টন্টনের মাঠ নিয়ে চিন্তায় বাংলাদেশের স্পিনাররা

রানপ্রসবা উইকেট আর পাওয়ার হিটার-বান্ধব টন্টনের মাঠে কঠিন পরীক্ষা বাংলাদেশের স্পিনারদের।

 

ব্রিস্টলের বৃষ্টি কালও পিছু ছাড়েনি বাংলাদেশ দলকে। টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য ব্রিস্টলে থাকতেই ছুটি ঘোষণা করেছে-বৃহস্পতিবার দলের কোনো কার্যক্রম নেই। এ অবসরে ক্রিকেটাররা কেউ ঘরে বসে সময় কাটিয়েছেন, কেউ একটু ঘুরতে বেরিয়েছেন। ঘুরতে বেরিয়েও কি মজা আছে? ছুটিটা যে ইচ্ছেমতো কাজে লাগাবেন, সে উপায়ই-বা কই? এবার ইংল্যান্ডের গ্রীষ্ম এতটা বর্ষণমুখর হয়ে উঠবে, কে ভেবেছিল!

 

পরশু দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ বেশ বিরক্তি নিয়ে বলছিলেন, ‘ইংল্যান্ডের গত সামারেও কী রোদ! রোদের তাপে ঘাস নাকি হলুদ হয়ে গিয়েছিল! আর এবার আবহাওয়াটা এত খারাপ!’ অন্য সময় হলে ইংল্যান্ডের সামার নিয়ে বাংলাদেশের ভাবতে বয়েই গিয়েছিল! কিন্তু এবার যে এ ‘খারাপ আবহাওয়া’টাই মাথাব্যথার কারণ। বৃষ্টি কারও উপকার করছে, কারও ক্ষতি। সেই ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় বাংলাদেশ আছে সবার ওপরে। ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করার পর টন্টনে এসেও বৃষ্টির চক্রে আটকা। যদিও ম্যাচটার আগে পাওয়া যাচ্ছে আরও চার দিন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, সোমবার ম্যাচের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। বৃষ্টিবাধা না থাকলেও চিন্তার তো শেষ নেই। টন্টনে এসে নতুন আলোচনা-মাঠটা অনেক ছোট! উইকেটও ভীষণ ব্যাটিংবান্ধব-৮ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কুপারস অ্যাসোসিয়েটস কাউন্টি গ্রাউন্ডে পাওয়ার হিটিংয়ে পারদর্শী ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা তো বাংলাদেশের বোলারদের পিটিয়ে ছাতু করবেন অনায়াসে!

 

টন্টনে আপনার চ্যালেঞ্জটাই সবচেয়ে বেশি-কাল সুনীল যোশিকে যখন কথাটা বলা হলো, হোটেল হলিডে ইনের বৃষ্টিধোয়া সবুজ লনে তাকিয়ে একটু যেন আনমনা হয়ে গেলেন। তবে উত্তরটা তাঁর কাছে তৈরিই ছিল, ‘আরে চ্যালেঞ্জ ছাড়া জীবন হয় নাকি! সবখানেই চ্যালেঞ্জ থাকবে, সেটি মেনে নিয়েই এগোতে হবে।’

 

স্পিন কোচ তো আর বোলিং করে দেবেন না। তবে স্পিনাররা যখন খারাপ করেন, কাঠগড়ায় তাঁকেই আগে উঠতে হবে। ‘এই কোচ লইয়া আমরা কী করিব’ ধরনের কথাও শুনতে হবে। রানপ্রসবা উইকেট আর পাওয়ার হিটারবান্ধব টন্টনের সমারসেট কাউন্টি দলের হোম ভেন্যুতেও কঠিন পরীক্ষা বাংলাদেশের স্পিনারদের। অবশ্য এ মাঠেই হওয়া সবশেষ অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের ম্যাচে দুই দলই স্পিনার এনেছে অনেকটা বাধ্য হয়ে, পঞ্চম বোলারের সংকটে। এমনকি নিউজিল্যান্ড-আফগানিস্তান ম্যাচেও স্পিনাররা ছিলেন ‘উপেক্ষিত’। আফগানরা সেই ম্যাচে তাদের সেরা বোলার রশিদ খানকে বোলিংয়েই আনেনি। যে মাঠে বাংলাদেশ কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার ছাড়া মাঠে নামবে-এটি বলার অবশ্য সুযোগ নেই। ফিট সাকিব আল হাসানকে ছাড়া বাংলাদেশ খেলবে নাকি! তিনি একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ স্পিনার, একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান-এমনিই কি অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ের সিংহাসনটা তাঁর অধিকারে!

 

ব্যাটসম্যান সাকিব দুর্দান্ত ছন্দ আছেন। এখন বোলিংয়েও দুর্দান্ত সাকিবকে দেখার অপেক্ষায়। এটা ঠিক, ইংলিশ কন্ডিশন কিংবা আইসিসির শর্ত মেনে বানানো হাই স্কোরিং উইকেটে ফিঙ্গার স্পিনারদের ভালো করা কঠিন। কিন্তু অতীতে কঠিন কন্ডিশনে ভালো করে দেখিয়েছেন বলেই তো তিনি সাকিব আল হাসান-নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। এমনকি এই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুটি ম্যাচে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। ইংল্যান্ডের ম্যাচে বোলিংয়ে প্রত্যাশানুযায়ী ভালো করতে পারেননি। যোশি অবশ্য বলছেন, ‘আমরা সবাই চাই সাকিব যেন সেরাটা (বোলিংয়ে) জমিয়ে রাখে সঠিক ম্যাচের জন্য।’

 

পয়েন্ট টেবিলের হিসাব ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়া বাংলাদেশের কাছে এখন প্রতিটিই ‘বাঁচা-মরা’র লড়াই। সাকিব তাঁর সেরাটা দিচ্ছেন, সামনেও এটি ধরে রাখবেন-এই আশা করাই যায়। কিন্তু বাকি স্পিনারদের কী ভূমিকা থাকবে? টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আগে প্রশ্নটাই অবান্তর মনে হবে যখন জানবেন, ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টিম ম্যানেজমেন্ট সাকিবের বাইরে আর কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনারই খেলাতে চায় না-এ মাঠে যে স্পিনাররা ব্রাত্য। অথচ কালও যোশি বলছিলেন, বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ের মূল শক্তিই স্পিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *