‘ভিএআর’ দীর্ঘজীবী হোক!

কোপা আমেরিকায় ভেনেজুয়েলার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে স্বাগতিক ব্রাজিল। ম্যাচে ব্রাজিলের তিনটি গোল ভিএআরে বাতিল হয়েছে।

‘“ভিএআর”’ দীর্ঘজীবী হোক—ব্রাজিলের বিপক্ষে কোপা আমেরিকার ম্যাচ শেষে ভেনেজুয়েলার সমর্থকেরা এমন স্লোগানই তুললেন। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআরের এমন আশীর্বাদ আন্তর্জাতিক ফুটবলে এর আগে আর কোন দল পেয়েছিল। প্রতিপক্ষ যদি ব্রাজিলের মতো দল হয়, আর সে দলের তিনটি গোল ভিএআর প্রযুক্তির কল্যাণে বাতিল হয়ে যায়, তাহলে যেকোনো দলের সমর্থকেরাই এমন স্লোগান তুলবেন, গান বানিয়ে গাইবেন কিংবা ব্যাপারটি নিয়ে দুছত্র কাব্যগাথাও রচনা করে ফেলবেন, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। রবার্তো ফিরমিনো, ফিলিপে কুতিনহো আর গ্যাব্রিয়েল জেসুসের তিনটি গোল ভিএআরের কল্যাণে বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে টুর্নামেন্টের স্বাগতিক ব্রাজিলকে।

 

ব্রাজিলের সমর্থকদের আবার ভিএআর-দুর্ভাগ্যের গান গেয়ে ভোলানো যাচ্ছে না। গোটা ম্যাচে ব্রাজিলের পারফরম্যান্স ছিল আশাপ্রদ মানের নিচে। সে সঙ্গে গোল মিসের মহড়া তো তারা দিয়েছেই। ঘরের মাঠে লাতিন অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্বের এই প্রতিযোগিতায় আশাবাদী হওয়ার মতো পারফরম্যান্স কাল স্বাগতিকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি, এটা বলতে খুব বড় ফুটবল বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না। তবে ব্রাজিলের এমন পারফরম্যান্সের জন্য ভেনেজুয়েলার অতি-রক্ষণাত্মক কৌশলও কম দায়ী নয়।

 

ডেভিড নেরেস, ফিরমিনো, রিচার্লিসন, জেসুস, ফিলিপে লুইস—মিস করেছেন সবাই। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে সালভাদরের অ্যারেনা ফন্তে নোভার ৩৯ হাজার ‘অতৃপ্ত’ সমর্থক জোরেশোরে ‘দুয়ো’ দিয়েই নিজেদের বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

 

ম্যাচের ৩৮ মিনিটে ভেনেজুয়েলার জালে বল পাঠিয়েছিলেন ফিরমিনো। কিন্তু গোল করার আগে ভিয়েনুয়েভাকে ফাউল করে বসেন তিনি। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআরের কল্যাণে ফিরমিনো ভুলটি ধরা পড়ে যায়। বাতিল হয় সে গোলটি।

 

একটি গোল বাতিল হতেই পারে। কিন্তু ব্রাজিলীয় সমর্থকেরা তখনো ভাবতেও পারেননি তাদের সামনে আর কী অপেক্ষা করে আছে। প্রথমার্ধে রিচার্লিসন গোটা সময়টাতেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে কোচ তিতে তাঁর বদলে মাঠে নামান জেসুসকে।

 

৫৭ মিনিটে সেই জেসুসই ভেনেজুয়েলার জাল বল পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য এবারও সহায় হয়নি। ডি বক্সের বাইরে থেকে জেসুসের নেওয়া শট ভিয়ানুভার শরীরে লেগে চলে আসে ফিরমিনোর কাছে। ফিরমিনো জেসুসকে দিলে সেখান থেকে গোল করেন ম্যানচেস্টার সিটির তারকা। কিন্তু ভিএআরে দেখা যায় জেসুসকে বল ঠেলার আগে অফসাইডে ছিলেন ফিরমিনো। আবারও প্রযুক্তির কল্যাণে বাতিল হয় ব্রাজিলের গোল।

 

তৃতীয়বারের মতো ভিএআরের জন্য ব্রাজিলের গোল বাতিল হয় ম্যাচের একেবারে শেষের দিকে। বদলি নামা এভারটনের পাস থেকে গোল করেছিলেন কুতিনহো। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেল ফিরমিনো আবারও অফসাইড।

ভিএআরের ভেলকিতে ম্যাচ বাঁচিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বাসই প্রকাশ করেছেন ভেনেজুয়েলা কোচ রাফায়েল দুদামেল, ‘ভিএআর দীর্ঘজীবী হোক। আসলে ব্রাজিল এমন একটি দল, যে দলে দুর্দান্ত সব প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। আমরা এ দলের বিপক্ষে আজ মোটামুটি ভালোই খেলেছি। ব্রাজিল আমাদের পরীক্ষায় ফেলেছে। কিন্তু আমার দলের খেলোয়াড়েরা জানে, তাদের কী করা উচিত, আর কোন সময় কোন ধরনের কৌশল কাজে লাগানো উচিত।’

 

ব্রাজিল কোচ তিতে অবশ্য ভিএআর নিয়ে কোনো ‘তেতো’ মন্তব্য করেননি। তাঁর মতে, ভিএআরের প্রতিটি সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক, ‘আমার কোনো অভিযোগ নেই। ভিএআর প্রযুক্তি সঠিকভাবেই ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটি গোল বাতিলেরই কারণ আছে। ভিএআর সেগুলো ঠিকভাবেই ধরতে পেরেছে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *