মোড় নেয় বন্ধুত্বে। তারা দু’জনেই কম্পিউটারের নির্দিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আগ্রহী ছিলেন।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

অ্যালেন ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা চালিয়ে যান। তবে ১৯৭৪ সালে তিনি ড্রপ আউট হন। এর দু’বছর পর, বস্টনের আমেরিকান অ্যাডভান্স-টেকনোলজি কোম্পানি হানিওয়েল ইনকরপোরেটেড (পরে নামকরণ করা হয় হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনাল ইনকরপোরেটেড)-এ কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসাবে যোগ দেন। অন্যদিকে গেটস তখন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিলেন। পরবর্তী সময়ে অ্যালেন এবং গেটস আবার একত্রিত হন এবং বেসিক (BASIC)-এর মাধ্যমে প্রথম মাইক্রো কম্পিউটারের সফটওয়্যার তৈরি করেন। বেসিক মূলত বড় ধরনের কম্পিউটারে ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা। যা তখন মাইক্রো কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়।

মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা

শুরুতে পল অ্যালেন এবং বিল গেটস মাইক্রো-সফট নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন। এটিই পরে অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে মাইক্রোসফট করপোরেশন নামে আত্মপ্রকাশ করে।

মাইক্রোসফট থেকে অবসর

ক্যারিয়ারের শেষদিকে পল অ্যালেন মাইক্রোসফটের প্রধান প্রযুক্তিবিদ হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৮৩ সালে হজকিন রোগে আক্রান্ত হলে তিনি কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করেন। তবে তখনো তিনি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।

পল অ্যালেনের কর্মযজ্ঞ

অ্যালেনের উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অ্যালেন ইনস্টিটিউট ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, যা তিনি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া তিনি গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানে জড়িত ছিলেন। তিনি এমন সব অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন যার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল।

মৃত্যু

২০১৮-এর ১৫ অক্টোবর এ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

স্মৃতিচারণ

পলের মৃত্যুকে অপূরণীয় ক্ষতি আখ্যা দিয়ে বিল গেটস সে সময় বলেছিলেন, পলকে ছাড়া কম্পিউটার জগতে এত বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হতো না। অন্যদিকে তার সহকর্মীরা এক বিবৃতিতে জানায়, এ মৃত্যু প্রযুক্তি জগৎসহ আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতি। প্রযুক্তি জগতে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তার জন্য আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *