মিলছে না নারীদের ন্যায্য মজুরি

নিউজ ডেস্কঃ মাটিকাটার কাজ করছেন এক নারী। ছবি: ইত্তেফাক

প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারিভাবে জাঁকজমকপূর্ণভাবে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশে নারী-নির্যাতন বন্ধ, নারীর অধিকার ও ন্যায্য মজুরিসহ নানা বিষয়ে সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু এতো আয়োজন করা হলেও শহরের তুলনায় মফস্বলের বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। গ্রামীন নারীরা যেমন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত, তেমনি পাচ্ছে না ন্যায্য মজুরি।

আজও সমাজের সব স্তরে নারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। রয়েছে মজুরি বৈষম্য ও নারী নির্যাতনে পাচ্ছে না ন্যায় বিচার। এভাবে নারী শ্রমিকরা যুগের পর যুগ নির্যাতন সহ্য করে জীবন-জীবিকার তাগিতে পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে-ঘাটে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছে। কিন্তু মিলছে না সমান মজুরি।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নারী শ্রমিকেরা অনেকইে জানেন না নারী দিবস কি? দু’মুঠো খাবারের জন্য মাঠে-ঘাটে ঘাম ঝরানো কঠোর পরিশ্রম নারীদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

নারী দিবস

প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দলবেঁধে নারীরা কাজে যোগ দিচ্ছেন। নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী এখনো নির্যাতন শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। সেইসঙ্গে এখনো রয়েছে মজুরি বৈষম্য।

তারা দাবি করেন, মাঠে-ঘাটে পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করলেও নারী সমান মজুরি থেকে বিরত। সুরক্ষা ও ন্যায্য অধিকার (মজুরি) বিষয়ে প্রতিবাদ করেও তারা কোনোভাবেই আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না বলে একাধিক নারী শ্রমিক ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা জীবন-জীবিকার তাগিতে কম মূল্যে মাঠে-ঘাটে কাজ করে যাচ্ছেন। সেইসঙ্গে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন। বিশেষত গ্রামীণ নারী শ্রমিকেরা বোরো ও আমন ফসলের পরিচর্যা, ধানের চারা রোপণ, ধান ও মাটিকাটা, ইটভাটায় ও রাজমিস্ত্রির কাজ করে থাকেন। সাধারণত সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে একদিনের কাজ ধরা হয়। স্থানীয়ভাবে একদিনে পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এ হিসাবে একজন নারী শ্রমিকেরও ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার পাওয়ার কথা, কিন্তু তারা সমান কাজ করে মজুরি পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

9696966মাঠে কাজ করছেন নারীরা। 

উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্বফুলমতি ফজিলা বেগম (৫০) ও আঞ্জু বেগম (৪২) জানান, নারী দিবস কি আমরা জানি না। আর নারী দিবস পালন করলেও আমাদের লাভ নেই। আমরা জানি কাজ করলে পেটে ভাত, কাজ না করলে থাকতে হবে উপবাস। তাই জীবন জীবিকার তাগিদে সকাল ৯টা বাজলেই পুরুষদের সঙ্গে কাজ করতে যাই। কাজ থেকে ফিরে আসি একই সময়ে, কিন্তু পুরুষেরা দৈনিক মজুরি পান ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আমরা পাই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সমান টাকা চাইলে কাজে না নেওয়ার হুমকি দেয় মালিকপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে কম মূল্যে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি নারীরা যেন সমান মজুরি পায়।

শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুকশিমুলবাড়ী এলাকার নারী শ্রমিক শাহিদা বেগম (৫২) ও আছফুল বেগম (৪৫) অনেকটা ক্ষোভ জানিয়ে জানান, মাঠে সব ধরনের কাজ করি। পুরুষরা মজুরি বেশি পায়। আমরা নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি সময় ধরে কাজ করি। কাজের মধ্যে পুরুষেরা বিশ্রামের বিরতি নিলেও নারী শ্রমিকরা তেমন বিশ্রাম নেয় না। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকরা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি পেলে আমরা পাই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

Untitled-1পুরুষের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন নারীরা। 

এ বিষয়ে উন্নয়নকর্মী ঝরনা বেগম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মজুরি বৈষম্য নেই। সরকার চায় নারী-পুরুষ সমান মজুরি পাক। তবে মালিকপক্ষের কারণে মজুরি বৈষম্য তৈরি হয়েছে। মালিকপক্ষ পুরুষকে একভাবে মজুরি দিচ্ছে এবং নারীদেরকে আরেকভাবে মজুরি দিচ্ছে। আর নারীরাও তাদের অধিকার কি, সেটা জানেন না। একজন উন্নয়ন কর্মী হিসাবে বলবো এনজিও, স্থানীয় সরকার যদি এটি মনিটরিং করে তাহলে আশা করি মজুরি বৈষম্য থাকবে না।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. সোহেলী পারভীন জানান, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমি একজন নারী হিসেবে নারী শ্রমিকরা যেন সমান মজুরি পান সেই দাবি জানাচ্ছি। সরকার নারী নির্যাতন বন্ধসহ গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। নারীরা যেভাবে পুরুষদের সঙ্গে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছে, তারা এ কাজের জন্য যাতে সঠিক মূল্য পান, সেজন্য সবার সচেতন হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *